কলমের খোঁচা

সব সময় শুধু বকুনিতে হয়না কাজ করতে হয় ———————————— —সঞ্জীব বর্মণ


চিন্তন নিউজ:২৪শে মে:-দল, সরকার, কর্পোরেশন, প্রশাসন, সিইএসসি এবার এসব ছাড়ুনতো মশাই, এসব বলে আর মোদ্দা কথাটাকে, আসল সত্যি টাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ভয়ে হোক, দ্বিধায় হোক, কিছু ব্যক্তিগত প্রাপ্তি যোগের আশায় হোক, লুঠে খাওয়ার ধারাবাহিকতা বা চেটে খাওয়ার লোভী সুপ্ত বাসনায় হোক, চালু করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রতিদিন ময়দানে থেকে হাতে কলমে কাজ করে মাননীয়া ও তারঁ অপদার্থ সরকারের একটা একটা করে ভুল, ত্রুটি, যথেচ্ছ ভন্ডামি, মিথ্যাচার, যুক্তি-তথ্য সহ ধরিয়ে দেওয়া, স্পষ্ট দেখিয়ে দেওয়া সত্যেও যারা মনে করেছিলেন এসব বামপন্থী দের কুটকাঁচালি বা যেভাবেই হোক ভেসে থাকার কৌশল “আমফান” নিশ্চয় তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল প্রচার প্রিয়, উদ্ধত, স্বৈরাচারীনী “দিদি” মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কতটা অদক্ষ ও অযোগ্য। শুধু কলকাতা, হ্যাঁ রাজ্যের রাজধানী শহর, রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্রও বটে— মহানগরী কলকাতা “অবাধ্য আগন্তুক” আমফানের সুতীব্র তান্ডবে চারদিন ধরে গভীর অন্ধকারে ছেয়ে আছে, সম্পূর্ণ জলহীন একটু জলের জন্যে চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে আর তার রাস্তা দখল করে ইলৈকট্রিক তার, পোষ্ট জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে হাজার হাজার গাছ। শুধু নেই সরকার, প্রশাসন, কর্পৌরেশন। সাধারণ কর্মচারীদের ক্ষোভের সামনে ঠেলে দিয়ে ফোনটোন সব বন্ধ করে উধাত্ত সিইএসসি’র মাতব্বর বড় বড় কর্তাব্যক্তিরাও। প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য ইতিউতি যাওবা ঘুরছে সিইএসসির গাড়ী তাও পাড়া থেকে ওয়ার্ড, ওয়ার্ড থেকে বরো তৃণমূলের দাদাদের কব্জায়। শুধু বড় বড় কয়েকটা রাস্তায় নয় দাদাভাই পাড়ায়-পাড়ায়, অলিতে-গলিতে অসহায় ক্ষুব্ধ মানুষ বিদ্যুতের জন্যে, জলের জন্যে বিক্ষোভ করেছে অপদার্থ সরকারকে নিশানা করে।সেটা শোনার জন্যেও বেশিরভাগ জায়গায় সংবাদমাধ্যম ছাড়া অন্য আর কারুর দেখা পাওয়া যায়নি, সমাধানতো দৃরস্থান। কোথাও পুলিশ যদি বা গেছে তাও সেই তৃণমূলী কায়দায় মস্তানী, হুমকি নয়তো অসহায় আত্মসমর্পণ। এই নির্লিপ্ততা, নিষ্ঠুর উদাসীনতা ক্ষোভকে, রাগকে আরো দ্রুততালে বাড়িয়েছে, ছড়িয়েছে। ধৈর্য্যচ্যুত ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ ২১-২২ মে এই দু’দিন পাটুলি মোড়, কেকে দাস কলেজ থেকে ৪৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, বরোদা এ্যাভিনিউ, সার্দান এ্যাভিনিউ, কেন্দুয়া মেন রোড, গড়িয়া পার্ক, মিলন পার্ক হয়ে গড়িয়া মোড় পর্যন্ত শুধু এইটুকু মাত্র জায়গায় মুহূর্মুহু পথ অবরোধ করেছেন, বিক্ষোভ দেখিয়েছেন যন্ত্রণার কথা শুনিয়েছেন। শুধু শুনে নয় দুদিনই এই স্বতস্ফূর্ত অবরোধে একজন অংশগ্রহণকারী প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে বলছি। তাহলে এই নরক যন্ত্রণাটা সামগ্রিক কলকাতা শহরে কি হয়েছে বুঝুন, বুঝুন উত্তর দক্ষিণ দুই চব্বিশ পরগণা, পূর্বমেদিনীপুর , মুর্শিদাবাদ সহ বাকি বিধ্বস্ত জেলা গুলির সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত এলাকার পর এলাকার সহায় সম্বলহীন মানুষ কি করুণ পরিস্তিতির মধ্যে আছেন থাকছেন! লাঠিচার্জ করে,সাংবাদিক শাসিয়ে এর কটাকে ঠেকাবেন হীরক রাজের রাণী! আসলে চাটুকার বশংবদ কয়েকটা ঢাকঢোল, কাঁসর যাই বলুক সাধারণ মানুষের কাছে ইতিমধ্যেই যুগপৎ রাজনৈতিক অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকেই সততা(!!!)’