সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ২৫ জুলাই: সংস্থা বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু মমতা ব্যানার্জী সরকার সেই “মৃত” সংস্থাকে টাকা পাঠিয়েছেন। রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে সারা দেশে এই বিষয়টি উদাহরণ হতে পারে। সূত্রের খবর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নানা খাতে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কথা হল ২০১৪-র জুনে সংস্থাটাই তো বন্ধ হয়ে গেছে। আর তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে ডিরেক্টরেট অব কমার্শিয়াল ট্যাক্সেস। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরে। সেখানে জেলার ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট অফিসার একটি সংস্থাকে বন্ধ ঘোষনা করার প্রায় দুমাস পর সেই সংস্থাকে ৩ লক্ষের বেশী টাকা দেওয়া হয়েছে।
এখন প্রশ্ন কি করে এতটা বেহিসাবি হতে পারে রাজ্য সরকার? মমতা ব্যনার্জী সর্বদা দাবী করেন তিনি ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। রাজ্যে নাকি তার আমলেই এই সব শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে মহিলা, সংখ্যালঘু, তফশিলি জাতি, আদীবাসিদের জন্য তার সরকার খুব তৎপর। কিন্তু এক আশ্চর্যজনক তথ্য সামনে এসেছে সি.এ.জি. রিপোর্টে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে মমতা ব্যানার্জীর আমলেই মহিলা, সংখ্যালঘু, তফশিলি জাতি ও আদিবাসীরা সবথেকে বেশী স্বনির্ভরতা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি পুরো গ্রামাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের মানুষের সঙ্গে প্রতারনা করেছে তৃনমূল কংগ্রেস। তার মধ্যে মুর্শিদাবাদ, মালদা, দুই ২৪ পরগনা যেমন আছে তেমন আদিবাসী এলাকাগুলি আছে।
বাম আমলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে একটা নীতি ছিল। ২০১৩ সালের পর সেই নীতি পরিবর্তন করে নতুন নীতি প্রনয়ন করে তৃনমূল সরকার। সেই নীতিতে “বি-জোন” থাকা মহিলা, সংখ্যালঘু, তফশিলি জাতি, আদিবাসীদের মালিকানাধীন ছাড়া আর কোন সংস্থাকে ২০১৩ সালের পর আর কোন আর্থিক সাহায্য দেওয়া যাবে না। সি.এ.জি. পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখে যে নিজেদের নীতি নিজেরা ভেঙ্গে জোন-বি র আওতায় থাকা হুগলির ৪৫ টি সংস্থাকে ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দফায় দফায় ৮ কোটি ৪ লক্ষ টাকা পাইয়ে দিয়েছে। এই সংস্থাগুলির একটাও মহিলা, তফশিলি বা আদিবাসী নয়।
তার মানে শিল্পের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা যে জেলা গুলির টাকা পাবার কথা তা এগিয়ে থাকা জেলা গুলি পেয়েছে। কি নিদারুন বঞ্চনা! পিছিয়ে থাকাদের বঞ্চিত করে ওই টাকা নিজেদের পছন্দের লোকজনদের পাইয়ে দিয়েছে তৃনমূল সরকার। শিল্প বিকাশ বদলে হয়েছে স্বজনপোষণ। এমন উদাহরণ আরও আছে। সি.এ.জি. পরীক্ষক দল বলেছে তারা আরও ১৩ টি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে যারা প্রাপ্যের তুলনায় প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বেশী পেয়েছে। সিএজি বলছে অনেককে বঞ্চিত করে পছন্দের লোককে টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
অনেকগুলি জেলা বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ ১১১ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা পেয়েছে।শিলিগুড়ি, দূর্গাপুর, হুগলি, বীরভুম ইত্যাদি জেলাগুলির প্রাপ্য ৩০ কোটি টাকা। তার মানে ওই সংস্থা গুলিকে ৮১ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা পাইয়ে দিয়েছে মমতা ব্যানার্জী সরকার।
মমতা ব্যানার্জীর আমলে শিল্পক্ষেত্রে চলছে “শিব ঠাকুরের আপন দেশের মতো।” যে এলাকার উদ্যোগপতিদের বেশী টাকা পাওয়ার কথা তারা তা পেয়েছেন নামমাত্র। আর যেখানে কম দেওয়ার কথা সেখানে দেওয়া হয়েছে বেশী পরিমানে। কত কান্ড যে করেছে মমতা ব্যানার্জী সরকার? শিলিগুড়ির দুটি সংস্থা কে ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ৪ কোটি ২২ লক্ষ টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে এই বলে যে সংস্থাগুলি মহিলা পরিচালিত বলে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় ওই সংস্থাগুলি মহিলা নয়, পুরুষ পরিচালিত। আবার পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত কোন নথি ছাড়াই ছোট সিমেন্ট কারখানা হাক্সিং মিলকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকি বাবদ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।