জেলা

মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে শুরু হলো হেরিটেজ এন্ড অ্যাকাডেমিক ট্যুর


মিতা দত্ত, নিজস্ব প্রতিবেদন: ০৮/১০/২০২৩:– মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আজ শুরু হলো হেরিটেজ এন্ড অ্যাকাডেমিক ট্যুর। বাংলায় , ভারতবর্ষে ও বিশ্বের দরবারে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী কিন্তু অনালোকিত স্থানগুলি সম্বন্ধে পরিচয় করানোর মহৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে এই পথচলা শুরু। আজ বেছে নেওয়া হয়েছিল ভাগীরথীর ওপারে খোসবাগ, ভট্টবাটি, কিরিটেশ্বরী, বড়োনগরের চারবাংলা মন্দির ও রোশনীবাগ বা সুজাউদ্দীনের সমাধিক্ষেত্র নামে পরিচিত।

ইতিহাস শুধু কথা বলে না, ইতিহাস বেঁধে বেঁধে থাকতে বলে ।বলে বিন্দুমাত্র চিড় ধরলে মেরামত করে মানবতায় স্নাত হতে।
খোসবাগ নবাব পরিবারের সমাধিক্ষেত্র। পায়ে পায়ে সমাধিস্থল। রয়েছে সিরাজ ও তাঁর প্রেমিকার লুৎফার সমাধিস্থল। বহু বিতর্কিত সিরাজকে ভালোবেসে লুৎফা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। শোনা যায় সিরাজ শিয়া
ধর্মালম্বী হওয়ায় লুৎফাকে নিকা করেছিলো।মুসলিম ধর্মীয় মতে তাঁর অন্য স্ত্রী ছিলো। কিন্তু সিরাজের পাশে সকলের মানসপটে লুৎফায় স্থান পায়।

এখানেই রয়েছে সিরাজকে ব্রিটিশদের ধরিয়ে দিয়েছিলো তার সমাধি। এই বিশ্বাসঘাতকের সমাধি পৃথক জায়গায়। ভাগীরথীর তীরে ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই স্থানটি।

মুর্শিদাবাদের আর একটি অনালোকিত স্থান ভট্টবাড়ি ।সেনরাজারা ভট্টদের এখানকার জমি দান করেন। ভট্টরাজারা এখানে একটি শিবমন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি সংস্কৃতি সমন্বয়ের এক উজ্জ্বলতা নিয়ে দন্ডায়মান।মন্দিরগাত্রে কাজে রয়েছে পুরাণ ও বৈঞ্চব কাহিনীর চিত্র।স্থাপত্যে রয়েছে বৌদ্ধ ও হিন্দুরীতির সংমিশ্রণ। শিবমন্দির এটি। মন্দিরের চূড়াটি একটি ব্যতিক্রমী ভাবনার পরিচায়ক।বর্তমানে এলাকাটি হিন্দু মুসলিম মিলেমিশে থাকে ও এই মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণ করে ।

এরপর কিরিটেশ্বরী। কথিত আছে এখানে মায়ের করোটি বা কিরিটি পড়েছিলো।তাই এটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান। বর্তমানে এটি হেরিটেজ গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মূল মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতবিক্ষত। বর্তমানে মূল মন্দিরটি হিন্দু বৌদ্ধ ও ইসলামি স্থাপত্যের সম্বন্বয়।মায়ের ছবিতেও বুদ্ধের আদল আছে।মন্দিরেরপুরোহিত খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলেন।পুরোনো মন্দিরের পাশাপাশি কিছু নতুন মন্দির হয়েছে।

বড়োনগরের চারবাংলা মন্দির ,টেরাকোটার কাজের জন্য এই স্থানটি বিখ্যাত ।রানী ভবানি নামের সাথেও আমরা কমবেশি পরিচিত।বড়োনগরে ভাগিরথী গতিপথের রদবদলের প্রেক্ষিতেও স্থানটি দ্রষ্টব্য। রাণী ভবানি এলাকাজুড়ে প্রচুর শিবমন্দির তৈরী করেন। মন্দিরগুলি থেকে দুঃস্থ মানুষদের সাহায্য করা হতো।এছাড়া তিনি টোল তৈরী ও নানাবিধ সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন।

অষ্টাদশ শতকে একজন বিধবা রমণী যেভাবে জমিদারি সামলেছেন ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজকর্ম করেছেন তা উল্লেখের দাবী রাখে। নবাবী আমলে হিন্দু রমণী যেভাবে কাজ দেখলেই বোঝা যায় ধর্ম মানব মিলনের অন্তরায় ছিলো না। একে অপরের পরিপূরক ছিলো।এই চর্চা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে এই পরিকল্পনা।
এই চর্চাই কলুষতাকে দূর করে চলার প্রেরণা যোগাবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।