সৌম্যদ্যুতি ভৌমিক-চিন্তন নিউজ:৪ঠা জুলাই:– ‘কোনটা ভুলে কোনটা চিনবে, দেশ বেচে রাজদণ্ড কিনবে, সেই আনন্দে থাকো’ … নব্বইয়ের দশকে সুমন চট্টোপাধ্যায়ের লেখা গানের লাইন আজ যেন প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে প্রখর বাস্তব। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ভারতবর্ষ এই প্রথম একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন যাঁর শাসনকালে কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় সংস্থা তৈরী হয়নি উল্টে দেশের সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে দেওয়ার তালিকা ক্রমশ: দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে । ‘নোট বন্দী’ থেকে সাধারণ ভারতবাসীর উপরে যে আক্রমণ শুরু হয়েছে আজ কয়লা খাদান, লোকাল ট্রেন বিক্রির সিদ্ধান্তে এসে তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে । এখন আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পরবর্তী সময় দেশের জাতীয় পতাকাটা থাকবে নাকি সেটাও বিক্রি করে দেবেন এই রাষ্ট্রীয় চৌকিদার এবং তার সরকার ।
আর. এস. এস. বা বিজেপি কোনোদিনই ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলো না । আজ তাই নির্বাচিত সরকার গঠন করে ভারতবর্ষ এবং ভারতবাসীর পক্ষে কোনো হিতকর সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন না । তাই নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমণের ক্ষেত্রে যেমন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি এবং শ্রমিক বিরোধী আইন এনে কর্মহীন ও দিশাহীন শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারে নিয়ে আসার এক নিখুঁত পরিকল্পনা করছে এই সরকার । আন্তর্জাতিক মহান মে দিবসের ইতিহাস মুছে দিয়ে পুঁজিবাদের দালালি করতে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা অতুলনীয় ।
এই বর্বর এবং দেশ বিরোধী স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের মানব বিরোধী নীতির প্রতিবাদের হাওড়া বঙ্গবাসীতে বাম এবং কংগ্রেসের মিলিত প্রতিবাদ দিবস পালিত হয় । সমস্ত বাম শ্রমিক সংগঠন এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও ছাত্র, যুব, মহিলা এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এই প্রতিবাদ দিবসে ।
তবে বিশেষভাবে লক্ষণীয় রাজ্যের শাসক দলের কোনো শ্রমিক ইউনিয়ন এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেননি । আসলে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিদিন পরিষ্কার হয়ে উঠছে ‘দুই হাতে দুটি লাড্ডু’র গল্প । যতই বাইরে লোক দেখানো কুস্তি চলুক, ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে যে ভিতরের দারুণ দস্তি চলছে তা প্রতিদিন প্রমাণ হচ্ছে । তাই তো বিজেপির আসামীকে বাঁচাতে তৃণমুলের বিক্ষোভ চলে কিংবা কয়লা খাদানে ধর্মঘট ভাঙার জন্য রাজ্য সরকার সক্রিয় হয়ে ওঠে ।
হাওড়া বঙ্গবাসীতে অবস্থিত প্রতিবাদ দিবস কর্মসূচীতে বিভিন্ন বক্তার ভাষণ তাই বারংবার দেশ ও মানবতা বিরোধী এই দুই সরকারের নীতি হীনতা এবং অপশাসন নিয়ে মুখরিত হয়েছে। আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে আজকের ভারতবর্ষ এবং বাংলাকে বাঁচাতে গেলে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটা স্বাধীন দেশের নাগরিকত্ব দিতে গেলে এই দুই সরকারের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী আন্দোলন সংগ্রাম পথ বেছে নিতে হবে ।
প্রশাসন যখন দুর্বৃত্ত ও ক্ষমতা লোভীদের দখলে চলে যায় তখন প্রতিবাদ প্রতিরোধ হয়ে ওঠে আম জনতার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের একমাত্র হাতিয়ার । এই রাজ্যে সরকারের নামে চোর লুম্পেনদের লুঠতরাজ চলছে । হাওড়া বাগনান সহ গোটা রাজ্যে নারী নির্যাতন সংখ্যা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এই অপশাসনের চালচিত্রকে । মহামারী ও আম্ফান মোকাবিলায় ব্যর্থ রাজ্য সরকার চাল আর ত্রিপল চুরিতে ব্যস্ত । সেই সরকারের শেষ নিশ্বাস পরিত্যাগ হয়ে গিয়েছে । এখন শুধু মুখাগ্নি বাকি ।
আজকের বাস্তবতা এই যে, ভবিষ্যতে ভারতবর্ষ ভারতবাসীদের থাকবে কিনা সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন । যে সরকার জানুয়ারি মাসে মহামারীর সম্ভাবনার সংবাদ পেয়ে ট্রাম্প উৎসব এবং মধ্যপ্রদেশের সরকার কেনার জন্য গোটা দেশবাসীকে মহামারীর মধ্যে ফেলে দিতে পারে । যে সরকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর প্রথমে বন্ধ না করে প্রতিটি দেশবাসীকে করোনা আতঙ্কে ভক্তভুগি করতে পারে । যে সরকার, ভিনরাজ্যে অবস্থিত শ্রমিক বা কর্মচারীদের কথা চিন্তা না করে মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রেনি ডে’র ছুটি ঘোষণার ন্যায় লক ডাউন ঘোষণা করে সমস্ত জনজীবনকে বিপদে ফেলে দিতে পারে তারা আর যাইহোক দেশ ও দেশবাসীর কথা ভাবেন না । হাওড়া বঙ্গবাসীতে মুখরিত স্লোগানে বারবার ধ্বনিত হচ্ছিল দুই দেশ বিরোধী সরকারের সমস্ত নীতি হীনতার কথা । প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর যেন মহাভারতের সেই কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বর্তমানকে । ‘দেশ রাজার জন্য নাকি রাজা দেশের জন্য ?’
গোটা মহামারী ও দুর্যোগের সময় বামপন্থীরা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জীবনধারণের লড়াইয়ে সামিল হওয়ার প্রচেষ্টা করেছে আজও দুর্নীতি ও পুঁজিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পথে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদের মাধ্যমে মানুষের অর্জিত অধিকার শাসকের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার লড়াইয়েও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে । ভারতের জাতীয় কংগ্রেসেও দেশ ও রাজ্যের এই চরম সংকটের মিলিত হয়ে মানুষের পাশের দাঁড়ানর প্রচেষ্টায় ব্রতী হয়েছে । সারা দেশের শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে লড়াইয়ের অঙ্গীকার হাওড়া বঙ্গবাসীতে অবস্থিত প্রতিবাদ দিবসে আগত জমায়েতে ফুটে উঠেছে ।