কলমের খোঁচা

জাতীয়তাবাদ’ বনাম ‘ রাষ্ট্রবাদ’ গৌতম রায়


চিন্তন নিউজ:২৪শে সেপ্টেম্বর:–‘ জাতীয় আন্দোলনের ঊষা লগ্নে যে জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয়েছিল , বহু সীমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও সেখানে ভারতের প্রবাহমান বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ও সমন্বয়ী ধারার সঙ্গে কোনো সংঘাত ছিল না।প্রথম যুগের জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা বিপিনচন্দ্র পাল’ সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।কিন্তু সেই ধারণার ভিতরে এতোটুকু পরমত, পরধর্ম বিদ্বেষী মানসিকতা ছিল না।
বঙ্গভঙ্গের কালে অবনীন্দ্রনাথ যে ‘ ভারতমাতা’ এঁকেছিলেন, সেখানে ‘ নেশন’ বোধের চাইতেও ‘ বঙ্গমাতা’ বোধ ছিল প্রবল।এই ছবি আঁকার কালে নিজের কন্যার মুখচ্ছবি ই অবনীন্দ্রনাথের মনে সবার আগে ঠাঁই পেয়েছিল।
জাতীয় আন্দোলনে থেকে যে ‘ জাতীয়তা’র ধারণা আমরা পেয়েছি, সেই ‘ জাতীয়তা’ ধারণা আর আজ রাজনৈতিক হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শিবিরের ‘ জাতীয়তা’ র পরিবরাতিত রূপ ‘ রাষ্ট্রবাদে’ র ধারণা সম্পুর্ণ আলাদা।
বিপিন পালের ‘ সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ আর গোলওয়ালকরের ‘ সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদে’র চিন্তা, চেতনা, আদর্শগত ভিত্তি একদম ভিন্ন।
জাতীয় আন্দোলনের কালে উদ্ভূত জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য ই ছিল সীমাবদ্ধ পরিসরের ভিতরেও লিঙ্গ সাম্যের প্রতি আবেগ পূর্ণ।সেখানে মাতৃতান্ত্রিকতাকে প্রধান্য দিয়ে মাতৃতান্ত্রিকতার ভিতর দিয়ে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতি ঘৃণার উদ্রেকের সুতিকা প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছিল।
আর রাজনৈতিক হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শিবির জাতীয় আন্দোলনের নির্যাষ ‘ জাতীয়তাবাদে’র বিকৃত উপস্থাপনায় যে ‘ রাষ্ট্রবাদ’ কে তুলে ধরে, সেই চিন্তার মূল লক্ষ্য ই হলো লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে , নারীর অধিকারকে সঙ্কুচিত করে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কায়েম করা।
জাতীয় আন্দোলন যে ‘ জাতীয়তাবাদে’র উপর ভিত্তি করে তার একটি বিশেষ ধারাকে পরিচালিত করেছিল, সেই চিন্তার সঙ্গে হিন্দুত্ববাদীদের ‘ জাতীয়তাবাদে’ র পরিবর্তিত রূপ,’ রাস্ট্রবাদ’যে সম্পুর্ণ পৃথক, আমাদের জাতীয় আন্দোলন কালের ‘ জাতীয়তাবাদী’ চেতনার একটি বিকৃত উপস্থাপনা– এটা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা, তাঁদের বোঝানো– প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক মানুষের এখন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।