কলমের খোঁচা

ভক্তের ভগবান- ও অভুক্ত দেশবাসী


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:৯ই এপ্রিল:- মারণব্যাধি কোভিড১৯ এ আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। একদিকে মহামারী অন্যদিকে সীমাহীন আর্থিক মন্দায় ধুঁকছে বিশ্ব পুঁজিবাদ। ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম নয়। লকডাউনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রের অসংখ্য শ্রমিক। এক বিরাট অঙ্কের পরিযায়ী শ্রমিক আটকে পড়েছেন ভিনরাজ্যে; সরকারি উদ্যোগে না হোক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বামপন্থী ছাত্র-যুব-মহিলা-শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রত্যক্ষ সহায়তায় দু’বেলা ক্ষুধা নিবৃত্তির রসদ হয়তো মিলছে, কোথাও সেটুকুও ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছেনা। ঘরবন্দি মানুষগুলোর ক্ষুধা নিবারণের নতুন দাওয়াই রামায়ণ সিরিয়াল শুরু হয়েছে এবং নাম সংকীর্তন অর্থাৎ সোজা বাংলায় ঠাকুরের নাম করার কথা বলা হচ্ছে। যা কিছু ঘটছে কৃতকর্মের ফল–নির্ভর কর অদৃষ্টের ওপর–ওপর ওয়ালার ওপর–প্রার্থনা কর তাঁর মর্জির।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে প্রথমবার বললেন ঘণ্টা, থালা বাজিয়ে, হাততালি দিয়ে ডাক্তার নার্সদের উৎসাহ দেওয়ার কথা কিন্তু প্রয়োজনীয় পিপিই,অর্থাৎ পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুপমেন্টস (PPE) পোশাক, মাস্ক, পর্যাপ্ত করোনা টেস্ট এর কিটের কথা বললেন না কোথাও। গোপনে সার্বিয়ায় রপ্তানি হয়ে গেল কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সহায়ক সামগ্ৰী, ইন্দোনেশিয়া বরাত পেল বিশাল অঙ্কের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের।

দ্বিতীয় বার মোমবাতি, প্রদীপ জ্বালিয়ে করোনা তাড়ানোর উপায় বাতলালেন। (সুকৌশলে নিজের দলের ৪০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করলেন।) ভক্তগণ সাড়ম্বরে শঙ্খ, প্রদীপ, তাসা,বাজি বাদ্য সহযোগে কিঞ্চিৎ ভিন্নস্বাদের আস্বাদ নিলেন। এরপর তাঁর মনে হল ত্রাণ তহবিল পুষ্ট করার কথা। এখন তিনি নিদান দিচ্ছেন অতীতের যুদ্ধের উপমা দিয়ে গহনা দান করতে প্রত্যেক গৃহ থেকে।

সংস্কারের বশবর্তী মানুষ বিভিন্ন সময়ে নিজস্বার্থ, উদ্দেশ্য সাধনের পরিবর্তে মন্দিরে ভেট দেন দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য। রাজনীতিবিদ, চিত্রপরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রী, গায়ক, কেউই ব্যতিক্রম নয়। তাঁদের দেয় সম্পদে পরিপূর্ণ কেরালার পদ্মনাভ স্বামী, অন্ধপ্রদেশের তিরুপতি, মীনাক্ষী, সিরিডির সত্যসাঁই, কাশ্মীরের বৈষ্ণোদেবী, মুম্বাইয়ের সিদ্ধিবিনায়ক প্রভৃতি মন্দির। কোটি কোটি টাকা, টন টন সোনায় মন্দিরের ভাঁড়ার যেখানে উপচে পড়ছে সেখানে সাধারণ মানুষের ভাঁড়ারে টান না দিয়ে মন্দির কমিটি বা ট্রাস্টের কাছে আহ্বান জানাতে অসুবিধা কোথায় জনগণের সেবার্থে দান করার জন্য। ভক্তদের কল্পনায় তো ভগবানের সৃষ্টি! ভক্তদের দান ভক্তদের সেবাতেই ব্যয় করা হোক। ভক্ত যেমন ভগবানের ঝুলি পূর্ণ করেন ভগবানেরও তো দায় আছে বিপদে ভক্তদের পাশে দাঁড়ানোর! তাদের জীবন সুরক্ষিত রাখার!

এখন দেখার ভক্তগণ যেভাবে অন্ধ সংস্কারের বশবর্তী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিগত দিনের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন তাঁদের অভিব্যক্তি কী হয়!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।