দেশ রাজ্য

জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবী—বামেদের


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২২শে মে:–লকডাউনে ঘরবন্দী মানুষের জীবনে গত বুধবার বিকেলে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় আমফান। হাওড়া, কলকাতা, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগণা মূলত লন্ডভন্ড হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছেন ৭৮ জন। অন্যান্য জেলাগুলিও কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।কত লক্ষ ঘরবাড়ি ভেঙেছে এখনও হিসেব নেই। বোরো ধান খুব সামান্য অংশই কাটা হয়েছিল, বাকি ধান সব জলের তলায়। সবজি, বাদাম, তিল চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হুগলির গাছের আম প্রায় সবই পড়ে গেছে, বিধ্বস্ত কলাবাগানগুলোও।

ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় গৃহহীন হয়ে স্থানীয় বিদ্যালয়ে বা ত্রাণশিবিরগুলোতে অশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু অভিযোগ প্রশাসন থাকার ব্যবস্থা করলেও খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি কোথাও। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোর সিংহভাগ বিদ্যুৎ বিহীন, পানীয় জলটুকুও মিলছে না। জল নামেনি সর্বত্র, অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে প্রশাসনের কাজ। রাস্তায় প্রচুর গাছ ও ইলেকট্রিক পোস্ট পড়ে, রাস্তা বন্ধ থাকায় যোগাযোগের ব্যবস্থা অপ্রতুল। টেলিকমিউনিকেশন অকেজো, সম্পূর্ণ তথ্যসংগ্ৰহ করাও অসম্ভব।

বামপন্থীরা আমফানকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সাহায্য যথাযথ পাওয়ার আশায়। না, এই বিপর্যয়কে ‘ম্যানমেড’ বলেননি কেউ। রাজ্যবাসীর স্বার্থকে অগ্ৰাধিকার দিয়ে ত্রাণ ও পুণর্গঠনে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কেন্দ্রের দেয় অংশ ছাড়াও অতিরিক্ত বরাদ্দের দাবি করেছেন। কিন্তু সমস্যা এখানেই, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সমুদ্র উপকূলের তিনটি জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেও কোথাও জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি তুললেন না। কেননা তাহলে টাকা খরচের ক্ষমতা পুরোপুরি সরকারের হাতে থাকবে না, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। বামপন্থীরা দলমত নির্বিশেষে সকলে একসাথে রাজ্যের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত, যেটা মাননীয়ার না পসন্দ!

তৃণমূল কংগ্রেস দল হিসেবে ত্রাণ দেয় না, ওদের কাছে দল আর সরকার সমার্থক। রেডক্রস, রামকৃষ্ণ মিশন, রোটারী ক্লাব, সি পি আই (এম) সহ অন্যান্য সংস্থা যে কোনো বিপর্যয়ে রাস্তায় নেমে ত্রাণ বিলি করে। কোনোদিন কেউ যেটা করেনা সেটা সবার আগে করে নাম কেনেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি, ত্রাণে “কে কী মিশিয়ে দেবে ” এই অজুহাতে ডিস্ট্রিবিউশন সরকারের হাতে রাখতে চান। আসল উদ্দেশ্য নাম কেনা আর ভোটের রাজনীতি করা। এত সঙ্কীর্ণ রাজনীতির তিনি পথিকৃৎ। এখানেও ‘এগিয়ে বাংলা’। আমফানে মৃতব্যক্তিদের পরিবার পিছু আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন কিন্তু সেটাও তিনি দেবেন হাতে করে। যাতে মনে হয় যেখানে যা কিছু সাহায্য সবকিছুই তিনি ব্যক্তিগতভাবে করছেন। অত্যন্ত নোংরা রাজনীতির ধারক বাহক এবং আমদানি করেছেন এই বাংলায়।

২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লায় মৃত্যু হয়েছিল ১৪০ জনের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৭০ লক্ষ পরিবার। কেন্দ্রীয় সরকারে থাকাকালীন তৎকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছিলেন বাংলায় সাহায্য, পুণর্বাসনে বরাদ্দ আটকাতে। বামপন্থীরা এখন রাজ্যেও ক্ষমতায় নেই, কেন্দ্রেও শক্তিহীন, ৭% ভোট পেয়ে তারাই আছে মানুষের পাশে, মানুষের প্রয়োজনে। দায়বদ্ধতা, মানবিকতা, নীতির সঙ্গে কোনরকম আপোষ না করে বামপন্থীরা চিরদিন একই রকম ছিল আছে আর থাকবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।