দেশ

হাসি মুখে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়েছিলেন চন্দননগরের কানাইলাল দত্ত


সূপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:১ লা সেপ্টেম্বর,২০২০:- ১৯০৮ সাল, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জোয়ারে ভাসছে আপামর বাঙালি। যে কোন মূল্যে বিদেশি শাসন থেকে মুক্ত করতে হবে ভারতবর্ষকে। একে একে বহু বিপ্লবীর হয় আজীবন কারাবাস , ফাঁসি বা দ্বীপান্তর হচ্ছে। তবূ অকুতোভয় ভারত মায়ের সন্তানরা। যেকোনো মূল্যে স্বাধীনতা চাই। এইরকম এক নির্ভিক স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন হুগলি জেলার চন্দননগরের কানাইলাল দত্ত।

১৮৮৮ সালে চন্দননগরের দত্ত পরিবারে জন্ম। হুগলি জেলার মহসিন কলেজে পড়াশোনা করেন। তাঁর অধ্যাপক ছিলেন জ্যোতিষ চন্দ্র ঘোষ। এরপর তাঁর আলাপ হয় চারুচন্দ্র রায়ের সঙ্গে। রক্তে যার দেশমাতৃকার প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা তিনি কি আর বসে থাকতে পারেন।। চলে এলেন কলকাতায়।

১৯০৮ সালে কিংসফোর্ড হত্যা ও মানিকতলা বোমা মামলায় তিনি বন্দী হলেন।। তাঁর সঙ্গে বন্দী হলেন অরবিন্দ ঘোষ, সত্যেন্দ্রনাথ বোস সহ আরও বহু বিপ্লবী। মামলা শুরু হল কিন্তু সব জায়গায় কিছু ভীতু অসৎ লোক থাকে। এরকম একজন নরেন গোসাই ।হয়ে গেলেন রাজসাক্ষী। বিপ্লবীরা মনস্থির করলেন বিশ্বাসঘাতক নরেন গোসাই কে হত্যা করা হবে। দায়িত্ব নিলেন কানাইলাল ও সত্যেন বোস। ৩১ শেষ আগষ্ট জেল হাসপাতালের মধ্যে পুলিশ এর সামনে দুই বিপ্লবী মিলে নরেন গোসাই কে হত্যা করলেন।এই খুনের মামলায় দুই বিপ্লবী কেই মৃত্যু দন্ডের আদেশ দেওয়া হলো।

কানাইলাল দত্তের এক বিশেষ গুন ছিল তাঁর সদাহাস্যময় মুখ। ফাঁসির আগে পর্যন্ত যতদিন তিনি কারাগারে ছিলেন কোনদিন কেউ তাঁর মুখ হাসি ছাড়া দেখেনি। এক ওয়ার্ডার তাঁর এই হাসিভরা মুখ নিয়ে কিছু বিদ্রুপ করেছিলেন তবু তিনি ফাঁসির মূহূর্ত পর্যন্ত হাসিমুখে ছিলেন।। ফাঁসির দিন ফাঁসি মঞ্চে উঠে মুখ কালো কাপড়ে ঢাকতে অস্বীকার করেন। ফাঁসি হল কালো কাপড়ে মুখ না ঢেকেই। তাঁর মৃত্যুর পর কারাগারের বাইরে ভীড় জমে গিয়েছিল।। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তার দাহকার্য সম্পন্ন করা হয়।শোনা যায় তাঁর চিতাভস্ম নিলামে উঠে। কেউ কেউ ওই ভস্ম অর্থের বিনিময়ে কিনতে চেয়েছিলেন। এই ভাবেই এই মহান বিপ্লবী আপামর ভারতবাসী তথা হুগলি জেলার প্রতিটি মানুষের মনের মনিকোঠায় রয়ে গেছেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।