র প্রশ্নে ডাহা ফেল মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে মারণ করোনা তারপর সর্বগ্রাসী দূরন্ত আমফান মোকাবিলায় বেশ আটঁসাটো ভাবেই, বুঝবার ক্ষেত্রে সামান্য একজনেরও কোথাও বিন্দুমাত্র অসুবিধার সুযোগ না রেখেই প্রমাণ করলেন অদক্ষ, অযোগ্য রাণী ভন্ড, রাণী খল। আসলে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জানেনইনা কাকে বলে বিপর্যয়, বিপর্যয়ে মানুষের দূর্দশা কি হয়, তো সেই তিনি কিভাবে ঠিক করবেন আগাম পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণের ভিত্তিতে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সঠিক পরিকল্পনা? নাটক প্রিয় তিনি বুঝবেনইবা কি করে যে,সব সময় বুকনি দিয়ে সবকিছু হয় না, কাজ করতে হয়। ৭৮’ র বন্যা, ২০০০ হাজারের বন্যা, আয়লা— কি খরা, কি বন্যা, কি মহামারী বা ভূমিকম্প রাজনৈতিক সাংগঠনিক বা প্রশাসনিক দক্ষতা সব রকম ভাবেই এইসব বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা যাদের আছে, যারা করে দেখিয়ে দিয়েছেন, বাবু সুমনদের বা বাজারী আনন্দের গণনার মধ্যে না থেকেও এখনও এই করোনা ছোবল থেকে মুক্ত করে এই রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের, সরকারী অবহেলার চূড়ান্ত স্বীকার পরিযায়ী শ্রমিকদের হাত ধরতে দায় ও দরদকে একত্রিভূত করেছেন যারা সেই অভিজ্ঞ বামপন্থী দের পরামর্শ একবারের জন্যেও নিলেন না কেন? আয়লার সময় প্রতিটি মানুষের পাশে প্রতিটি মুহূর্ত লেপ্টে লেগে থাকা, সুন্দরবনকে হাতের তালুর মতো চেনা আর সন্তানের মতো ভালোবাসা কান্তি গাঙ্গুলি তো মুখ্যমন্ত্রীকে সব রকম সাহায্য করার অঙ্গিকার করে আন্তরিক ভাবেই চিঠি দিয়েছিলেন, আগাম প্রস্তূতির কিছ প্রাথমিক পরামর্শও দিয়েছিলেন। গুরুত্ব দেওয়াতো দূরের কথা তাঁর সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার পর্যন্ত করেননি কেন?সেই সময় বামপন্থী ফ্রন্ট সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে শুধুমাত্র অশ্লীল রাজনৈতিক কারনে অকারন বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন বলে ? বিধ্বংসী আয়লায় দিল্লির সাহায্য আটকানোর সবরকম নীচ, হীন ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে ? লজ্জায় ? আছে আপনার?
বেশি কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সরকারী অথবা অসরকারী যেখানেই থাকুন না কেন বামপন্থী দের যা কাজ, রাজনৈতিক মতাদর্শ সমর্পিত যে গুরুভার তা যেকোনা মূল্যে বামপন্থীদের করে যেতে হবে, এক মুহূর্তের জন্যেও তাতে ব্যত্যয় ঘটবে না, ঘটতে দেওয়া চলবে না এ সম্পর্কে সময়োপযোগী সচেতনতার পরিচয় বামপন্থীরা দিয়ে চলেছেন, দিয়ে যেতে হবে। মতাদর্শকে তার বাস্তবের মাটিতে প্রয়োগের নতুন নতুন রাজনৈতিক সাংগঠনিক কৌশল আয়ত্ত করেই সব অংশের বামপন্থীদের এই কাজ করে যেতে হবে। শাসক দলের চরম অপদার্থতার কারনে নেই রাজ্যের বাসিন্দা আমরা কিন্তু ক্রমশ এক নৈরাজ্যের দিকে চলেছি, তার লক্ষণগুলি কিন্তু আর অস্পষ্ট নয়। এই সময়ে বামপথ ছাড়া ভরসার জায়গা যে নেই মানুষের চেতনায় তারও স্পষ্ট ছবি কিন্তু ক্রমশ স্পষ্টতর।
——————


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।