জেলা

মৃণাল সেন- জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য


প্রতিবেদনে কল্পনা গুপ্ত,চিন্তন নিউজ, ১৪ ই মে ২০২১:– বিখ্যাত চলচ্চিত্রপরিচালক, চিত্রনাট্যকার, লেখক মৃণাল সেনের আজ জন্মদিন। বর্তমানে বাংলাদেশের ফরিদপুরে ১৪ ই মে, ১৯২৩ সালে এক বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। সেখানেই পড়াশোনা সম্পন্ন করে কলকাতায় এসে স্কটিশ চার্চ কলেজে এবং স্নাতকোত্তর পর্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার মধ্য দিয়ে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি পার্টি সদস্য ছিলেন না। তিনি ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত হন এবং সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের সুখ দুখের রোজনামচার অংশীদার করে তোলেন নিজেকে যার প্রকাশ ঘটেছিলো তাঁর নির্দেশিত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে।

তাঁর প্রথম ছবি রাতভোর সাফল্য না পেলেও দ্বিতীয় ছবি নীল আকাশের নিচে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলো। বাইশে শ্রাবণ করে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুড়ি পুরস্কার পায় আকালের সন্ধানে। এই ছবিতে তিনি ১৯৪৩ খৃষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের নিয়ে একটি গ্রামে ছবি তৈরি করতে গিয়ে দুর্ভিক্ষের কাহিনী আর বর্তমান অবস্থার এক অনবদ্য মেলবন্ধন তুলে ধরেন।

১৯৬৯ সালে বিখ্যাত অভিনেতা উৎপল দত্ত অভিনীত ভুবন সোম তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের এক মাইলস্টোন। ইন্টারভিউ, কলকাতা ৭১, পদাতিক ছবি তিনটির মধ্য সেই সময়কার কলকাতার জীবনের অস্থির অবস্থার এক দলিল ধরে রাখা আছে। ১৯৭৯ এ তাঁর বিখ্যাত ছবি একদিন প্রতিদিন। ১৯৮২ তে খারিজ মুক্তি পায় এবং ১৯৮৩ তে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পান। পরবর্তীকালে মহাপৃথিবী, অন্তরীন, আমার ভুবন উল্লেখযোগ্য ছবি। তিনি বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া, তেলেগু ভাষায় ছবি নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রেম চন্দের গল্প অবলম্বনে তেলেগু ভাষায় নির্মাণ করেন ওকা উড়ি কথা। ১৯৮৫ সালে করেন জেনেসিস যা হিন্দি, ইংরাজি, ফরাসি ভাষায় তৈরি হয়।

তিনি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে ভারত সরকার দ্বারা পদ্মভূষণ পুরষ্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরষ্কার পান। ফরাসি সরকার তাঁকে কম্যান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস এন্ড লেটারস সম্মানে ভূষিত করেন যা ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিকের সম্মান। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে সম্মানিত করেন।
মৃণাল সেনের সমগ্র জীবন ছিলো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের স্পন্দনকে তুলে ধরার কাজে ব্রতী। সেকাজ থেকে কখনও সরে আসেননি। তাঁর গভীর মননশীলতার স্পন্দন চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে সাধারণের হৃদয়ে স্পন্দিত হতো। এই বিরল প্রতিভা ও অধ্যাবসায়ের সমাপ্তি ঘটে ২০১৮ সালের ৩৯ শে ডিসেম্বর, বার্ধক্যজনিত জনিত রোগের কারণে।
চিন্তনের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি রইলো আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।