কলমের খোঁচা

“পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”


অভিজিৎ দাশ গোস্বামী: চিন্তন নিউজ:-১০ই এপ্রিল:- হে মহামানব কবিতায় “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়:পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”- সুকান্ত ভট্টাচার্য এই লাইনটির মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উক্ত দু’টি বাক্যের মধ্যে পৃথিবীর নির্মম বাস্তবতা নিহত রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় একটি প্রবাদ আছে “বুভুক্ষিতং ন প্রতিভাতি কিক্ষিৎ” অর্থাৎ ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে কোন সৌন্দর্য প্রতিভাত হয় না। মানুষ যখন শান্তিতে থাকে। অর্থাৎ যখন অন্য,বস্ত্র ও বাসস্থান এর নূন্যতম চাহিদা পূরণ হয়, তখন সে সৌখিন হয়ে ওঠে।

বৃষ্টি ভেজা দিনে,জ্যোৎস্না রাতে, গোধূলি লগ্নে, পাহাড়ের ঝর্না ধারায় কিংবা শরৎ এর কাশফুল-শিউলি ফুল বা আকাশের মেঘ দেখে কবির মন কাব্যময় হয়ে উঠে। চলে যান সে ভাবের রাজ্যে। সবকিছুতেই খুঁজে পান ছন্দ। মুষলধারায় বৃষ্টির মাঝে ফুটপাতের সুবিধাবঞ্চিত শিশুটির জীবন-সংগ্ৰাম সে দেখতে পায়না। জ্যোৎস্না রাতে পাশের কুঁড়েঘর থেকে আসা দু’দিন অনাহারে থাকা তিনটি শিশুর আর্তচিৎকার ও মমতাময়ী দুঃখীনি মায়ের মিথ্যা আশ্বাসের গল্প তাঁর কানে পৌঁছায় না। নদীর কলতান, পাখিদের কোলাহল আর ফুলের সৌরভ হয় তাঁর কবিতার উপজীব্য বিষয়।

অপরদিকে তার‌ই পেটে যখন দু’বেলা খাবার না জোটে। থাকার জন্য কোন বাসস্থান খুঁজে না পায়। তখন সে বাস্তবে ফিরে আসে। সমস্ত শহর ঘুরেও যখন পেটে দু’মুঠো অন্নের জোগাড় দিতে না পারে । তখন ক্ষুধার যন্ত্রনায় চোখে সর্ষেফুল দেখে। প্রকৃতির সব উপকরণের মধ্যে যে খাদ্য দেখতে পায়। পৃথিবীটা হয়ে যায় নিরস গদ্যময়।আর তখনই দূর আকাশের চাঁদটা তার কাছে হবে মাত্র আগুনের চুলায় সেঁকা ঝলসানো রুটি মনে হয়। নর্দমার জল গুলো মনে হয় স্বর্গীয় অমৃত সুধা। রঙ্গিন পৃথিবীটা তার কাছে লাগে বিবর্ণ।

উক্ত লাইন দু’টি দ্বারা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য হয়তো এই নির্মম বাস্তবতা টাই উপলব্ধি করাতে পেরেছেন। যা আজ নতুন করে উপলব্ধি করছে বিশ্বের অনেক শ্রমজীবী মানুষ। করোনা, লকডাউন কবিতার লাইন দু’টিকে কঠিন বাস্তব করে তুলেছে অনেক মানুষের কাছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।