বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ঘরে বসে ভেষজ আবির তৈরি, শেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:৪ঠা মার্চ:–ধূসর মরুময় এই দেশে আজ রঙের বড় অভাব! সর্বত্র মানুষে মানুষে স্বার্থ দ্বন্দ্ব। দাঙ্গা কবলিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে সমস্ত সম্ভাবনা কুঁড়িতেই বিনষ্ট। এই সময়ে সাময়িক হলেও একমাত্র রঙের উৎসবই পারে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলিয়ে প্রেমের জোয়ারে ভাসাতে! বাংলার প্রকৃতিতে রঙের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছেন ঋতুরাজ বসন্ত। বাংলার বসন্ত উৎসব বা ধর্মীয় দোলযাত্রা হোক কিম্বা বঙ্গ ছাড়িয়ে হোলি, যে নামেই হোক সারা দেশ জুড়ে উপস্থিত মহান রঙের মেলা! হোলি হো… বললেই লাল সবুজ হলুদ গোলাপি গুলাল ছড়িয়ে পরে মানুষের মনে।

কিন্তু বর্তমান বেনিয়া অর্থনীতি সব কিছুতেই কিছু মানুষের লোভ চরিতার্থ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য অর্থ ক্ষুন্ন করতে বদ্ধপরিকর। পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে রং ও আবীরকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চলে। আবার ঐ সমস্ত রাসায়নিক রং ব্যবহার করে আনন্দ করতে গিয়ে মানুষ নানান চর্ম রোগের শিকার হয়। এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ বিজ্ঞান ভিত্তিক ভাবে লো কসট্ এন্ড নো কসট্ সামগ্রী কাজে লাগিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জিত ভেষজ আবির তৈরি করে রঙের উৎসবকে আনন্দ মুখর করতে সচেষ্ট।

বৃহৎ ব্যবসায়িক মুনাফা নয়; এই সহজ পদ্ধতিতে আমরা ঘরে ঘরে ভেষজ আবির তৈরি করে নিজেদের রঙের প্রয়োজন টুকু মেটাতেই পারি। আর তো মাত্র কয়েক দিন! আসুন জেনে নি কিভাবে ভেষজ আবির তৈরি করে দরজা খুলেই পাশের বাড়ির বন্ধুকে তাক লাগিয়ে দিতে পারি! যেকোনো রঙিন ফুল, ফল, সবজি, বা ফলের বীজ ব্যবহার করে ভেষজ আবির তৈরি করা যেতে পারে। আসুন আমরা গাঁদা/ পলাশ ফুল দিয়ে প্রথম শুরু করি। উপকরণ– ১।গাঁদার পাপড়ি ১কেজি। ২।ট্যালকাম পাউডার এক কেজি (ওষুধের দোকান থেকে সুগন্ধ ছাড়া) অথবা এ গ্রেড স্টটোন ডাস্ট ৩।ফিটকিরি ৫০ গ্রাম ৪।অ্যারারুট পাউডার ২৫০ গ্রাম ৫।এসেন্স- লেমন ১ মিলি+ জেসমিন ৩/৪ মিলি ৬।পি এইচ পেপার (৭-৮ লেয়ার). ৭।গরম জল (৬০-৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বাসনপত্র– মিক্সি , বড় গামলা, হাতা, চামচ, কাঁচি, ছাঁকার জন্য পাতলা কাপড়, শুকানোর জন্য প্লাস্টিক।

পদ্ধতি– প্রথমে কাঁচি দিয়ে ফুলের রঙিন পাপড়ি/দল গুলি সবুজ বৃতি বা অন্য রঙের ডাঁটা বাদ দিয়ে কেটে আলাদা করতে হবে! এবার 70 ডিগ্রি গরমজল অল্প অল্প করে দিয়ে চটকে নরম করে নিয়ে মিক্সিতে দিয়ে রঙিন রস বার করে নিয়ে কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এদিকে ২৫০মিলি গরম জলে ৫০গ্রাম ফিটকিরি গুলে রেখে একটু একটু করে ঐ ফুলের রসে মেশাতে হবে আর পি এইচ পেপার দিয়ে রঙ পরীক্ষা করতে হবে। যখন তা ৫-৬ মাপের হয়ে যাবে তখন রঙ তৈরি।

এবার বড় গামলায় পাউডার+ অ্যারারুট মিশিয়ে রঙ জল দিয়ে জোরে জোরে ফ্যাটাতে হবে যাতে একটু ও বালবস্ না থাকে। থাকলে হাওয়া নিয়ে নেবে। এইভাবে মিশ্রণটি বেশ ঘন কাদার মত হলে প্লাস্টিকের উপর পাতলা করে ছড়িয়ে শুকাতে হবে। মনে রাখতে হবে চড়া রোদ বা জোর ফ্যানের হাওয়া চলবে না তাতে রঙ ফিকে হয়ে যাবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রা হালকা হাওয়া আর শুকনো আবহাওয়াতে মন্ডটি আবার রঙিন পাউডারের রূপ নেবে। শুকানোর সময় মাঝে মাঝে কেটে দিলে ভিতরের অংশ ও শুকিয়ে যাবে। এবার ঐ রঙিন পাউডার আরও মোলায়েম করতে শিল নোড়া বা মিক্সিতে পিষে নিতে হবে। একটু ও দানা যাতে না থাকে তারজন্য সিন্থেটিক কাপড় বা ময়দা চালুনি ব্যবহার করলে ভালো হয়। সব শেষে এসেন্স মিশিয়ে তাড়াতাড়ি প্যাকেট করুন। (এর সঙ্গে পাকা রাঁধুনির নিজস্ব বোধ আর মস্তিষ্ক যোগ করলেই কিস্তি মাত!!) ব্যাস্ আপনার তৈরি ভেষজ আবির দু হাতের মুঠো ভরে নিয়ে প্রিয়জনের মুখে মাখিয়ে আপন সৃষ্টি সুখের আনন্দে মেতে উঠুন। ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল/ লাগলো যে দোল!!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।