রাজ্য

ম্যানগ্রোভ ম্যান লড়ছেন সুন্দরবনের বাদাবন বাঁচাতে ::—


রত্না দাস:চিন্তন নিউজ:২৭শে মে:- সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে ১০ বছর ধরে লড়াই করছেন ভূগোলের শিক্ষক গোসাবার সাতজেলিয়া দ্বীপের চরঘেরির বাসিন্দা এই উমা শংকর মন্ডল। সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকার ঠিক পাশেই প্রত্যন্ত গ্রামে তিনি বড় হয়েছেন। সুন্দরবন বাঁচাতে ম্যানগ্রোভ যে অত‍্যন্ত জরুরী তা বুঝেছেন আয়লার সময় থেকেই।

কর্মসূত্রে তিনি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে থাকেন।তিনি একটি স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক এবং উনার স্ত্রীও শিক্ষিকা। কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও তিনি ভোলেননি নিজের গ্রামকে। সুন্দরবনের বাসিন্দা ও ভূগোলের ছাত্র হিসেবে বুঝেছিলেন এই বাদাবনের মানুষকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র ম্যানগ্রোভই। রাজ্যে যত ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে তার প্রথম ধাক্কা সামাল দিয়েছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। টাকার লোভে সেই ম্যানগ্রোভ চুরি করেছে চোরাকারবারীরা। ম্যানগ্রোভ কমে যাওয়ায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের বহু জনপদ।এই বিপদের কথা প্রথম টের পাওয়া গিয়েছিল আয়লার সময়। আয়লার পর সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঝড়ের হাত থেকে সুন্দরবনের মানুষকে বাঁচাতে নিজের উদ্যোগে ম্যানগ্রোভের চারা লাগানোর কাজ শুরু করেন তিনি।তাতে শামিল হয় এলাকার লোকজন ও স্কুল পড়ুয়ারা।

উমাশঙ্কর বলেন, ‘ আয়লার পর চরঘেরির আশেপাশে সুন্দরী, গরান,গেওয়া, বাইন প্রভৃতি ম্যানগ্রোভের চারা লাগানোর কাজ শুরু করি। নদীতে অনেক ম্যানগ্রোভের বীজ ভেসে আসে। গ্রামের মহিলারা সেই বীজ সংগ্রহ করে রাখে।সেই বীজ তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তারপর তা নদীর ধারে পুঁতে দেওয়া হয়। তা থেকেই ম্যানগ্রোভের চারা তৈরি হয়। এভাবে গত ১০ বছর ধরে প্রায ৬ লক্ষ চারা তৈরি করেছি।

উমাশঙ্কর জানান, গ্রামের লোকজন ছাড়াও এখন এই কাজে অনেক স্কুলপড়ুয়া ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ এর জন্য অর্থ সাহায্য করছেন।আয়লার সময় ম্যানগ্রোভ ছিলনা তাই বাঁধ ভেঙে গ্রামে নোনাজল ঢুকে গিয়েছিল। উম্ফূনের গতিবেগ বেশি হলেও ম্যানগ্রোভ থাকায় ততটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।বাঁধ হয়তো রক্ষা পেয়েছে এই ম্যানগ্রোভের জন্যই।

ম্যানগ্রোভ উম্পুনের তাণ্ডব থেকে অনেক গ্রামকে বাঁচিয়েছে । তবে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। ম্যানগ্রোভ রক্ষার লড়াইয়ের পাশাপাশি উম্পুনে সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে ক্রাউডফান্ডিং করেছেন উমাশঙ্কর। খোলা হয়েছে একাউন্ট ।সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই।কেউ পোশাক সংগ্রহ করেছেন কেউ আবার নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন।

বিশ্বভারতীর ভূগোলের অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, তিনি অনেকবার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে চরঘেরি গিয়েছেন। নিজের হাতে ম্যানগ্রোভের চারা পুঁতেছেন। উম্পুনে ওখানকার মানুষজন খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য উমাশংকর বাবু যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে যতটা পারা যায় সাহায্য করছেন।’ এছাড়াও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী তারাও সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ রক্ষার পাশাপাশি উমাশঙ্কর এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সুন্দরবনের গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের বই খাতা দিয়ে সাহায্য করছেন পাশাপাশি পোশাক ও টাকা সংগ্রহ করে তাদের পাঠাচ্ছেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।