কলমের খোঁচা

প্রয়াত হলেন সিপিআইএম এর প্রবীণ নেতা রূপচাঁদ পাল।


দিলীপ কুমার সোমঃনিজস্ব প্রতিবেদন:- চিন্তন নিউজঃ ১৬/০৮/২০২২– প্রয়াত হলেন পার্টির প্রবীণ নেতা কমরেড রূপচাঁদ পাল। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি অকৃতদার ছিলেন। কোলকাতার অ্যাপেলো হাসপাতালে সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জীবনদীপ নিভে যায়। কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতা, প্রাক্তন সাংসদ – মুখ্য সচেতক, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মা:) হুগলি জেলা কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ছিলেন।বিজয় মোদক মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি ছিলেন।সি আই টি ইউ’র হুগলি জেলার সহ সভাপতি এবং হুগলি পি আর সি’র সভাপতি ছিলেন। তিনি ৭বার সাংসদ হিসেবে‌ নির্বাচিত হন। বাগ্মী, সুবক্তা এবং কলমের দক্ষতা ছিল।
হুগলি ব্রাঞ্চ গভ: স্কুলে ছাত্র জীবন শুরু করেন।হুগলি মহসিন কলেজের প্রাক্তনী রূপচাঁদ পাল
পরবর্তী সময়ে নৈহাটি ঋষি বঙ্কিম কলেজে ইংরাজি অধ্যাপনার সাথে যুক্ত হন অধ্যাপক রূপচাঁদ পাল। পরবর্তী সময়ে পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে আমৃত্যু কাজ করেছেন।পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এর আজীবন সদস্য ছিলেন প্রয়াত রূপচাঁদ পাল।


ভারতের হয়ে প্রতিনিধি হিসেবে চিন ভ্রমণে গিয়েছেন(তৎকালীন উপ রাষ্ট্রপতি এম কে নারায়ণন সাথে)। এছাড়াও একইভাবে বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন। সাংসদ থাকাকালীন ব্যাঙ্কিং দফতর ও অর্থ দফতরের সংসদীয় কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছেন।,২০০৬ সালে স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের লাগাতার ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সাথে আলোচনা করেছিলেন। ব্যাঙ্কের এই লাগাতর ধর্মঘটের বিষয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এবং চিত্তব্রত মজুমদারেরও বড়ো ভূমিকা ছিল। পরবর্তীতে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পর ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয় ।

বন্ধ ডানলপ কারখানা খোলার জন্য এলাকায় তেমন শ্রমিক কর্মচারীদের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তেমনি সংসদে একাধিকবার ডানলপ কারখানার বিষয়টি সম্পর্কে বারেবারে উত্থাপন করেছেন।

সাংসদ হিসেবে সাংসদের তহবিল থেকে অসংখ্য হাইস্কুল এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। স্থানীয় হুগলি গার্লস স্কুল তার একটি অন্যতম সাক্ষী। এছাড়াও চন্দননগর সাঁতার প্রশিক্ষণ সংস্থা, পর্বতারোহী প্রশিক্ষকণ কেন্দ্র, ‘স্মৃতি মন্দির স্কুল অফ ফিজিক্যাল কালচার’ যেখানে শরীরচর্চা ও জিমন্যাস্টিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন।ব্যান্ডেল স্টেশন রোডের ‘মুক্তমঞ্চ’ গড়ে তোলার জন্য সাংসদ তহবিলের অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। পানীয় জলের জন্য সাহাগঞ্জে নির্মিত জলাধারের জন্য সাংসদ উন্নয়নের তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। এককথায় বলা যায় মানুষের স্বার্থে, ক্রীড়ান্নোয়েনে এবং সাংস্কৃতিক ভাবনাকে প্রসারিত করতে সদর্থক ভূমিকা পালন করে গেছেন।

এছাড়াও অধ্যাপনার পাশাপাশি রূপচাঁদ পাল সহ কয়েকজন শিক্ষাবিদ মিলে সেইসময় গড়ে তোলেন ব্যান্ডেল স্টেশন রোডে ‘হুগলি টিউটোরিয়াল হোম’। বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য কলেজ পড়ুয়া এখানে এসে পাঠ‌‌ নিতেন।

২০০৬ সালের স্টেট ব্যাংকের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের সময় কম অসীম দাশগুপ্তর সাথে কম রূপচাঁদ পালের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল। সোমবার ধর্মঘট শুরু হয়েছে এবং শনিবার পর্যন্ত আস্তে আস্তে ৬ দিন পেরিয়ে গেছে, কোনো সমাধান হয় নি। সেই সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন পি. চিদাম্বরম। রাজ্য অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের সাথে লোকসভার সাংসদ রূপচাঁদ পাল চিদাম্বরমকে বলেন আগামী সোমবার থেকে সমস্ত ব্যাংক স্টেট ব্যাংকের সমর্থনে ধর্মঘটে নেমে যাচ্ছে, তোমার অর্থমন্ত্রী পদটা থাকবে তো? আর এসবিআই স্টাফ ফেডারেশন (SBI Staff Federation) এর সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল পটানায়েক ও প্রেসিডেন্ট অনন্ত কলিতাকে স্টেট ব্যাংকের কলকাতার কমরেডদের মাধ্যমে ওনাদের বলেন সেই সময় দিল্লি না পরিত্যাগ করতে। সেই সময় এঁরা যদি সেই পটভূমিতে দাড়িয়ে এই ভূমিকা পালন না করতেন, তাহলে ৬ দিন ধর্মঘট করার পর আমাদের শূন্য হাতে ফিরতে হতো। ওনাদের ভূমিকা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কম রূপচাঁদ পাল অমর রহে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।