রাজ্য

অজয়ের স্রোতে ভেঙ্গে গেল ফেরীঘাট।


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:১২ই জুলাই :-
পশ্চিমবঙ্গের নদনদীর নাম বলতে প্রথমেই মনে আসে ময়ূরাক্ষী অজয় আর দামোদরের। বিশেষ করে বাংলার দুটি বিশেষ জেলা বর্ধমান এবং বীরভূমকে যেমন বিভক্ত করেছে অজয় নদ তেমনি আবার দুই জেলাকে বেঁধেও রেখেছে এই অজয়। বর্তমান পশ্চিমবর্ধমান জেলার সঙ্গে বীরভূমের সংযোগের প্রধান স্থলপথ যেমন অজয় নদীর সেতুপথ তেমনি প্রধান জলপথ ও হলো অজয়ের জয়দেব ফেরিঘাট। অজয়ের উপর নির্মিত সেতুটি দিয়ে দুর্গাপুর বা আসানসোল থেকে বীরভূমের প্রায় 20-30 কিমি দূরত্ব কম হয়। কিন্তু প্রতি বছরই বর্ষার সময় এই পুরোনো সেতুটি বিপজ্জনক হয়ে যায় । তখন পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমের অজয় তীরবর্তী প্রায় ৫০ টি গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে অজয়ের জয়দেব ফেরিঘাট। অথচ এবার মাত্র কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতেই ভেসে গেল সেই জয়দেব ফেরিঘাট । ফলে চরম বিপাকে দুই জেলার মানুষ। একদিকে সেতুপথ ভেঙে গেছে অপর দিকে ফেরিঘাট ও ভেসে যাওয়ায় দুই জেলার যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন।
গতকাল স্থানীয় হিংলা বাঁধ থেকে জল ছাড়ার জন্য অতিরিক্ত জলের চাপে জয়দেব ফেরিঘাট টি ভেসে গেলে এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের বক্তব্য, গত 2016 সালে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অজয় নদের সেতু পাকাপোক্ত ভাবে তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তিন তিনটি বর্ষা কেটে গেল কিন্তু কাজ শুরুই হলো না! এমন কি বারবার বীরভূম প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনো ফল হয় নি। এ বছর এখনও তেমন ভারি বর্ষণ না হতেই মাত্র কয়েকদিনের বৃষ্টি তেই এই দুর্দশা। আবার মালবাজারের লীস নদীবাঁধ ভেঙে পড়ায় মালবাজার মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকেছে, এমনকি পানীয় জলের কুয়ো ভেঙে গেছে। চাষের জমি ও প্লাবিত। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ বাগারকোট পঞ্চায়েত অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করে সেতু সারাই করার কারনেই প্রতি বছরই বর্ষাতে সেতুর এই বেহাল দশা হয়। এবার আবার ভারি বৃষ্টির আগেই প্রায় ১০০ মিটার নদী বাঁধ ভেঙে পড়ায় গ্রামের ভিতর দিয়ে নদীর জল বয়ে যাচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে বাড়ীঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এই আতঙ্কে গ্রামের পর গ্রাম দিনরাত এক করে কাটাচ্ছে। এলাকারই এক পঞ্চায়েত সদস্য জানালেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে পঞ্চায়েতকে বাঁধ মেরামত ও সেতু সংস্কারের আর্জি জানান। কিন্তু বাগরাকোট পঞ্চায়েত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বীরভূমের অজয় নদ এবং ঐতিহ্যশালী জয়দেব সেতু তথা ফেরিঘাট নিছকই সরকারের অবহেলার শিকার। সঠিক আধুনিক নির্মান পদ্ধতি গ্রহণ, উপযুক্ত সময়ে বাঁধ গুলি মেরামতির ব্যবস্থা না করা, উপরন্তু অতিরিক্ত জল ছাড়ার জন্যই অজয় তীরবর্তী মানুষদের বছর বছর অজয় প্লাবনের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা। এবার বর্ষার সূচনা তেই গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ গুলি নিশ্চিত আশ্রয় হীন। যোগাযোগের কোনো উপায় না হলে পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকের কাজ করতে আসা মানুষ গুলির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়বে। মনুষ্যকৃত এই বন্যার কবল থেকে এই অঞ্চলের মানুষের পরিত্রাণের উপায় করতে পারে একমাত্র সরকার। এখন দেখা যাক বর্তমান রাজ্য প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।