বিদেশ

বামপন্থা দেশে দেশে (৫)*


রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ: ১১ই নভেম্বর :-ব্রাজিলের বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা লুই ইনেসিও লুলা দ্য সিলভা , জনপ্রিয় নাম ‘ লুলা ‘ , ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি ছিলেন ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হন।তাঁর জয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলেই নিশ্চিত ছিল। কিন্তু এক নোংরা ষড়যন্ত্রে তাঁর বিরুদ্ধে(পড়ুন মিথ্যা) মামলা রুজু করা হয়। সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তাঁর প্রতিপক্ষ অতি দক্ষিণপন্থী দলের নেতা জাইরবোলসোরানো, সরকারি কৌশলিরা এবং স্বয়ং বিচারক মোরো। এই যোগসাজসে লুলা সহজেই অপরাধী সাব্যস্ত হন এবং তাঁর ১২ বৎসরের কারাদন্ড হয়। উক্ত জাইর
বোরসোলানো প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই
বিচারপতি সার্গিও মোরোকে তাঁর এইবিচারমন্ত্রী করেন। ষড়যন্ত্রেরব্যাপারটা জনগনের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় এবং বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়।এমনকি রাষ্ট্রপতি একটি জনসভায় স্বীকার করতে বাধ্য হন যে,বিচারপতি মোরো যদি তাঁকেসাহায্য না করতেন তবে তাঁরপক্ষে রাষ্ট্রপতির পদ লাভ সম্ভব ছিল না।এইভাবে ব্রাজিল দক্ষিণপন্থারদখলে যায়। কিন্তু ওয়ার্কার্স পার্টির লড়াই কখনোই থামে নি।এইসব ঘটনার সময়ে ব্রাজিলের আইনে বলা ছিল যে, প্রাথমিক শাস্তি ঘোষণার পরবর্তী আপীলে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তকে অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হবে এবং তার প্রাপ্য শাস্তি বলবৎ থাকবে। লুলা সেই অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করেন।কিন্তু সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বলে যে কোনো ব্যক্তি প্রথমে অপরাধী সাব্যস্ত হলেও আপীলের সমস্তগুলি পর্যায় অতিক্রম করার পরই মাত্র চূড়ান্ত ভাবে শাস্তিযোগ্য হতে পারবে। সুপ্রিমকোর্টে এইরূপ সিদ্ধান্তের ফলে লুলা সহ প্রায় পাঁচ হাজার বামপন্থী রাজনৈতিক বন্দীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। এইভাবে ব্রাজিলের বামপন্থী আন্দোলন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এবং প্রবল গতিতে নিজেদের সংগঠিত করে তুলতে শুরু করেছে।এক বিপুল জনসভায় লুলা সমস্ত অন্যায় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি দক্ষিণপন্থী দলের সঙ্গে বিচার প্রতিষ্ঠানের ষড়যন্ত্রের শিকার।বিরুদ্ধদল তাঁকে অন্যায়ভাবে
নিরস্ত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। তিনি বলেন,” আমি পালিয়ে যেতে পারতাম অথবা কোনো রাষ্ট্রের দ্যূতাবাসে আশ্রয় নিতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করি নি, কারণ আমাকে দেশবাসীর কাছে প্রমাণ করতেই হবে যে আমার দেশ এক দুষ্ট চক্রের কবলে পড়ে বিপন্ন এবং আমাকে এই
অবস্থান থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।লুলা ৫৮০ দিন কারাভোগের পর জামিনে ফিরেএসে আদৌ কাল বিলম্ব না করে তাঁর দলের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রকৃতপক্ষে ৮ই নভেম্বর তিনি জেল থেকে বেরিয়ে আসেন।৯ই নভেম্বর হাজার হাজার পার্টি সদস্য এবং সমর্থক  ইউনিয়নের সদরদপ্তরে তাঁকে অভিনন্দিত করে। পার্টি সদস্যরা সকলেই লাল পোশাকে সজ্জিত ছিল। তাঁদের হাতে ছিল ওয়ার্কার্স পার্টির নিশান।

লুলার জনপ্রিয়তা অবিসম্বাদী এবং সেটা তাঁর ক্ষমতাসীন থাকা কালে অর্জন করেছেন। তাঁর সময়েই ব্রাজিলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এক অভূতপূর্ব উন্নতি ছুঁয়েছিল।আয়ের বৈষম্য অনেকটাই দূরীভূত হয়েছে। ‘ ক্যাশ ট্রান্সফার স্কীম’ -এর সাহায্যে লক্ষ লক্ষ গরিব জনসাধারণের আর্থিক
উন্নতির ফলে তাঁরা দারিদ্র্য সীমা অতিক্রম করতে পেরেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে অকৃত্রিম ভাবে বামপন্থা অনুসরনের ফলেই।

রিও-ডি-জেনেরোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ আন্তর্জাতিক
সম্পর্কের’ অধ্যাপকের মন্তব্য এই সুত্রে প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেন, মুক্ত লুলা দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ-এর কাজে সক্রিয় থাকবে।তাঁর সুখ্যাত আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তার প্রভাব ও রাজনৈতিক বৈদগ্ধ বোলসোরানোর অতি- দক্ষিণ
পন্থার বিরোধী বামপন্থী শক্তিকে সঠিক নেতৃত্ব দেবে,কারন, লুলার আন্তর্জাতিক খ্যাতি বোলসোরানোর থেকে বহুগুণে এগিয়ে।

দক্ষিণ আমেরিকার রাজনীতি ক্ষেত্রে ব্রাজিলের গুরূত্ব ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।বর্তমানে এই মহাদেশের দিকে
দিকে যেভাবে বামপন্থী আন্দোলন জয়যুক্ত হয়েছে,
সেই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাজিলের অভিজ্ঞ বামপন্থী নেতা লুই ডি
সিলভার ( লুলার ) এই মুক্তি,চূড়ান্ত না হলেও , আইনী তথা
নৈতিক ক্ষেত্রে বামপন্থার জয় হিসাবে সঙ্গ্রামী জনসাধারণের যথেষ্ট উৎসাহের কারন হয়ে দাঁড়াবে। একথা নিশ্চিত যে সমস্ত বামপন্থী বিশ্ব আজ ব্রাজিলের দিকে তাকিয়ে আছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।