প্রতিবেদক: মধুমিতা ঘোষ: চিন্তন নিউজ: ০৬/০৮/২০২৩:— দার্শনিক এরিস্টটল এর উক্তি,”দুটি দেহে একটি আত্মার অবস্থান ই হলো বন্ধুত্ব।”এ হলো মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও একতাবদ্ধ এমন এক সম্পর্ক,যা বছরের পর বছর ‘ ভালোবাসার শক্তিশালী বন্ধনে,স্নেহ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা,সততা, পারস্পরিক বোঝাপড়া, সমবেদনা,একে অপরের সঙ্গ,আস্থা, নিজের যোগ্যতা অনুভূতি প্রকাশ প্রভৃতির মাধ্যমে স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সমর্থ হয়।
ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ডেটাবেস গবেষণায় দেখা গেছে যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারনে মানুষ সুখী হয়। বন্ধুত্ব হলো একমাত্র সেই আধার যেখানে মানুষ মন-প্রাণ উজাড় করে আনন্দ, বেদনা ভাগাভাগি করতে পারে।হাসি-গল্প আর চূড়ান্ত পাগলামি করার এই আধার মানে ‘ বন্ধুত্ব ‘, কোনো বয়সের হিসেব কষে না, পারস্পরিক আত্মিক আকর্ষণ ও প্রগাঢ় ভালোবাসা এবং বিশ্বস্ততা থাকলেই এ স্থায়ীত্ব লাভ করে।
তবে বন্ধু দিবসের উৎপত্তি বা কারন বিষয়ে একাধিক মত আছে।অনেকের অভিমত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বৈরিতায় ইন্ধন জুগিয়ে বন্ধুর অভাব তৈরী করেছিলো,ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধু দিবস পালনের ধারণা এসে থাকতে পারে।অন্য এক সূত্র অনুযায়ী,১৯১৯ সালে আগষ্টের প্রথম রবিবার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে কার্ড, ফুল ও উপহার বিনিময় করতো। আবার আরো এক তথ্য অনুসারে ১৯৩৫ সালে আগষ্টের প্রথম শনিবার আমেরিকা সরকারের এক ব্যক্তি হত্যার প্রতিবাদে, পরদিন রবিবার ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মঘাতী হন।এরপর থেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুদের অবদান কে সম্মান জানাতে আমেরিকান কংগ্রেসে ১৯৩৫ সালে আগষ্টের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে বন্ধু দিবসের দিন তারিখ আবার বদলানো হয়েছিল।১৯৫৮ সালের ২০ শে জুলাই ” ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুশেড ” এর প্রতিষ্ঠাতা Dr. Ramon Artemio Bracho ৩০ শে জুলাই ,এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে, বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত এক নৈশভোজে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং সেই সময়েই জাতিসংঘে ৩০ শে জুলাই কে বিশ্বব্যাপী বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু প্রায় ৫৩ বছর পর, ২০১১ সালের ২৭ শে জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩০ শে জুলাই কে” বিশ্ববন্ধু দিবস” হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। তবে এখনও বাঙলাদেশ,ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগষ্টের প্রথম রবিবার – ই বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সাধারণভাবে মানুষ তার আশপাশের এলাকার এবং নিজেদের পরিচিত বৃত্তের মধ্যে ই বন্ধুত্বের পরিমন্ডল গড়ে তোলে। আবার এও দেখা যায় যে অর্ধেক এর বেশি মানুষ বৃত্তের বাইরের সম্পূর্ণ অন্য মতাদর্শের মানুষদের, বিপরীত ধর্মী কথা শোনাও গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
প্রাচীন কাল থেকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক দের লেখায় এবং সারা বিশ্বের মানুষের মননে ‘ বন্ধুত্ব ‘ এই শব্দ টি এক বিশেষ ব্যাঞ্জনা সৃষ্টি করে।আজও মানুষের স্থির বিশ্বাস যে রাজনৈতিক ভাবে জোর করে যে কার্যসিদ্ধ হয় না তা বন্ধুত্বের মাধ্যমে সম্ভব।
রাষ্ট্রের এবং রাজ্যের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা- নেত্রীদের উচিত, অতি সচেতনতার সঙ্গে এই বন্ধুত্বের বীজকে, ভালোবাসার বন্ধন কে সামাজিক ভাবে রোপন করার।
এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর অন্যান্য বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিবরগের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ আচরণ স্মরণীয়।
স্মরণ করা যেতে পারে কমিউনিষ্ট দের কমরেডশিপ কে, যা সারা পৃথিবীর সমস্ত নিপীড়িত মানুষকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে। দুনিয়ার সমস্ত কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য সমর্থকরা নিজেদের কমরেড বলে সম্বোধন করে গর্ববোধ করে, একাত্ম বোধ করে।
একমাত্র বন্ধুত্ব পূর্ণ সহমর্মিতা ই পারে দেশে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।