মীরা দাস, চিন্তন নিউজ, ১৮ সেপ্টেম্বর: এই পুজোর আগে আপনি আপনার প্রিয়জন বা প্রিয় ব্যাক্তিকে একটি বিশেষ চমকপ্রদ খাবারের উপহার কি দিতে চান? এক কেজি থেকে তিন কেজি ওজনের এক একটি জিলিপি কোথাও দেখেছেন কি আপনি, যা সাইকেলের চাকার মতো সাইজের? ভূ ভারতের কোথাও এখানকার মতো বড় ও সুস্বাদু জিলিপি” আর পাবেন না। হ্যাঁ….!! তা শুনে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি!
তা নিজের চোখে দেখতে হলে তাহলে এবার আপনাকে আসতেই হবে বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত এক প্রত্যন্ত গ্রাম, যার নাম- কেঞ্জাকুড়া। ভোজন রসিক হিসেবে বাঙালীর সুখ্যাতি কারো অজানা নয় !! আর সেই ভোজন খাদ্যর নাম মিষ্টি হলে তো কোনো কথাই নেই। তাও আবার যে সে মিষ্টি নয়, জিলিপি !! যা একটির সাইজ দেখলে মাথা ঘুরে যাওয়া টাই স্বাভাবিক। জিলিপি একটি বিদেশী শব্দ যেটা পার্সি ভাষা থেকে সংগৃহীত। কেউ বলে জিলিপি” আবার কেউ বা বলে ঝিলাপি !
প্রতি বছর ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে রাঢ় বঙ্গে ভাদুপুজা হয়। আর সেই পুজাকে কেন্দ্র করেই কেঞ্জাকুড়া গ্রামে বসে জিলিপির মেলা। বাঁকুড়া ছাপিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন একদিনের এই জিলিপি মেলায়। এই সময় এখানে প্রতিটা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে এই জিলিপি তৈরি হয়। এই মেলায় প্রধান আকর্ষণ হলো জিলিপির সাইজ! এমনকি কে কতো বড় সাইজের জিলিপি করতে পারেন তা নিয়ে কারিগরদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এটি স্বাভাবিক ভাবে জিভে জল আনা, গরম মুচমুচে স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়।
এখানকার মানুষের এই দিনটিতে নিজেদের প্রিয়জনদের কাছে জিলিপি পৌঁছানোর বিশেষ রীতি রয়েছে। এত বড় বৃহদাকার জিলিপি বাঁশের গোল চাঁচ এবং শুকনো শালপাতা ও পেপার দিয়ে মুড়ে একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে প্যাকেটিং করা হয়। এই সময়টা শরৎকালের অনুভূতি থাকে !! চারিদিকে সাদা কাশ ফুল ও বাতাসে শিউলী ফুলের গন্ধে পুজোর একটা সাজো সাজো ভাব থাকে।
এই কেঞ্জাকুড়ার মাটিতেই জন্মেছেন বর্তমানে বাঁকুড়ার একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক কবি ধীরেন্দ্রনাথ কর। ওনার কথা অনুসারে জানা যায় যে বিগত আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর ও তারও বেশি আগে, কেঞ্জাকুড়ার পাশের হানুলিয়া নামে এক ছোট্ট গ্রামের মদন দত্ত নামে এক দক্ষ মিষ্টির কারিগর সেই সময় চিনি দিয়ে একটি বিশেষ দরজার গেট বানিয়ে কেঞ্জাকুড়ার মানুষকে চমক দেখিয়ে ছিলেন। এরপর তার কিছুদিন পরেই তিনি উৎসাহিত হয়ে প্রায় তিন কেজির সাইজের একটা বৃহদাকার জিলিপি তৈরী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
এরপর তাকে অনুসরণ করে এখানে সমস্ত মিষ্টান্ন ভাণ্ডারেই এই জিলিপি তৈরি হয়। তারপর থেকেই এই কেঞ্জাকুড়ার জিলিপি বিখ্যাত হয়ে উঠে। সেই সময় এখানে এটি প্রথম বিক্রি হয় দুখুঁ ভঞ্জন দত্তের মিষ্টির দোকানে। যা পরবর্তীকালে দত্ত মিষ্টান্ন ভাণ্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে এই দোকানের মালিক অশোক দত্ত। এই জিলিপি কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। ক্রেতার যেমন সাইজের জিলিপির প্রয়োজন হয়, অর্ডার করলেই তা অতি সহজেই পাওয়া যায়। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে এখানে প্রচুর জিলিপি বিক্রি হয়। আবার এই দিনটিতে ভাদুপূজা। ধীরে ধীরে এই মেলা এখানকার মানুষের খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।