কলমের খোঁচা

জন্মদিনে মীরা দত্তগুপ্ত।


কলমে কৃষ্ণা সাবুই: চিন্তন নিউজ: ০৫/১০/২০২৩:- মীরা দত্তগুপ্ত ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজকর্মী,বিশিষ্ট শিক্ষাবিদএবং স্মরণীয় রাজনৈতিক ব‍্যক্তিত্ব।সমগ্র জীবনের প্রচেষ্টা ছিলো মহিলাদের সর্বাঙ্গীন কল‍্যান সাধন করা।
তিনি জন্মগ্রহন করেন ১৯০৭সালের ৫ই অক্টোবর ঢাকা বাংলাদেশে।পিতা ছিলেন শরৎ দত্তগুপ্ত_ মা ছিলেন সরজুবালা দেবী।
পড়াশোনা শুরু হয় কোলকাতার ডায়াশেসন স্কুলে, এখান থেকে পাশ করার পর ভর্তি হন বেথুন কলেজে। এই কলেজ থেকে গনিতে অনার্স নিয়ে প্রথম শ্রেনীতে পাশ করেন।
এরপর বিদ‍্যাসাগর কলেজ ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ান।পরবর্তীতে তিনি এই দুটি কলেজেরই ভাইস প্রিন্সিপাল হয়েছিলেন পর্যায়ক্রমে।শেষে তিনি সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ‍্যক্ষের পদ অলংকৃত করেছিলেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উজ্বল দিক আমাদের জানা অত‍্যন্ত জরুরী। তিনি ১৯৩৭থেকে ১৯৪৬সাল পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের সদস‍্য ছিলেন।তিনি ৪বার বিধানসভার সদস‍্য ছিলেন। বিধায়ক পদে থেকেও বিপ্লবী আন্দোলনে অগ্রনী থাকায় তাঁর খ‍্যাতি বেড়ে যায়। ভারতের বহু বিপ্লবী দলের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ছিল, যেমন অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর,বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর সদস‍্য ছিলেন। একটি ম‍্যাগাজিন “বেনু”র মহিলা বিভাগের সদস‍্য ছিলেন। এরপর দক্ষিন কোলকাতা মহিলা গ্রুপের দায়িত্ব পান।
পরে তিনি লো প্রোফাইল ভুমিকায় চলে যান,যাতে গোপনে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের লড়াই করতে পারেন।
এই সময় তিনি তাঁর আয়ের টাকা বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলে দান করে দিতেন।
তিনি মেদিনীপুর এবং রাজ‍্যের অন‍্যান‍্য অংশে সদস‍্যদের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনার জন‍্য বরানগরে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সদের সভায় উপস্থিত ছিলেন। ১৯৩৩সাল থেকে পুলিশ তাঁর কাজকর্মের প্রতি সন্দিহান হয়।এবং তাঁকে ক্রমাগত নজরদারিতে রাখা হয়। ১৯৩৮সালে দার্জিলিং এ গভর্নর জন এ‍্যন্ডারসনকে গুলি করার ঘটনায় অনেক পার্টী সদস‍্যকে গ্রেফতার করা হয় এবং মামলা রুজু হয়।
এই মামলায় মীরাকে কয়েকঘন্টা জেরা করে পুলিশ। এই সময় তাঁর নিরাপত্তার জন‍্য তাঁর বাবা ২বছর দূরে পাঠিয়ে দেন।১৯৪২সালে ভারত ছাড়ো আন্দলোনে তহবিল সংগ্রহে তাঁর অসাধারন ভূমিকা ছিলো।১৯৪৬সালে জাতীয়তাবাদী আন্দলোনে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। জেল থেকে ছাড়া পাবার পর তিনি নেতাজীর ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রথম সদস‍্য হন। বালিগঞ্জ নির্বাচনী এলাকায় তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ কর্মী। ১৯৪৩সালে দুর্ভিক্ষের সময় মানুষের পাশে থেকে ত্রাণ বিলি করেছেন।
স্বাধীনতার পরবর্তীতে তাঁর অনেক কর্মকান্ডের মধ‍্যে ছিল দুর্ভিক্ষ, বন‍্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ, গৃহহীন ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মহিলাদের পুনর্বাসন দেওয়া।

অবসর পরবর্তীকালে তিনি কোলকাতার কিশোর আদালতে,শাস্তির সম্মানসুচক বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন।এছাড়া চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস‍্য ছিলেন।১৯৫৮সালে তিনি চীনে ভারতীয় শুভেচ্ছা মিশনে যোগ দেন।এছাড়া উন্নয়নমুলক,শিক্ষামুলক এবং নারী সম্মেলনে যোগ দিতে বার্লিন,কোপেনহেগেন,মস্কো যান।তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের সেনেট এবং পশ্চিবঙ্গ মাধ‍্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সদস‍্য ছিলেন।
তিনি পাঠভবন স্কুল স্থাপন করেছিলেন।
এই মহিয়সী নারী ১৯৮৩ সালে ১৮ই জানুয়ারি ৭৬বছর বয়সে কোলকাতায় প্রয়াত হন।
জন্মদিনে মীরাদত্ত গুপ্তকে চিন্তন শ্রদ্ধায় স্মরণ করে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।