রাজ্য

১০টি লাভজনক রূটের বেসরকারিকরণ করতে চলেছে এন বি এস টি সি।


জয়ন্ত সাহা-মাথাভাঙ্গা: চিন্তন নিউজ:১৬ ই মে:–কেন্দ্রের মত বেসরকারিকরণের পথে রাজ্যও। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমকে পুরোপুরি বেসরকারিকরনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে রাজ্য পরিবহন দপ্তর।

বহরমপুর ডিভিশনের ১০ টি গুরুত্বপূর্ন লাভজনক রুটের বাস আর চালাবে বা নিগম।তারা ইতিমধ্যে গত ৬ ই এপ্রিল এনআইকিউ এনবিএসটিসি/৩৪/ডিভিপি-কিউ/বিএইচপি/২০২১-২২ তারিখে এক নোটিফিকেশনে বহরমপুর- কোচবিহার রকেট বাস, বহরমপুর-কলকাতা ভায়া কান্দি সহ মোট ১০ টি রুটের বাসকে বেসরকারি ফ্র‍্যানচাইজির হাতে তুলে দিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আগ্রহীদের ১২ ই এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। সবটাই হয়েছে অত্যন্ত গোপনীয় ভাবে।নিগমের শ্রমিকদের বক্তব্য এভাবে বিভিন্ন ডিপোর একের পর এক রুট বেসরকারি হাতে তুলে দিলে নিগমের আয়ের পথই তো বন্ধ হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য এর আগেও নিগমের একাধিক রুট থেকে বাস বেসরকারি ফ্র‍্যাঞ্চাইজির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল শ্রমিকদের তীব্র বিরোধিতা সত্বেও।শুধু বিভিন্ন রুট বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়াই নয়, কোচবিহারের কেশব রোড লাগোয়া বাস টার্মিনাসের একটি অংশে এক ব্যবসায়ী সংস্থাকে তিন বছরের লিজে দেওয়া হয়েছে হোটেল চালানোর জন্য। কোচবিহার ডিপোর পুরোনো অফিস সরিয়ে টার্মিনাসে নিয়ে গিয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের পাশের পুরোনো বাড়িও নাম মাত্র মূল্যে দীর্ঘমেয়াদী ভাড়ায় দেবার তোড়জোড় চলছে। শুধু কোচবিহার নয়,উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে বামফ্রন্ট আমলে গড়ে ওঠা বড় বড় আধুনিক টার্মিনাসের সামান্য অংশ নিগমের জন্য রেখে বাকি অংশ ভাড়া দেবার প্রস্তুতি নিয়েছে নিগম কর্তৃপক্ষ। নিগমকে বেসরকারিকরনের হাত থেকে বাঁচাতে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের সিআইটিইউ নিয়ন্ত্রিত এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন গত ৮ ই মে তাদের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সভা করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক গৌতম কুন্ডু রবিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিগম বাঁচাতে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু হবে আগামী ২৫ শে মে।সেদিন নিগমের এমডির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে কর্তৃপক্ষকে বেসরকারিকরনের পথ থেকে সরে আসতে অনুরোধ করা হবে।তার আগে ২২,২৩ এবং ২৪ শে মে নিগমের প্রতিটি ডিভিশনে কর্মীরা বেসরকারিকরনের বিরুদ্ধে অবস্থান,বিক্ষোভ দেখাবে।

গৌতম কুন্ডু রবিবার জানিয়েছেন, একদিকে যেমন দ্রুত বেসরকারিকরনের পথে হাঁটছে নিগম কর্তৃপক্ষ কর্মরত অবস্থায় মারা যাওয়া কর্মীদের পরিবারের একজন সদস্যকে কনটাকচুয়াল হিসেবে নাম মাত্র বেতনে খাটিয়ে নিলেও তাঁদের স্থায়ী করার কোন উদ্যোগ নেয় নি।চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের কোন ইনক্রিমেন্ট নেই।এই শ্রমিকরা বছরের পর বছর একই বেতনে কাজ করছে।অমানবিক শ্রমিক শোষন চলছে নিগমে।

২০১১ সালের পর নিগমে কোন স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হয় নি।অথচ প্রায় এক হাজারের বেশি শ্রমিককে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হয়েছে।শূন্যপদগুলিকে বিলোপ করে দেওয়া হচ্ছে। নিগমে এখন আর কোন নিয়োগ নিগম করছে না।এজেন্সীর মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে।এদের নাম মাত্র মজুরী দেওয়া হচ্ছে।যা শ্রম আইনের বিরোধী।সরকারের শ্রম আইন মানছে না সরকারের নিগমই।আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমকে বেসরকারিকরন রুখে দেওয়ার পাশাপাশি সমকাজে সম বেতনের দাবিতেও লড়াই শুরু হবে।
রাজ আমলের কোচবিহার ট্রান্সপোর্ট রক্ষা করতে রাজ্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। রাজ আমলের কোচবিহার ট্রান্সপোর্টই আজকের উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগম। এই ঐতিহ্যপূর্ন নিগমকে রক্ষা করতে উত্তরবঙ্গ জুড়ে নিগমের শ্রমিকরা জোট বাঁধতে শুরু করেছেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।