সন্দীপন দত্ত, বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ১৮/০৩/২০২৪— ২০২৩ সালের মে মাস থেকে ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্য মনিপুরে চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলা চলছে। এই পরিস্থিতি পরবর্তী কালে এত খারাপ হয়ে যায় যে সমগ্র মনিপুরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে ।মূলত মেইতি আর কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সমস্যা হলেও এর মধ্যে জড়িত ছিল কিছু কর্পোরেটের স্বার্থ। আদিবাসী মানুষ নিজের ঐতিহ্যময় জীবন এবং রীতিনীতি নিয়ে খুশি থাকতে চায়। কিন্তু আমাদের দেশে মনিপুর বলে নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানি ও কর্পোরেটের হাতে সরকার বেচে দেয় সাধারন গরীব আদিবাসীদের জল জঙ্গল মাটি। এর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ ২০০৪ সালের বক্সওয়াহা তে হীরের খনি খননের চেষ্টা। তৎকালীন সরকার এই সুবিশাল এলাকার বিশাল অঞ্চলে হীরের খনি থেকে হীরে খননের জন্য RioTinto নামক এক কোম্পানিকে সুযোগ করে দেয়। সেইসময় বিখ্যাত পরিবেশবাদী, বন্য প্রানী অধিকার কর্মী শেহলা মাসুদ এর আন্দোলনের চাপে বেঁচে যায় প্রায় পাঁচ লক্ষ গাছ । তারপর আর সরকার সেই প্রজেক্ট এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। পরবর্তীতে শেহলার রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু ঘটে এবং সন্দেহ যায় কিছু রাজনৈতিক কর্মী ও এই RioTinto কোম্পানির ওপরে।এছাড়াও উত্তর কাশি, যোসীমঠ, হাসদেব সহ বিভিন্ন অঞ্চলে
ভারতের প্রশাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছে কিছু কর্পোরেটের স্বার্থে দেশের সম্পদ বেচে দেওয়ার ক্ষেত্রে। তার মধ্যেই অন্যতম হল লাদাখ। প্রায় এক বছর ধরে চলে আসছে এই আন্দোলন। ৩৭০ তুলে দেওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখ আলাদা করা হয়। লাদাখ ২০১৯ এর পর একটি union territory ।কিন্তু কাশ্মীরের মত লাদাখের কোনো বিধানসভা নেই। পার্লামেন্টে সিট আছে মাত্র একটা, সেটাই মনোনীত। এর ফলে লাদাখের মানুষের কাছে নির্বাচিত করার মত কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। এই নিয়ে ২০২৩ সালে বিখ্যাত উদ্ভাবক ও শিক্ষাবিদ সোনাম ওয়াংচুক (এনার ওপর ভিত্তি করে বিখ্যাত সিনেমা 3idiots এর ফুউংশু ওয়াংরু চরিত্র টি গড়ে উঠেছে) লাদাখের রাজধানী লেহ তে প্রচুর জনসমর্থন নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পরে তাকে আশ্বস্ত করে থামানো গেলেও ভারত সরকার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই করেনি। তাই তিনি আবার প্রায় ৩০,০০০ মানুষ(লাদাখের গোটা জনসংখ্যার প্রায় ১০%) নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাতেও কোনো ফলাফল না পেয়ে তিনি ২১ দিনের আমরণ অনশন গ্রহণ করেছেন। এবং এখনো অবধি প্রায় ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও ভারত সরকারের কোনো হেলদোল নেই।
লাদাখের সাধারন মানুষ ওয়াংচুকের নেতৃত্বে ভারত সরকারের কাছে কয়েকটি দাবী রেখেছে যেমন-
তাদের পার্লামেন্টে একটার জায়গায় দুটো করে এমপি হোক।৩৭০ হটানোর আগে লাদাখ থেকে কাশ্মীর বিধানসভায় ২ টো বিধায়ক আসন ছিল কিন্তু এখন তাদের কোনো বিধানসভা নেয়।
লাদাখের আদিবাসীদের সংবিধানের 6th schedule এর আওতায় আনা হোক। যার মাধ্যমে তাদের স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিল থাকে এবং তারা তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। লাদাখের জনসংখ্যার অধিকাংশ মানুষ তপশিলী জাতির।
লাদাখকে কাশ্মীরের territory না বানিয়ে একটা গোটা রাজ্য বানানো হোক।
বিজেপি সরকার লাদাখকে 6th schedule এর অন্তর্ভুক্ত করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু ৩ মার্চ থেকে লাগাতার অনশনের পরও ভারত সরকারের লাদাখ নিয়ে কোনো ভ্রক্ষেপ নেই। এমনকী নিউজ চ্যানেল বা মিডিয়াতেও কোনো খবর নেই। উপরন্তু অনশন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারি মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
লাদাখের মানুষের ভয় তারা যদি সিক্সথ্ সিডিউল (6th schedule) এর অন্তর্ভুক্ত না হয় তবে ভারত সরকার কোম্পানি ও কর্পোরেটের হাতে তুলে দেবে লাদাখকে। লাদাখের মাটি অত্যন্ত খনিজ সমৃদ্ধ এবং সংবেদনশীল। ক্লাইমেট চেঞ্জের ফলে গোটা পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়েছে। ফলে লাদাখের বরফ গলেছে। এই পরিস্থিতিতে যদি অনিয়ন্ত্রিত খনিজ খনন করা হয় তবে বিশেষজ্ঞ দের মতে লাদাখে চূড়ান্ত প্রাকৃতিক অবক্ষয় দেখা দেবে। যার ফলে খালি লাদাখের নয় গোটা বিশ্বের আবহাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।