সুমন মাল, চিন্তন নিউজ, ১৮ জানুয়ারি: রাজ্য জুড়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে দুর্নীতির ভুড়ি ভূড়ি অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ তুলছে প্যানেলে নাম থাকা পরীক্ষার্থীদের একাংশ। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন জমা নেওয়া হয়। আবেদন জমা পড়ে কয়েক লক্ষ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লিখিত পরীক্ষা হয় এবং জুন মাসে ফল প্রকাশিত হয়। আগস্ট মাসে ইন্টারভিউ হওয়ার পর ৬ নভেম্বর কমিশনের তরফে প্যানেল ও ওয়েটিং লিস্ট তৈরি করা হয়।
নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয় অনেকগুলি। শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১৯ সালের জুন মাসে মেরিট লিস্ট প্রকাশ করে কমিশন। সেখানেও বিস্তর অনিয়ম ধরা পড়ে। দেখা যায়, যার ওয়েটিং ১৭১ ছিল সে সেখানেই আছে, ওয়েটিং কমেনি। কারো কারো আবার ওয়েটিং বেড়ে গেছে। যে ৪ ওয়েটিং ছিল সে ৬ হয়ে গেছে। আবার যার ২৬ ছিল, সে ২৮ হয়ে গেছে।
এদিকে ওয়েটিং লিস্ট থেকে চার দফায় বেশ কিছু নিয়োগও হয়েছে। শেষ দফায় নিয়োগ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ২০১৯ এর জানুয়ারিতে কমিশনের তরফে জানানো হয় ১০৮টি পিওন ও ৪৪টি ক্লার্ক পদের জন্য লোক পাওয়া যায়নি। অথচ প্রায় হাজার পাঁচেক চাকরিপ্রার্থী ওয়েটিংয়ে রয়েছে। শেষে গত সেপ্টেম্বরে কমিশনের চেয়ারম্যান বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান যে, ৪ মে পিওন পদের এবং ১৮ মে ক্লার্ক পদের প্যানেল ও ওয়েটিং লিস্টের বৈধতা শেষ হয়ে গেছে।
প্যানেলের বৈধতা শেষ হলেও নিয়োগ কিন্তু শেষ হয়নি। বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থীর তরফে বাঁকুড়ার একটি স্কুলে তথ্য জানার আইনে আবেদন করা হয়েছিল। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তাদের স্কুলে একজন চাকরিতে যোগ দেন। প্যানেলে নাম থাকা এরকমই এক চারিপ্রার্থী জানান যে তথ্য জানার অধিকার আইনে তারা এরকম নিয়ম বহির্ভুত নিয়োগ সম্পর্কে আরো তথ্য সামনে আনবেন।
তাদের বক্তব্য, প্যানেলের বৈধতা শেষ হওয়ার পরেও যদি নিয়োগ হয় তবে সেই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে। এরকমই এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, “২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়োগ এখনো চলছে। অথচ ওরাও আমাদের মতই স্কুল সার্ভিস কমিশনের অংশ। আমরা পিওন বলেই বঞ্চিত হচ্ছি আজ।”
এই সমস্ত বিষয় জানিয়ে তারা মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল এবং বিধায়কদের চিঠি পাঠিয়েছেন। তাদের আশা ছিল এতে হয়ত তাদের কিছু একটা সুরাহা হবে। কিন্তু কারো কাছে কোনো উত্তর না পেয়ে তারা দৃশ্যতই হতাশ। তবে কি ওয়েটিং লিস্টে পিছনের দিকে থাকা বা লিস্টে না থাকা কেউ কি পেয়ে গেছেন চাকরি? এই প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে তাদের মনেও।