নিউজডেস্ক, চিন্তন নিউজ, ২৭শে সেপ্টেম্বর: ‘বিদ্যাসাগর ২০০’, অর্থাৎ আজ তিনি বেঁচে থাকলে ২০০ বছর বয়সে তিনি পদার্পন করতেন। আজও তাঁর কথা শ্রদ্ধায় স্মরন করা হয় তাঁর কর্মের কারনে। ১৮৫৫ সালে তিনি ”বর্ণপরিচয়” প্রথম ভাগ লিখেছিলেন এবং সেই সময় তিনি এখনকার তথাকথিত পন্ডিতদের থেকে ঢের বেশি সচেতন ছিলেন। তাঁর রচিত ”বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ” বইটি মাতৃভাষায় রচিত হয়েছিল, এবং এই বইটি ভারতের প্রথম বিজ্ঞান ভিত্তিক ধর্মনিরপেক্ষ পাঠ্যপুস্তক। এর প্রতিটি শব্দ ধরা যায় ও ছোঁয়া যায়। তিনি ১৬৫ বছর আগে বুঝেছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষাধারা ছাড়া দেশকে এক এবং অবিভাজ্য রাখা যায় না ও যাবে না।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থকারিক বিনয়ভুষণ রায় তাঁর “শিক্ষাসংস্কারক বিদ্যাসাগর ও বর্ণপরিচয়” নামে বইটিতে লিখেছেন বর্ণপরিচয়-এর পর আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় বর্ণ চেনানোর জন্য অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। তবুও এই বর্ণপরিচয় ২০১৯ সালেও সমাদৃত, তাই বলা হয় যে, “যার কেউ নেই সাক্ষর করে তোলার, তার জন্য আছেন বিদ্যাসাগর।”
সেই মহান মানুষটির দ্বিশতবর্ষের জন্মদিবসে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হল রাজ্য জুড়ে। বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের প্রাণপুরুষ শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপক সরকার মহাশয়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের ভাইস-চেয়ারম্যান সুকুমার ঘোষ, অধ্যক্ষ ডাঃ হরিহর ভৌমিক, জাতীয় সেবা প্রকল্পের আধিকারিক সন্দীপ দাস, সুদীপ্ত বোস। এছাড়াও কলেজের অধ্যাপক অধ্যাপিকা, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপক সরকার বলেন আগামী একবছর বিদ্যাসাগর সংক্রান্ত নানা প্রদশর্নী, দেওয়াল পত্রিকা, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করতে হবে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তে ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মুর্তি স্থাপন করা হবে।
হুগলি জেলায় বিভিন্ন জায়গায় পালিত হ’ল বিদ্যাসাগরের জন্মদিবস। কমল চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল একটি বর্নময় অনুষ্ঠান।উনবিংশ শতকের নবজাগরণের পথিকৃৎ রামমোহন, ডিরোজিও, বিদ্যাসাগরের ছবিতে মাল্যদানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। মুখ্য বক্তা ছিলেন ধনেখালি শরৎ সেন্টিনারি কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সুভাষ সেন। শিক্ষা, বাঙলা গদ্য, সাহিত্য, বিধবা বিবাহ এবং বাল্য বিবাহ রোধে বিদ্যাসাগরের ভূমিকার মূল্যায়ন করেন তিনি। এক্ষেত্রে তৎকালীন রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে রক্ষনশীল সামন্তশক্তির বিরুদ্ধে ষোড়শ শতকের ইউরোপীয় রেনেসাঁ জাত যুক্তিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল চিন্তার মাধ্যমে কিভাবে সমাজ সংস্কারে তিনি ব্রতী হন তার বিস্তৃত ব্যাখ্যা দেন অমলেশ ত্রিপাঠি, সুমিত সরকার, অশোক সেন, বিনয় ঘোষ প্রভৃতি ইতিহাসবিদ এবং সমাজ বিজ্ঞানী। আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে অনুষ্ঠান চিত্তাকর্ষক এবং অর্থবহ হয়ে ওঠে।
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবার্ষিকি উপলক্ষে চন্দননগরের গঙ্গার ধারে পাতালবাড়ির নিকটবর্তী (স্ট্রান্ড)স্থানে একটি একটি সুন্দর মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চন্দননগর মর্নিং ওয়াকার্স ফাউন্ডেশন। সেখানে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ঐ সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন প্রবুদ্ধ ঘোষ, দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর কুশারী, ভাস্কর দাস, নীলমণি কোনার প্রমুখ ব্যাক্তিগণ।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2019/09/IMG-20190927-WA0014.jpg)
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2019/09/IMG-20190927-WA0011.jpg)
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2019/09/IMG-20190927-WA0006-1024x473.jpg)