কলমের খোঁচা

মানুষখেকোরা শিখুন ————————— সঞ্জীব বর্মণ.


চিন্তন নিউজ:১২ই মে“ …ধর্ম যবে শঙ্খরবে করিবে আহ্বান
নীরব হয়ে নম্র হয়ে পণ করিয়ো প্রাণ।
মুক্ত করো ভয়, দুরূহ কাজে নিজেরই দিয়ো কঠিন পরিচয়…”

কিউবা, ভিয়েতনাম থেকে নাহয়, নাই বা শিখলেন, কিন্তু যা,“ দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া / ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া” আত্মপ্রচার সর্বস্বতার ঢক্কানিনাদে সামান্য বিরতি টেনে ‘নীরব হয়ে নম্র হয়ে’ একটু কেরালার কাছ থেকে শিখুন। শিখুন, দুরূহ কাজে কিভাবে নিজের কঠিন পরিচয় দিতে হয়। একটু শিখতে চেষ্টা করুন তাহলেই বুঝবেন কেরালার পথে গণদেবতার মন্দির- মসজিদ-গীর্জায় হৃদয় উজার করে একবারটি এসে দাঁড়ালে, পরম আত্মীয়তার অভিপ্রায়ে দুহাত বাড়ালে এই চলমান অভূতপূর্ব সংকট থেকেও মুক্তির ঠিকানা অধরা নয়। তবে হ্যাঁ, তারজন্যে দেশের প্রধান ‘দাদা’ বা রাজ্যের মুখ্য ‘দিদি’কে “আকাশের মুখ ঢেকেছে বিজ্ঞাপনে” ফাঁপা ব্যক্তি গরিমা প্রচারের এই গর্ববোধকে নিদারূণ লজ্জা বিবেচনা করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সন্দেহাতীত আস্থা প্রদর্শন করতে হবে, প্রকৃত জনহীতার্থে সরকারী অর্থ ও প্রশাসনকে লুঠ ও চাটুকারিতার রাহু মুক্ত করে যুগপৎ নিরপেক্ষ ও দূরদর্শী করে তুলতে হবে, আতঙ্কিত,উদভ্রান্ত মানুষের বিশেষত ‘লকডাউন’-র মাহাত্মে সব হারিয়ে পথবাসী দারিদ্রক্লীষ্ট লক্ষ-কোটি শ্রমশক্তির আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কহীন শুধুমাত্র ক্ষমতার মদমত্ততার অনুসারী কুটিল দুরাভিসন্ধীর বিপ্রতীপে এই মারণ বীজানুর সঙ্গে সমানে পাল্লা দেওয়া যুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ চিকিৎসক, সেবীকা, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী সহ সমগ্র সেনাকূলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ও নির্দেশিত যথাযথ রণসাজে সজ্জিত করার কাজে তাৎক্ষণিক তৎপরতা দেখাতে হবে। বিমান থেকে কোটি কোটি টাকার ফুল ছেটানো বা সব্জিবাজারে নিজহাতে চক দিয়ে বৃত্ত আদিখ্যেতা,দাদা-দিদির এই ন্যূনতম দায়িত্ব পালনে ইতি টানলে চলবে না, দেশ ও রাজ্যকে উদ্ধত সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ সম্পৃক্ত রাজনীতির জঞ্জাল মুক্ত করে মত ও পথের উর্দ্ধে ব্যক্তি ও সমষ্টি মানুষের সক্রিয় সম্মিলিত উদ্যোগকে তরঙ্গায়িত করতে হবে,দাদা-দিদি ও তাদের গায়েন- বায়েন দের একটু কষ্ট করে মনে রাখতে হবে পরিযায়ী শ্রমিক যাঁরা এদেশের শ্রমশক্তির আসল অংশ দেশব্যাপী তাদের সুরক্ষা শিবিরের ৬৯ শতাংশই যে কেরালা রাজ্য সরকারের মর্যাদামন্ডিত আতিথেয়তায় তা দিবসরজনী শুধু হৃদয়হীন ,অপদার্থ, অকেজো বাকসর্বস্বতায় হয়না, হতে পারেনা। তারজন্যে চূড়ান্ত মানবিক মূল্যবোধ সংশ্লেষিত দায়বদ্ধতা থাকতে হয়। লালচে ভোরে রক্তপথের সঙ্গী হওয়ার আকাঙ্খায় ঋজু থাকতে হয়। দুঃসাহসিক অথচ অগ্রণী বিশ্বাসে থিতু থাকতে হয়। বারবার অনিচ্ছা প্রসূত ব্যবহারে ক্লীশে হয়ে গেলেও বলতে হয় ‘দাদা’ এবং ‘দিদি’ যদি সাময়িকভাবেও তাদের স্বীয় পথ ত্যাগ করে এই বৈশিষ্ট গুলিকে তাদের পরিচালনায় দেশ ও রাজ্য সরকারী কর্ম প্রক্রিয়ায় সেঁধিয়ে দিতে পারেন তাহলে একটা ঔরঙ্গাবাদের পাপবিদ্ধ লজ্জার স্খলন আমাদের কোনোদিন নাহলেও আরো একটা ঔরঙ্গাবাদ হয়তো আমাদের দেখতে হবে না,এবেলা ওবেলা মিথ্যার দুঃসহ ব্যাভিচারও বন্ধ হবে, জরুরী অনেক কাজ বাদ দিয়ে রাজভবন-নবান্নর