কলমের খোঁচা

ভরসা একমাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশ


দিলীপ গাঙ্গুলি: চিন্তন নিউজ:৯ই এপ্রিল:- সারা পৃথিবী যখন বিশ্বত্রাসী হিটলারের ভয়ে কাঁপছে, নাৎসি জার্মানির বিজয়ী ফৌজ একটার পর একটা দেশ দখল করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। যে ম্যাজিনো লাইন নিয়ে অহঙ্কারের শেষ ছিল না, সেই ম্যাজিনো লাইনে হিটলারের বাহিনীর কাছে চুড়ান্ত নাকাল হয়ে জীবন বাঁচাতে পিঠ দেখিয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী রনক্ষেত্র থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে ।এ এক লজ্জাজনক অধ্যায়, হিটলারের ভয়ে এই ভীরুর মতো পলায়নকে ইংরেজরা বুক ফুলিয়ে নির্লজ্জের মতো বলে “গৌরবময় পশ্চাৎ অপসারণ”।

যে ফ্রান্স প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভার্দুন রনাঙ্গনে জার্মানিকে চুড়ান্ত ভাবে পরাজিত করে গর্ব ভরে পস্তর ফলকের উপর খোদাই করে লিখে দিয়েছিল “এখানে এক স্বাধীন জাতীর কাছে জার্মানীদের গর্ব খর্ব হলো”। সেই ফ্রান্স ২২বছর পর হিটলারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। ১৯৪০সালের ২২ জুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এক সকাল, বাইরে জার্মান বাহিনীর মিলিটারি ব্যান্ড দিকবিদিক কাঁপিয়ে সেই ব্যান্ড তখন সুর তুলেছে “ডয়েচ ল্যান্ড উইবার আলেস্”সকল দেশের সেরা জার্মানি দীর্ঘজীবি হোক।

প্যারিসের পতন ঘটেছে, ইতিহাসের কি নির্মম পরিনতি, হিটলার ঘাড়ধরে চুক্তি পত্রে সই করিয়ে নিচ্ছে, চুক্তি পত্রে ফ্রান্সের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত আছেন সেদিনের সেই ভার্দুন বিজয়ী বীর মার্শাল পেঁতা। এর পরের ইতিহাস সবার জানা, একের পর এক দেশ যখন ফ্যাসিস্ট হিটলারের কাছে আত্মসমর্পণ করছে, তখন বিশ্বমানবতাকে বাঁচাতে দুনিয়া তোলপাড় করে সারা পৃথিবীকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিল সমাজতান্ত্রীক রাশিয়ার লাল ফৌজ, কমিউনিষ্টদের রক্তের বিনিময়ে সেদিন বেঁচেছিল পৃথিবী, বেঁচেছিল বিশ্বমানবতা। আজ যখন সারা পৃথিবীর সামনে বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে করোনার মহামারী, পুঁজিবাদী দেশগুলো একে একে পরাজয় স্বীকার করে হাত তুলে নিচ্ছে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ,প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ১২১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই মারন ভাইরাস। ইতালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুঁজিবাদী দেশগুলো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে, ভেঙে পড়েছে পুঁজিবাদী অর্থ কাঠামো। তখন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পুঁজিবাদ নয়, বিকল্প একমাত্র সমাজতন্ত্রই।

এই মুহূর্তে মারন ভাইরাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে যতটুকু প্রতিরোধ জারি রাখতে পেরেছে তা সমাজতান্ত্রীক দেশগুলোই করেছে। ছোট্ট দেশ কিউবা ৬৫ বছর ধরে যাকে পুঁজিবাদী দেশ গুলো অর্থনৈতিক ভাবে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেই কিউবা ইতালির মৃত্যু মিছিল থামাতে তাদের ৭১ জনের মেডিক্যাল টিমসহ চিকিৎসার সরঞ্জাম পাঠিয়ে। লাল ভিয়েতনাম তাদের লড়াই জারি রেখেছে, সমাজতান্ত্রিক চিন এই মারন ভাইরাসের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করে নিজেদের ছন্দে ফিরেই বিশ্বের মানুষকে বাঁচাতে যাবতীয় ঔষুধ থেকে চিকিৎসায় সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুঁজিবাদী দেশ নিজেরা বাঁচার জন্য সেগুলো লুট করে নিচ্ছে। আসলে এটাই পুঁজিবাদের চরিত্র, এরা নিজের টুকু ছাড়া আর কিছু ভাবে না।

পুঁজিবাদ শেষ কথা নয়, ইতিহাস সাক্ষী আছে হিটলার থেকে করোনা, যখনই মানুষ বিপদে পড়েছে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে কমিউনিষ্টরাই। কমিউনিষ্টরাই ইতিহাস তৈরি করে, কমিউনিষ্টরা বুকের রক্ত দিয়ে ইতিহাস লিখতে জানে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে চির অম্লান থেকে যায়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।