সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ৯ মার্চ: আবার পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়াবে বিশাল দাঁতের মহা শক্তিধর প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথ, তাদের গর্জনে কাঁপবে পৃথিবী। না অ্যানিমেশন নয়, বাস্তবে এমনটাই সম্ভব বলে দাবি করেছেন রুশ ও জাপানী গবেষকরা। ম্যামথকে ফিরিয়ে আনার পথ তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। হাতির পূর্বপুরুষ হিসেবে পরিচিত ঘন ও বড় পশম ওয়ালা, বিশাল আকৃতির দাঁতের অধিকারী ম্যামথ প্রায় ১০ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
একসময় পৃথিবীতে রাজত্ব চালাতো বিশাল আকৃতির এই ম্যামথ হাতি। ইউরোপ, এশিয়া, উত্তর আমেরিকার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল ছিল এদের চারনভূমি। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায় এই প্রজাতি। গবেষকদের দাবি প্রাক ঐতিহাসিক হলেও এই প্রানীটি অক্ষর ও লিপি আবিষ্কার হওয়ার অনেক পর অবধি বেঁচে ছিল। শেষ তুষার যুগের আগে ইউরেশিয়া এবং উত্তর আমেরিকার বিস্তৃর্ণ তৃনভূমিতে ম্যামথদের বড় বড় দল ঘুরে বেড়াত। শেষ তুষার যুগের পরেও তাদের একটি দল সুমেরু সাগরের একটি দ্বীপে বেঁচে ছিল। দ্বীপটির নাম ব্যাঙ্কের আইল্যান্ড। আজ এটি রুশ মালিকানায়।
২০১০ সালে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার উত্তর পশ্চিম দিকের শহর “ইয়ামাল পেনিনসুলা” আর এই শহরেই খুঁজে পাওয়া গেছে প্রায় অক্ষত এক ম্যামথের বাচ্চার দেহ। রাশিয়া শীত প্রধান দেশ বলেই হয়তো অক্ষত রয়ে গিয়েছে ৩৯০০০ বছরের প্রাচীন ম্যামথের দেহ। এরপর এই দানব আকৃতির হাতিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালান গবেষকরা। জানতে পারা গেছে মৃত্যুর সময় ম্যামথটির বয়স ছিল ১০ বছর। বরফের মধ্যে সমাধিস্থ ম্যামথটি এতটাই অক্ষত ছিল যে এর পরিচয় বুঝতে কোন পরীক্ষা করতে হয়নি গবেষকদের। তাঁরা বলছেন এটি একটি স্ত্রী ম্যামথ। এর ওজন প্রায় পঞ্চাশ কেজি, দেখতে একটি বড় কুকুরের সমান। আর এই অক্ষত ম্যামথের দেহ গবেষকদের সামনে খুলে দেয় গবেষনার এক নতুন রাস্তা। প্রাণীটির দেহ নিয়ে শুরু হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা।
ইয়াকুটস্কের নর্থ ইস্ট ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন এই ফসিল থেকে তরল রক্ত পাওয়া গিয়েছে। কোন ফসিল থেকে তরল রক্ত পাওয়ার এটিই প্রথম দাবি। প্রচন্ড ঠান্ডায় বরফে জমে থাকার কারণে, রক্তের মধ্যে জীবিত কোষ পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। এরপর থেকেই রাশিয়া ও জাপানী গবেষকরা পুনরায় এই ম্যামথ হাতিকে ফিরিয়ে আনার পথ খোঁজার চেষ্টা শুরু করেন। “ইউকা” নামের ওই ম্যামথের পা থেকে কিছুটা হিমায়িত কোষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর গবেষকরা এগুলোকে কোষবিভাজনের প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ে যান। ২৮ হাজার বছর আগেকার ম্যামথ ইউকার কোষ কেন্দ্রগুলো ইঁদুরের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।
জাপানের কিনদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেই মিইয়ামোতো আন্তর্জাতিক এই গবেষক দলের সদস্য। তিনি জানিয়েছেন হাজার হাজার বছর ধরে হিমায়িত থাকা কোষগুলোর জৈব তৎপরতা শুরু করা সম্ভব হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। এই ঘটনায় ম্যামথদের ফিরে আসার পথ সুগম হবে বলে তিনি ইঙ্গিত করেছেন। তবে জৈব তৎপরতা শুরু হলেও এখনও কোষ বিভাজনের কাজ শুরু হয়নি। কোষ বিভাজন ঘটলেই ম্যামথকে ক্লোন করে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বিভাজনের উপযোগী কোষ খুঁজে পাওয়ার জন্য হিমায়িত ম্যামথের শরীর নিয়ে গভীর অনুসন্ধানে নেমেছেন গবেষকরা। হাজার হাজার বছর হিমায়িত থাকার পরও কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ম্যামথের এমন কোষ দরকার। এমন কোষের অনুসন্ধান করছেন গবেষকরা।
কিন্তু কথা হলো হঠাৎ এই দানবকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা কেন? পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য রাখতেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন গবেষকরা। প্রকৃতিকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ। গবেষকদের দাবি তুন্দ্রা অঞ্চলের পরিবেশকে রক্ষা করবে ম্যামথ। পরিবেশের উপর গ্রিনহাউস গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব কমাবে ম্যামথ। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে, সাইবেরিয়া অঞ্চলের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত কমাতে পারবে পৃথিবীর এই নতুন সদস্য। তাই হাতির পূর্বপূরুষকে ফিরিয়ে আনতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন পৃথিবীর তাবড় গবেষকরা।