দেশ রাজনৈতিক

মিডিয়া ম্যাজিক, ইন্টেলেকচুয়াল শয়তান আর কিছু নির্বোধের নাচ


শান্তনু বোস,নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলচর: চিন্তন নিউজ:১৮/০৭/২০২৩:- জুনিয়র পি সি সরকারের ম্যাজিক দেখার সুযোগ পেয়েছি বেশ কয়েকবার। ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে পি সি সরকার বারবার বলে থাকেন যে, আপনারা যেটা দেখছেন সেটা আসলে আপনাদের দেখার ভুল। ম্যাজিক অলৌকিক কিছু নয়। ম্যাজিক হলো সায়েন্স, আর্ট আর দর্শন। জীবনের প্রত্যেকটা দিন আমরা এই ম্যাজিক দেখে চলেছি। সাফল্যটা তাদের, যারা এই ম্যাজিকটা দিনের পর দিন দেখিয়ে চলেছে। তারা ম্যাজিকে বুঁদ করে রাখতে পেরেছে আমাদের। আমরা সেটাই দেখছি, যেটা তারা দেখাচ্ছে। আমরা সেটাই ভাবছি, যেটা তারা ভাবাচ্ছে। এটা তারা করে চলেছে সায়েন্স, আর্ট আর তাদের দর্শনের জোরে।
আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ। দৈনন্দিন বাজার দোকান চাকরি সংসার নিয়ে আমাদের দিনগত পাপক্ষয়। সকালের খবরের কাগজ আর সন্ধ্যা বেলায় টিভি চ্যানেলের মধ্যেই আমাদের ভাবনার চলাফেরা, চিন্তার গন্ডি। ঠিক এই জায়গাতেই ওদের সায়েন্স আর্ট আর দর্শনের প্রয়োগ। বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। দৈনন্দিন বাজার আর সাংসারিক বাজেট মেলাতে গিয়ে জিনিসপত্রের পরিমানটা কম করে দিতে হচ্ছে। ছোটো কম্বলে গা ঢাকতে গিয়ে পা ঢাকে না, আবার পা ঢাকতে গেলে গা ঢাকে না। মিডিয়ার কোনো মাথা ব্যথা নেই। মজুদ ভান্ডার থেকে খাদ্য শস্য বিক্রির অনুমতি দিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কাদের জন্য এই অনুমতি? শুধুমাত্র ব্যবসাদারদের জন্য। রাজ্য সরকার গুলিকে এই শস্য ক্রয় থেকে বিরত রাখা হলো। রাজ্য সরকার তাদের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পে মানুষের জন্য মজুদ ভান্ডার থেকে খাদ্য শস্য কিনে রাজ্যের মানুষকে কম দামে দিতে পারবে না। রাজ্য সরকার গুলোকেও ওই খাদ্য শস্য কিনতে হবে বেশি দামে ব্যবসায়ীদের থেকে। এটাই হলো কেন্দ্রের বেনিয়া সরকার। মিডিয়া কি এই সত্যিটা সামনে এনেছে?

মিডিয়া এখন ব্যস্ত তাদের ম্যাজিক দেখাতে। ভাবনা চিন্তা গুলেকে তালগোল পাকিয়ে নিজেদের খাতে বওয়াতে। বেঙ্গালুরুতে সীতারাম ইয়েচুরি, সোনিয়া গান্ধী আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখিয়ে সস্তার ম্যাজিক দেখাতে চাইছে। সিপিআই (এম) দলের সাধারণ সম্পাদক তো পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছেন যে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে কোথাও কোনো রকম জোট তো দূরের কথা সমঝোতা হওয়ারও প্রশ্ন নেই। মিডিয়া তার নিজস্ব সায়েন্স আর্ট আর দর্শন দিয়ে মানুষকে ম্যাজিকে বুঁদ করে রাখছে। বিজেপির সঙ্গে ঘর করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ওদের মন্ত্রীসভায় ছিল। বিজেপি বিরোধী জোটে উনি কি করছেন? সেই প্রশ্নটা তো আগে তোলা দরকার ছিল। সাম্প্রদায়িক আরএসএস সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। তাহলে প্রশ্নের আঙুল তো তৃনমুল সুপ্রিমোর দিকে তোলা দরকার। তৃণমূল কংগ্রেসের আমলেই তো বিজেপি দ্বিতীয় স্থান দখল করতে পেরেছে এই রাজ্যে। সিপিআই(এম) দল তো তার ঘোষিত অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে তাদের পার্টি কংগ্রেস থেকে। পার্টি কংগ্রেস সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, এখন দেশের প্রধান সঙ্কট সাম্প্রদায়িক শক্তি। এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চলবে। এই লড়াইয়ের জন্যে তিনটি রণকৌশল ঘোষণা করেছে তারা।
১) নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।
২) বামপন্থী শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।
৩) গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।
কেরলে নিজেদের শক্তি আছে। তাই সেখানে জমি ছাড়ার প্রশ্নই নেই। বিহার, উত্তর প্রদেশ সহ সমগ্র ভারতবর্ষে তো বামপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সাথে নিয়েই লড়াই করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে লড়াই চলছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্কে সিপিআই(এম) দল তাদের মূল্যায়ন পরিষ্কার করে দিয়েছে। বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস এক নয়। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস দলটি গড়ে ওঠে বিজেপি তথা আরএসএস নামক সাম্প্রদায়িক সংগঠনের অর্থে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে একই ফ্রেমে সীতারাম ইয়েচুরির ছবি দেখিয়ে যারা ম্যাজিকে বুঁদ করতে চাইছে তারা কাদের স্বার্থে একাজ করছে সেটা বুঝতে মানে বই লাগে না। স্বচ্ছ দৃষ্টিতে না দেখে যারা মিডিয়া ম্যজিকের ভিত্তিতে চলতে চাইছে তাদের দু’টো শ্রেনীতে ভাগ করা যায়।
১) ইন্টেলেকচুয়াল সিপিএম বিরোধী শয়তান। যারা সব কিছু জেনে বুঝে পার্টিকে হেয় করে আত্মতৃপ্তি পায়।
২) নির্বোধ নাচুনে। যারা যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাননা বরং ইন্টেলেকচুয়াল শয়তানদের কথায় নেচে, সিপিআই(এম) দলটির বিরুদ্ধে তোপ দেগে সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি সাজান।

সত্তরের দশকে যখন ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এম) দলের ওপর স্টিমরোলার চালিয়েছেন, তখনও সিপিআই(এম) দল ইন্দিরা গান্ধীকে দু-হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছে ব্যঙ্ক, বিমা, খনি রাস্ট্রীয়কররণের জন্য কারণ, সেখানে দেশের স্বার্থ জরিত। রাষ্ট্রপতি পদে ভি ভি গিরিকে সমর্থনও করেছে সিটি আই(এম)। ২০০৪ সালে অধিকাংশ কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হওয়া সিপিআই(এম) প্রথম ইউপিএ সরকার কে সমর্থন করে শুধুমাত্র সামপ্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে। তাই বিজেপি বিরোধিতায় সিপিআই(এম) দলকে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমান দেওয়ার দরকার নেই। প্রশ্নের আঙুল উঠুক তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঙ্গালুরুতে যাওয়া এবং সীতারাম ইয়েচুরির সাথে এক ফ্রেমে থাকা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। যদিও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমান দেবে ভবিষ্যৎ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।