রাজ্য

ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাবেন,দৃঢ় অঙ্গীকার বামনেতাদের।



সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ২৭ জুন: “সব ঘরছাড়াদের ঘরে ফিরিয়ে আনবই” শহীদদের বাড়ীর উঠানে দাঁড়িয়ে আরও অনেক বাম কর্মী সংগঠন এর সামনে বললেন বাম নেতৃত্ব।

উঃ ২৪ পরগনার আমডাঙ্গার রইসগাছি গ্রামে কমরেড নাজিমুল করিমের পরিবার, পড়শি, সহযোদ্ধাদের উদ্দেশে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “আপনাদের কুর্নিশ জানাই। রাজনৈতিক এই কঠিন পরিস্থিতিতে আপনারা আমাদের পাশে আছেন। আপনাদের লাল সেলাম।” গ্রামবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন করেন বিমান বাবু। তিনি বলেন, “এটা শুধু এলাকা দখলের লড়াই নয়, বিজেপি ও তৃনমুল এই দুই অশুভ শক্তি মানুষকে বিভাজন করতে তৎপর। এরা বাংলাকে অশান্ত করতে চাইছে। ওদের মোকাবিলায় একজোট হয়ে থাকুন।” তিনি আরও বলেন যে পরিবার গুলি পাশাপাশি আছেন তারা নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ হন।” শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ে শামিল থাকার অনুরোধ জানান বিমান বাবু।

এই প্রচণ্ড গরমে আমডাঙ্গার রইসগাছিতে শহীদ নজিমুল করিমের বাড়ী যান বাম নেতৃত্ব। শহীদের মা মাসুদা বিবি কেঁদে চলেছেন ক্রমাগত। গভীর যন্ত্রনা নিয়ে বললেন, “অনেক দিন ছেলেটা ঘরছাড়া ছিল। তারপর সাহসে ভর করে ঘরে ফিরতেই খুন হয়ে গেল ছেলেটা।” শহীদের মা’র সাথে আরেকবার কেঁদে উঠল রইসগাছি। তৃনমুল নেতারা শাসিয়ে গেছে, “একটা খুন হয়েছে তাতেই এত কান্নাকাটি। এরপর তো ৭/৮ টা নেব।” এই কথা শুনে গ্রামবাসীরা বলেন, “যা হওয়ার হোক আমরা লড়াই এ থাকব।” বাম নেতৃত্ব বলেন, “শহীদ আমাদের সবচাইতে শ্রদ্ধার জায়গা। শহীদের পরিবারকে আমরা বুকে আগলে রক্ষা করব।” রইসগাছি গ্রামে এদিন বিমান বসুর সাথে ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম ও অন্যান্য জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব।

শহীদের ছোট্ট ৬ বছরের ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে মিশ্র বলেন, “নাজিমুল করিমের হত্যাকারীদের শাস্তির জন্য যেমন খোলা রাস্তাতে থাকব তেমন আদালতেও থাকব।” সেলিম বলেন যে দুঃখ-যন্ত্রনা বাড়ানোর জন্য সেখানে যাননি। নাজিমুল এর হত্যাকারীরা শেষ অবধি যাতে শাস্তি পায় তার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তারা জানান নাজিমুলের ছেলের পড়াশুনো সহ সব খরচ করবে পার্টী।

সন্তান হারানো বাবা মুজফফর জানান যে, খুনিরা খোলা রাস্তাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই আমডাঙ্গায় ৪৯ জন কর্মী মিথ্যা মামলাতে জেল খেটেছেন প্রায় সাড়ে নয় মাস। সবে মাত্র ২২ জনের জামিন হয়েছে। তাও এখনো আমেদ আলিকে ঘরে ফেরানো যায় নি। তারা জানান পুলিশ তো বটেই ব্লক আধিকারিক পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছেন কর্মীদের জেলে ঢোকাতে। খুন সন্ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে এবং চালাতে চায় এই তৃনমুল সরকার। এমন জঙ্গলের রাজত্ব চলছে যে, তৃনমুলের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাবে আর বাম কর্মীর বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারবে না। ৭০ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধকেও মিথ্যা মামলায় ৯ মাস জেল খাটতে হয়েছে।

নাজিমুলের দাদু সকের আলি জানান সত্তরের দশকেই এই আম আমডাঙ্গাতে কমিউনিস্ট পার্টী সংগঠন জোরদার হয়। নাজিমুলের স্ত্রী শিউলি বিবি জানান নাজিমুল খুনের পর থেকেই দুষ্কৃতিরা সমানে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এমন অদ্ভুত ব্যাপার পুলিশ কিছুতেই এদের ধরছে না। উঠানে দাঁড়িয়ে বিধায়ক ইমরান রামজ বলেন রাজ্য যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তবে পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করুন। যদি দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করতে না পারে তবে তারাও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তাতে থাকবেন।

গ্রাম থেকে বেরোবার মুখে পার্টী নেতারা দেখেন যে পার্টী সংগঠক নজরুল ইসলামের বাড়ী, যা তৃনমুলীরা পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিয়েছে। আক্রান্ত এই রাজনীতিকের জমি আরও একবার জানান দিল লাল ঝান্ডার রঙ ফিকে হবার নয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।