কলমের খোঁচা

অমানবিকতার সেকাল-একাল



রঘুনাথ ভট্টাচার্য:চিন্তন নিউজ: ১৯শে সেপ্ট্টে্ম্বর:–খবরটা বেশ গুরূতর। সুপ্রীম কোর্টের একটি রায়কে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে ,” সাফাই কর্মীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও এসব হয় না।” আদালতের বিরক্ত প্রশ্ন, সাফাই কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম কেন ব্যবস্থা করা হয় না? এই কর্মীদের ক্রমশঃ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিচারপতিদের স্পষ্ট উক্তি, এই অব্যবস্থা শুধু অমানবিক নয় , অসাংবিধানিক। এই পরিস্থিতির অবশ্যই বদল হওয়া উচিত।

মানুষের মন হ’ল দ্রুততম যান। এক ধাক্কায় পৌঁছে যায় সূদূর অতীতে।১৯৪৩ সাল। বাসার কাছেই ট্রাম রাস্তা। গ্রীষ্মের ছুটি, নিঝুম দুপুর বেলা। হঠাৎ গলির দিকের জানলায় ঠুক ঠুক। খোলার নিয়ম নেই যে কোনও সময়ে জাপানীরা বোমা ফেলতে পারে। তাই সদর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে সন্তর্পণে বড়রাস্তায়। ভীড় জমে গেছে।

তখনকার লাল পাগড়িও আছে। বড়রা বলাবলি করছে
লোকটা মরেই গেল। ভীড়ের পায়ের ফাঁক দিয়ে অকুস্থলে পৌঁছে দেখি মরণফাঁদ এর (ম্যান হোল কে বলে) মুখটা
খোলা। চারিদিকে ছড়ান পাঁকের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে আছে একটা কালো মতন নেঙটি পড়া মানুষ। সবাই বলাবলি করছে মুখোশ ছাড়া নেমেই এই বিপত্তি। ভীড়ের থেকে কে একজন বললো ‘দেখ, বোধ হয় বেঁঁচে নেই, তাড়ি খেয়েছে।’ এখন মনে হচ্ছে , তখন বোধহয় এখনকার মত বাংলা বা চোলাই হোতো না, শুধু ধেনো আর তাড়ি। কিছুক্ষন বাদে ধাঙর-ঠেলা এসে ওকে নিয়ে চলে গেল। আস্তে আস্তে ভীড় ফাঁকা।

১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ । গঙ্গা
ইছামতি দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। বিদেশীরা চলে
গেছে। স্বাধীন কেন্দ্রীয়, রাজ্য,স্থানীয়, ইউনিয়ন বোর্ডের, পঞ্চায়েত, ইত্যাদি নানা রকম সরকার শুধু নয় , ইউএনও, ইউনিসেফ, হু, মানবাধিকার সংস্থা, কত কোটি কোটি টাকার বাজেট । কিন্তু আমাদের মাটির নীচের নালির পাঁক তোলার ব্যবস্থার কোনো বদল হয় নি।
সেই ট্রেডিশন সমানে চলেছে।
এখনও মঙলুরা সকালে চোলাই টেনে দড়ি,বালতি,
লম্বা বাঁশের লগি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। সর্দারের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিয়ে যে যার দল নিয়ে ম্যানহোলে গিয়ে ঢোকে। সারাদিন ওখানে কাটিয়ে প্রচুর পাঁঁক তুলে টলতে টলতে উঠে আসে। তারপর বাংলার ঠেকে আকন্ঠ হয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি। আবার তো কাল সকালে ঢুকতে হবে ম্যানহোলে।আর , যদি কপাল জোরে গ্যাস খেয়ে যায়, তবে মুক্তি।

তবে , কিছুটা উন্নতি তো হয়েইছে। আগে গ্যাস খেয়ে
ধাঙর-চালান হত।আর এখন খবরের কাগজে ছবি বেড়োয়,
আদালতের আলোচনায় উঠে আসে। আবার বাবু লোকরা
মাঝে মাঝে আদর করে পা ধুইয়ে দেয়। তাতেই সুখ। কবে
যে আবার পাঁকে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে কে জানে ! প্রতি মাসে নাকি দেশে চার পাঁচ জন মারা যাচ্ছে !? এর কোনো উন্নতি নেই? এর প্রতিকারের কোন আধুনিক পথ বেড়োবেে?


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।