প্রেমপত্র বিনিময়ে অযথা দিনাতিপাত ঘটবে না, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে নির্গত বুলিপটু আশ্বাসবাক্য কে উপহাস করে ক্রমশ ভয় আর নিরাপত্তাহীনতায় অবগুন্ঠিত হবেনা এ দেশ, এ রাজ্য। বিপর্যয় মোকাবিলায় বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ হজম করে নেবেনা বিজ্ঞাপনের পিঁপড়ে। কিন্তু তাতো হবার নয়। দেশের ও রাজ্যের রাজনীতির যাঁরা হাল ধরে আছেন তারা তো ধনীদের সাচ্ছল্যের পরিবর্তে অল্পবিত্ত বা বিত্তহীনদের দিকে বেশী দৃষ্টি দেবেন এই মুচলেকা দিয়ে গদিয়ান হননি বরং “ আমরা সবাই লক্ষ্মী ছেলে তোমরা অতি বিশ্রী / তোমরা খাবে নিমের পাঁচন আমরা খাবো মিশ্রী : এটাই শ্রেণী সম্পর্কের সারাৎসার”।— এই উপলব্ধি গলদ্ধকরণ করেই সিংহাসনে সমাসিন হয়েছেন। অতএব আম্বানী বাদ দিয়ে পরিযায়ী প্রেম তারা দেখাতে যাবেন কোন দুঃখে ? অতএব সময় বিশেষে নানা ছলাকলার দ্বারস্থ যদি হতেও বা হয়, কখনো কখনো মুখোশের আড়ালে যদি ঢাকতেও বা হয় মুখ, “…আমার যারা মিত্র, যাঁরা আমার শ্রেণীভুক্ত, তাদের ভূসম্পত্তি আমি হু-হু করে বাড়িয়ে দেবো, তাঁদের জন্য সোনা-দানা-মিশ্রী- চানার ব্যবস্থা করবো, তাদের দৈনিক- মাসিক- বাৎসরিক উপায় যাতে ক্রমবর্ধমান হয়, সে ব্যাপারে সদাসচেষ্ট থাকবো। অন্য পক্ষে যারা আমার সঙ্গে নেই, আমার শ্রেণীস্বার্থের যারা বিরোধীতা করে, যাদের সুযোগ-সুবিধা না কমলে আমার শ্রেণীভূক্ত লোকদের সূযোগ- সুবিধা বাড়া মূশকিল , রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তাদের প্রতিপদে ল্যাং মারার চেষ্টা করবো, তাদের গুড়ে বালি ঢালবো, তাদের অনিষ্টই শুধু চিন্তা করবো না, সেই অনিষ্ট কিভাবে ঘটানো সম্ভব, তা নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবো”(অশোক মিত্র, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া,সংকটের স্বরূপ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, পৃ ১-২)—এই মৌলিক অনড় অবস্থান থেকে দাদা দিদির স্খলন ? নৈব নৈব চ। সুতরাং কেরালা থেকে এঁরা শিখিবেন এ আশা মিথ্যা কুহোকিনী। তাহলে কি আর করা। এঁরা যখন শিখবেন না, মানুষখেকোর শিরোপাকে শীরধার্য করেও রাষ্ট্রীয় অপদার্থতায় অবিচল থাকবেন তখন এদের শেখাতে হবে। আগামী ১৪ ই মে এমনই একটা দিন। সবক শেখানোর দিন। পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে রাজ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হবে আগামী ১৪ ই মে। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র এই কর্মসূচী সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “ শ্রমিকদের চাপে কর্ণাটকের সরকার রেল মন্ত্রককে অনুরোধ করতে বাধ্য হয়েছে পরিযায়ীদের ঘরে ফেরানোর জন্য ট্রেন চালাতে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য শুক্রবার থেকে ৭ দিন ২ টো করে ট্রেন প্রস্তুত থাকলেও পরিযায়ীদের নিয়ে আসার জন্য পশ্চিমবঙ্গের সরকার এখনও কেন সম্মতি দেয়নি! মুখ্যমন্ত্রীর জবাব চাই। এরই সঙ্গে ’ঘরের ছেলে ঘরে ফেরাও’, শ্লোগান তুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল হবেন রাজ্যের শ্রমিক কৃষক ক্ষেতমজুর, ছাত্র, যুব, মহিলারা। আগামী ১৪ ই মে রাজ্যের সর্বত্র ওই দাবীতে বিক্ষোভ দেখাবে সিআইটিইউ। ” ( গণশক্তি ৯ মে ২০২০)। সুতরাং অত্যন্ত সময়োপযোগী এই কর্মসূচীকে সফল করে তুলতেই নতুন পরিস্থিতিতে, নতুন ফর্মে।

—————————


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।