দেশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

অলীক রঙিন স্বপ্নে জাতীয় শিক্ষানীতি ।


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:৩১শে জুলাই:- ব্রিটিশ শাসনাধীনে আধুনিক শিক্ষার প্রবর্তন হলেও শিক্ষানীতি সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে পরিচালিত হওয়ায় বিদ্যালয় শিক্ষার স্বাদ থেকে সমাজের শ্রমজীবী, নিপীড়িত শ্রেণী বঞ্চিত ছিলো।স্বাধীন ভারতবর্ষে কোঠারী কমিশন ভারতবর্ষের আর্থ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে একটি পরিকল্পিত, সুসংহত শিক্ষানীতি ঘোষণা করে। কিন্তু তৎকালীন শাসকশ্রেণী কোঠারী কমিশনের শিক্ষানীতি পুরোপুরি কার্যকর করেনি। তারপর এলো আর এক অদূরদর্শী শাসক, রাজীব গান্ধীর এডুকেশন ইন চ্যালেঞ্জ। এই শিক্ষানীতি কোঠারী কমিশনকে ধুলিসাৎ করে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করে। তারই প্রকাশ ভারতবর্ষ জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সংবিধানে শিক্ষা যুগ্ম তালিকায় থাকায় রাজ্য ভিত্তিতে শিক্ষার চিত্র পৃথক হয়। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের হাত ধরে বিদ্যালয় শিক্ষা সমাজের আনাচে কানাচে পৌঁছায়।

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত শিক্ষানীতি অসাংবিধানিক। গণপরিষদের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরিশ্রমের ফসল ভারতের সংবিধান। সেই সংবিধানে শিক্ষাকে যুগ্মতালিকায় রাখা আছে।অথচ বর্তমান ঘোষিত শিক্ষানীতি কেন্দ্রীয় সরকারের একক সিদ্ধান্ত। শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ ছাড়া এই লকডাউন পিরিয়ডে পার্লামেন্টে আলোচনা ছাড়াই ঘোষণা হয়ে গেলো যা সংসদীয় গণতন্ত্রে অপরাধ। সংবিধানের ৫১ নং ধারায় সাইন্টিফিক টেম্পারকে বিশেষভাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে, নতুন শিক্ষানীতিতে সেই বিষয়টিকে বাদ দিয়ে মনুবাদকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। অথচ এই মনুবাদের জন্য একসময় ভারতবর্ষের শিক্ষার অগ্রগতি স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। এখানে সংবিধান ভূলুণ্ঠিত।

হাস্যকর বিষয়টি হলো বাজেটের ছয় শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করা হবে। তাহলে একবছরে ক্ষমতায় থেকে শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়েনি কেন? ছাত্রদের ফিস বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে কেন? দ্বিচারিতার কোথায় গিয়ে পৌঁছোলে একদিকে ব্যয়বরাদ্দ্ বাড়ানো, অন্যদিকে শিক্ষানীতিতে বেসরকারীকরণকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়।বেসরকারিকরণের অর্থ শিক্ষার সংকোচন কারণ ভারতের মতো দেশে যেখানে আঠাত্তর শতাংশ মানুষের প্রতিদিনের আয় কুড়িটাকার নীচে , সেখানে শিক্ষার পেছনে বিপুল টাকা খরচ করার অবস্থা নেই।

এবারে আসি অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের কথায়, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা বঞ্চিত এবারে কৌশল করে তাদের কর্মচ্যুত করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রত্যেক শ্রেণীতে পরীক্ষা প্রয়োজন। দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে যে পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে তা অবাস্তব। ভোকেশনাল পরীক্ষায় শিক্ষাশেষ না করে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, তা বাস্তবে কাজে আসবে তো! ! যদিও এই সরকারের আমলে কর্মসংস্থান নয় কর্মহীনতা হচ্ছে। হাতে কলমে শিক্ষা বিষয়টি স্বচ্ছ নয়। এককথায় ভাওতাবাজী শিক্ষানীতি ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মডেল আমাদের দেশে কার্যকর করানোর চেষ্টা হচ্ছে কিন্তু শিক্ষানীতে প্রত্যেকটি দেশের নিজস্বতার ছাপ থাকা বাঞ্ছনীয়। বহুত্বিবাদী সংস্কৃতিতে লালিত ভারতবর্ষে, শিক্ষানীতিতে তার ছাপ নেই।

মনে পড়ছে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের গল্প। দাদা প্রতিদিন ভাইকে ঘুমোনোর আগে ভালো ভালো খাবার ভাইকে খাওয়াবে বলে। ভাই তাই শুনে ঘুমিয়ে যায়। সকালে জোটে ভেজাভাত। ভাই দাদাকে বলে, দাদা কেন তুমি ভালো খাবারের গল্প শোনাও, দাদা বলে তাই তো ঘুমিয়ে যাস পরদিন ভালো খাবারের আশায়। এইভাবে আমাদের গল্প শোনানো হচ্ছে। আসলে গল্প দিয়েই ভারতবাসীকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। জনগণ জাগলেই শাসকের বিপদ। জীবন দিয়ে ভারতবাসী জীবনকে চিনবে। লড়াই অবশ্যম্ভাবী।শিক্ষা নিয়ে ভাওতা চলে না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।