রাজনৈতিক

ঘুমন্ত চেতনার অন্তরালে বিদ্রোহী মন


দিলীপ গাঙ্গুলি: চিন্তন নিউজ:১৮ই এপ্রিল:- স্বপ্ন ছিল মানুষের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন, মানুষের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ। মনের মধ্যে আগুন কই, বিদ্রোহের আগুন, যে আগুন একদিন জ্বালাতে চেয়েছিল বলিভিয়ার পাহাড় ঘেরা গভীর অরণ্যে, প্রতিটি বনদেশের শুকনো পাতায়, দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে যে আগুন, সেই আগুন ছড়িয়ে পড়বে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, সবকিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে। উদ্ধত রাইফেল হাতে ছিনিয়ে নেবে ন্যায্য অধিকার, তাদের ভারি বুটের আওয়াজে চমকে উঠবে রাষ্ট্রযন্ত্র ।

কিন্তু যখন দেখতে হয়, বান্দ্রা স্টেশনে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক রাষ্ট্রের লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত, ভুলুন্ঠিত, তারা কেউই রাষ্ট্রের কাছে অন্ন চায়নি, অর্থ চায়নি, চায়নি মাথা গোঁজার আশ্রয়। তাদের অপরাধ তারা সবাই নিজের নিজের বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে থেকে টিভির পর্দায় এই দৃশ্য নিরীক্ষন করেছে রাষ্ট্রের এই উদ্ধত আস্ফালনকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে তাদের অসার হাত তুলে নিতে পারেনি রাইফেল।

অথবা যখন খবরের কাগজে দেখতে হয় এই দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামের যথেষ্ট অভাব থাকা সত্ত্বেও সার্বিয়াকে বিমান ভর্তি করে চিকিৎসার সরঞ্জাম পাঠায় অধিকাংশ মানুষ তখন ইচ্ছে করেই অন্য খবরের দিকে আমার চোখ ফিরিয়ে নি।

একটা ভারতবর্ষ যখন কোনোমতে ঘাসের রুটি অথবা জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা লতাপাতা সেদ্ধ করে খেয়ে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করিনা। সবার চোখ তখন অন্য একটা ভারতবর্ষকে দেখে। দ্বিতীয় ভারতবর্ষ তখন লক ডাউনে নিজের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে আমোদ প্রমোদে ব্যস্ত, কিভাবে সহজ উপায়ে মুখরোচক চিকেন অথবা মটন রান্না করার উপায় বাতলে দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে কেউ তখন তাতে কি অবলীলায় শ্লীলতা অশ্লীলতার সীমারেখা মুছে দিয়ে লাইক কমেন্টের ঝড় বইয়ে দেয়, চোখ তখন আর এই ছবিগুলোকে অশ্লীল বলে না, বিদ্রোহী স্বত্তা বা চেতনায় আঘাত হানেনা।

যুদ্ধবাজ রাষ্ট্র যখন দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সমরাস্ত্র কেনে তখন দেশবাসী পাকিস্তান দেখে, হিন্দু মুসলিম দেখে, যা দেখেনা তা হলো রাস্তার দুপাশে ফুটপাথে অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে ওটা শৈশব, হাসপাতালের বাইরে একটুখানি চিকিৎসা পাওয়ার আশায় মানুষের ভীড়, শিক্ষকের অভাবে ধুঁকতে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আসলে মানুষের মস্তিষ্কের বিদ্রোহী কোষ গুলোতে কোনো কিছুই আর আঘাত করে না, আর করেনা বলেই এগুলো দেখি না, দেখতে পাই না, অথবা দেখেও না দেখার ভান করে হয়তো আকাশ দেখে, নয় দেখে দূরের সমুদ্রের নীল জলরাশি ।

একদিন উত্তরের অরণ্য থেকে ছুটে আসবে ঝড়
দক্ষিণের গভীর সমুদ্র থেকে তুলে আনবে বৃষ্টির মেঘ, শুরু হবে অগ্নুৎপাত,ভূ-ভারতের সমস্ত দক্ষিণ বাহিনী নদীকে বামদিকে দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে হিমালয় থেকে বিবেকানন্দশীলা পর্যন্ত থরথর করে কাঁপিয়ে দিয়ে, রাষ্ট্রের চাবুক খেতে খেতে মাটিতে নুয়েপড়ে গোঁঙাতে থাকা মানুষগুলোকে টানটান করে জাগিয়ে দিয়ে ওলোট পালট করে দেবে ভারতবর্ষের ভাগ্যের চাকা। লেখা হবে নতুন ইতিহাস।এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিশপিস করতে থাকা অসাড় হাত রাইফেল তুলে নিতে না পারলেও, আলবেয়ার কামুর উপন্যাসের নায়কের মতো মনটা হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।