কলমের খোঁচা

কেন্দ্রীয় বাজেট অর্থনৈতিক ভয়াবহতার বার্তা বাহক


শান্তনু বোস, নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ০২/০২/২০২৩:- খুব সহজ সরল সাধারণ ভাষায় যদি সাধারণ মানুষের উন্নয়নকে বোঝাতে হয়, তাহলে একটাই কথা ভাবতে হবে। উন্নয়ন মানে কি পুঁজির বিকাশ? না-কি শ্রমের বিকাশ? সাধারণ মানুষের উন্নয়নের সাথে যেটা জড়িয়ে আছে, সেটা হল শ্রমের বিকাশ। কেন্দ্রীয় বাজেটের অভিমুখ যদি শ্রমের বিকাশের দিকে না থাকে, তাহলে সেই কেন্দ্রীয় বাজেট কখনোই সাধারণ মানুষের উন্নয়ন করতে পারে না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর পঞ্চম বাজেট পেশ করে এই কথাটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন যে, তাদের সরকারের দায়বদ্ধতা কখনোই সাধারণ মানুষের কাছে নেই। সমস্ত দায়বদ্ধতা পুঁজির বিকাশের কাছে। অতিমারি পরবর্তী বিশ্বে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়েছে। ভারতবর্ষও সেই সংকট থেকে মুক্ত নয়। স্বাভাবিকভাবেই এই সময়ে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন মূলতঃ দু’টি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ। দ্বিতীয়ত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ না থাকলে বাজার তৈরি হয় না, এটা বুঝতে বিশাল কোনো অর্থনীতিবিদ হওয়ার দরকার নেই। এই কেন্দ্রীয় বাজেটে সাধারণ মানুষের হাতে অর্থের জোগানের কোনো দিশাই দেখানো হয়নি। সাধারণ মানুষের আয়করে যে যৎসামান্য ছাড়ের কথা বলা হয়েছে, তা যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নিরিখে বিচার করা হয়, তাহলে সেটা কোনো ছাড়ই রইলো না। অথচ ২ কোটি টাকার ওপর যাদের আয়, তাদের কার্যকরী কর ৪২% থেকে কমিয়ে ৩৯% করা হলো, আর সারচার্জ ৩৭% থেকে কমিয়ে২৫%। এই সরকারের দায়বদ্ধতা কোন শ্রেনীর প্রতি, সেটা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, যদি না আমাদের মগজটা নাগপুরের কেশব ভবনে গচ্ছিত রাখি।
ভারতবর্ষকে সবাই চেনেন- জানেন কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে। এ দেশের অর্থনীতি যে লাঙলের ফলায়, সেটা বুঝেই স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সেচের জন্য বরাদ্দ করা হতো বাজেটের ২০%। এই বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে সেচ বাবদ বরাদ্দ মাত্র ১%। কৃষি উৎপাদনে সারের ক্ষেত্রে ভরতুকি ছাঁটাই করা হয়েছে ২২% যার অর্থমূল্য ৫০,০০০ কোটি টাকা। ভারতবর্ষ যখন ক্ষুধা আর অপুষ্টির নিরিখে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে, তখন জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনে খাদ্য শস্য সংগ্রহে ভরতুকি ৩১% কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব কেন্দ্রীয় বাজেটে করা হয়েছে। ২০২২ – ২৩ অর্থ বর্ষে এর পরিমাণ ছিল ৭২, ২৮২ কোটি টাকা। ২০২৩ – ২৪ অর্থ বর্ষে এর পরিমান কমিয়ে ৫৯,৭৯৩ কোটি টাকা। ঠিক এটাই আশাকরা যায় পুঁজির মদতপুষ্ট একটা সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে যারা মনে করে, ভারতবর্ষটা কৃষি প্রধান নয়, এটা ঋষি প্রধান দেশ।

এবার একটু কর্মসংস্থানের দিকে তাকানো যাক। বাম নিয়ন্ত্রিত প্রথম ইউপিএ সরকারের অন্যতম সাফল্য ছিল ১০০ দিনের কাজের মধ্যে দিয়ে ন্যুনতম কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা। ১০০ দিন সময়কালকে বাড়িয়ে ক্রমশ গোটা বছরের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা। এবছর কেন্দ্রীয় বাজেটে ১০০ দিনের রেগায় বরাদ্দ ৮৯,০০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৬০,০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। স্থায়ী কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করার কোনো লক্ষমাত্রা এই সরকার ঠিক করেনি।

এই কেন্দ্রীয় বাজেটকে দিশাহীন বা জনবিরোধী বললে এই বাজেটের ভয়াবহতা অনেকটাই হাল্কা লাগবে। এই বাজেটের বিরুদ্ধে সার্বিক লড়াই করা এবং বিকল্প অর্থনীতির সন্ধান দিতে পারে একমাত্র দেশের বামপন্থী শক্তি। সাধারণ মানুষের স্বার্থে একরাশ আশা নিয়ে বসে থাকা- ভারতবর্ষে সমস্ত বামপন্থী দলগুলো মিলে কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরুদ্ধে যৌথ সাধারণ বিবৃতি প্রকাশ করুক। পুঁজির বিকাশ নয়, শ্রমের বিকাশ চাই। এটাই সময়ের দাবী।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।