কলমের খোঁচা

জাতীয় বিজ্ঞান মনস্কতা দিবস ,ও নরেন্দ্র দাভালকর


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:২০শে আগস্ট:- “মানব সমাজে শিক্ষা ও বিজ্ঞানের সাহায্যে চেতনার যত অগ্রগতি ঘটবে, অন্ধবিশ্বাস ও অজ্ঞতার অন্ধকার সেই পরিমাণে অপসারিত হবে।” – নরেন্দ্র দাভালকার। এই চেতনার অগ্রগতি ঘটানোই ওনার জীবনের ব্রত হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে ১৯৭০ সালে এব,বি,এস ডিগ্রী লাভ করে ১৯৮২ পর্যন্তএকটি হাসপাতাল দুটো ক্লিনিক চালিয়েছিলেন ।কিন্তু শরীরের চিকিৎসা বন্ধ করে মনের চিকিৎসা করানোতে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ” অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন ” আন্দোলনের সর্বক্ষণের কর্মী হন। নামটি থেকেই তাঁর কর্মজীবন সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা হয়। তিনি বলেন আমরা বিজ্ঞানের সুবিধাগুলো নিতে তৈরি হয়ে আছি কিন্তু দর্শনটা নয়। আমরা বিজ্ঞানের ফসল ঘরে তুলছি কিন্তু বৈজ্ঞানিক দৃ‌ষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠছে না। তিনি বলেন প্রথম যখন মানুষ রেলগাড়িতে উঠত, তখন ইঞ্জিনের গায়ে পবিত্র লেবু ও লঙ্কা বা ওল্টানো পুতুল বেঁধে দিত। এখনও সেই অন্ধতা চলছে। আমি পুষ্টিগুণ যুক্ত লেবু না খেয়ে গাড়িতে অকারণে বেঁধে রাখি।

অনেকে আধুনিক বলে নিজেদের দাবী করে কিন্তু রন্ধে রন্ধ্রে কুসংস্কারে আবিষ্ট হয়ে থাকে। তিনি এই মানসিকতা সমালোচনা করতেন ও জ্যোতিষীরদের প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করতেন। এইভাবে তিনি নতুন ভারতবর্ষ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। ১৯৭৬ সালে সংবিধান সম্প্রসারিত হল,এবং নাগরিকের কর্তব্যগুলি সংযোজিত হলো।একটি মৌল কর্তব্য হল- “প্রতি ভারতীয় নাগরিকের কাজ হলো বিজ্ঞান মনষ্কতার বিস্তার ঘটানো “। এর মানে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে বৈজ্ঞানিক দৃ‌ষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা, এই বিষয়ে চিন্তা করা, এটিকে ছড়িয়ে দেওয়া ও একে লালন করা। সংবিধান নির্ধারিত কাজই তিনি নিষ্ঠার সাথে করছিলেন ।কিন্তু তাঁকে হত্যা করা হল!

সেই প্রাচীন কালে যেভাবে গ্যালিলিও আক্রান্ত হয়েছে, ব্রুনোকে প্রকাশ্যে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে, সেভাবেই দাভোলকরকেও হত্যা করা হল এই শতাব্দীতে এসেও একই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। কিন্তু এইসব হত্যাকাণ্ডের দ্বারা কিন্তু তাঁদের কর্মধারাকে থামিয়ে দেওয়া যায়নি। তাই মৃত্যঞ্জয়ী দাভোলকরের মৃত্যু দিনে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ” বিজ্ঞান মনষ্ক দিবস” হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই দিনে তাই এই বলে গর্জে উঠে বলার দিন, কিছুতেই ছাড়বো না এই লড়াইয়ের ময়দান।কিছুতেই মানবো না অন্ধকার।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।