জেলা

জলপাইগুড়ি জেলার সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত প্রার্থীদের সমর্থনে মীনাক্ষী মুখার্জির উপস্থিতিতে বিপুল জনসমাবেশ


দীপশুভ্র সান্যাল: চিন্তন নিউজ:১০ই মার্চ:– জলপাইগুড়ি শহরের মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মীনাক্ষী মুখার্জির সভায় উপচে পরল মানুষের ঢল।

সংযুক্ত মোর্চার রাজগঞ্জ বিধানসভা ক্ষেত্রের সিপিআইএম প্রার্থী রতন কুমার রায়ের সমর্থনে রাজগঞ্জের কালিনগরে জনসভা ও বেলাকোবা শহরে প্রার্থী কে সাথে নিয়ে মিছিল শেষ করে ধুপগুড়ি তে সিপিআইএম প্রার্থীর সমর্থনে মিছিল করে। জলপাইগুড়ি বিধানসভার সংযুক্ত মোর্চার জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী ডক্টর সুখবিলাস বর্মার সমর্থনে সভা করলেন লড়াকু নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি। কানায় কানায় পূর্ণ মাদ্রাসা ময়দানে তিল ধারণের জায়গা ছিলনা মীনাক্ষীর সভায়, আশ পাশের বাড়ির ছাদের থেকে বহু মানুষ প্রত্যক্ষ পড়লেন লড়াকু নেত্রীর বক্তব্য। সভা শুরুর আগে থেকেই ভিড় জমান বহু মানুষ মাঠের আশে-পাশে সভা শুরুর পরে শহরের প্রাণকেন্দ্র ডিবিসি রোডের রাস্তা দখল নেয় জলপাইগুড়ির মানুষ। বাইরে থেকে কাউকে আনা হয়নি মানুষ এসেছেন প্রচারের সারা দিয়ে। মাদ্রাসা ময়দানে আজকের এই সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টি নেতা বিপুল সান্যাল ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সদর শাখার শিল্পীদের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সভার কাজ

সভায় নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন পুলিশের গুলিতে নিহত মানুষদের স্মরণে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করেন সভা শুনতে আসা মানুষেরা ও সংযুক্ত মোর্চার নেত্রীবৃন্দ। কমরেড মীনাক্ষী মুখার্জি কে পার্টি অফিস থেকে সভাস্থল পর্যন্ত ব্যারিকেড করে নিয়ে আসেন ছাত্র-যুব কর্মী বাহিনী। মীনাক্ষী সভাস্থলে ঢোকার পর থেকেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সভা শুনতে আসা মানুষের মধ্যে নন্দীগ্রামে কঠিন লড়াই লড়ে আশা নেত্রীকে একবার সামনে থেকে দেখতে। সভার শুরুতে ছাত্র-যুব মহিলা শিক্ষক সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের পক্ষ থেকে লড়াকু নেত্রীকে সম্বর্ধনা জানানো হয় সভায় মীনাক্ষী বলেন গত ১০ বছরে পশ্চিম বাংলার বুকে তৃণমূল কংগ্রেস যে নৈরাজ্যের শাষন জারি রেখেছে আসন্ন নির্বাচনে তার অবসান ঘটাতেই হবে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম তৃনমূল আর বিজেপির লড়াইটাকে বড় করে দেখাতে চাইছে টিভির স্ক্রীনের পর্দাটা কে দুটো ভাগ করে আর আমরা নবান্ন অভিযান থেকে শুরু করে কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক স্বার্থবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ধর্মঘট করে, লকডাউনে অসুবিধায় থাকা ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাড়িয়ে প্রতিদিন রাস্তায় থেকে সেই টিভির স্ক্রীনের জায়গাটাকে ছিনিয়ে নিয়েছি। তাই বিগত কিছুদিন ধরে সংবাদমাধ্যম আমাদের কেও জায়গা দিতে বাধ্য হচ্ছে। ওরা ধর্মের ভিত্তিতে সমাজটাকে ভাগ করতে চাইছে আর আমরা বলছি সমাজে দুটো ভাগ শোষক ও শোষিত ওরা শোষকের পক্ষে আমরা শোষিতের পক্ষে। ওরা নির্বাচনের আগে বলছে খেলা হবে আর আমরা বলছি সংযুক্ত মোর্চার সরকার গঠন করুন আপনাদের ঘরের ছেলে মেয়েদের চাকরি হবে। সংযুক্ত মোর্চা সরকার গঠন করলে এক বছরের মধ্যে সাড়ে ৫ লক্ষ সরকারি আধাসরকারি সমস্ত শূন্যপদে নিয়োগ হবে। তৃণমূল-বিজেপি দুটো রাজনৈতিক দল বিভেদের রাজনীতি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে আর আমরা লড়ছি শিক্ষা স্বাস্থ্য শ্রমিকের মজুরি আরও উন্নত করার দাবিতে। গত ১০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে আমাদের এমপি এমএলএ সংখ্যা কম থাকলেও আমরা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে কৃষক, চা বাগানের শ্রমিক, মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থে রুজি-রুটির লড়াইয়ে ছিলাম।
আর তাই নির্বাচনে ওরা আমাদের ভয় পাচ্ছে আর নির্বাচন কমিশন সর্বতোভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করতে পারছেনা তাই আজ প্রাণ গেল ৫ তরতাজা যুবকের। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মীনাক্ষী বলেন, আমরা চাই বিচার বিভাগীয় তদন্তের মধ্য দিয়ে সত্য সামনে আসুক কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালাতে বাধ্য হলেন। গত দুদিন চারদিন ধরে দুটো দলের নেতা-নেত্রীরা এই সমস্ত জায়গায় এসে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন তার ফলেই এই প্রাণহানি নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে, আর কোন মায়ের কোল যেন এই নির্বাচনে আর খালি না হয়।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংযুক্ত মোর্চার নেতা সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, প্রার্থী ডক্টর সুখবিলাস বর্মা। সিপিআইএম জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা থাকলেও আজ আমরা একত্রে সংযুক্ত মোর্চা আর এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। তাই আমরা সকলে একত্রে দুবারের বিধায়ক বিধানসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা, সরকারপক্ষের কাছে শিরদাঁড়া বিকিয়ে না দেওয়া ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত আইএএস জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রার্থী ডক্টর সুখবিলাস বর্মাকে হাত চিহ্নে গতবারের থেকেও বেশি ভোটে জয়যুক্ত করতে হবে এই প্রত্যয় নিয়েই আমরা আজকের এই সভা থেকে ফিরে যাব আর ফিরে গিয়ে সদর বিধানসভার প্রতিটি বুথে এই বার্তা তুলে ধরবো। সভার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে জাতীয় কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত।

কমরেড মীনাক্ষী মুখার্জির আজকের অসাধারণ বক্তব‍্যের একটা অংশ —
“আজকাল দু-একজন বিজেপির লোক এসে বলছে পশ্চিম বাংলার জন‍্য আমরা নতুন গাড়ি এনেছি।
আমরা বলছি কোথায় নতুন গাড়ি? এ তো সেই পুরনো গাড়ি। ওরা তখন বলছে না আমাদের ইঞ্জিনটা নতুন। আমরা বললাম কোথায় নতুন? ইঞ্জিনটা তো মুকুল রায়ের মতো দেখতে।

ওরা তখন বলছে – না আমাদের গাড়ির চেসিস টা নতুন। আমরা বললাম কোথায় নতুন? চেসিস টা তো অর্জুন সিং এর মতো দেখতে।

ওরা তখন বলছে – না আমাদের গাড়ির চাকা টা নতুন। আমরা তখন বললাম – যতই চকচক করুক ও চাকা তো শঙ্কুদেব পাণ্ডার মতো দেখতে!

ওরা তখন বলছে – আমাদের ড্রাইভারটা নতুন। আমরা তখন বললাম – হ‍্যাঁ, এটা ঠিক বলেছে। আগে আর.এস.এস তার এজেন্সি তৃণমূলকে দিয়ে গাড়ি চালাতো। এখন ও ড্রাইভার পুরনো হয়েছে তাই ওকে সরিয়ে দাড়ি ওয়ালা ড্রাইভার নিজে ড্রাইভারের সিটে বসতে চাইছে!”


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।