কলমের খোঁচা

মানবদরদী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস – জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:০১/০১/২০২১– “যে বলে বাঙলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হয় না, সে হয় বাঙলা জানে না, নয় বিজ্ঞান বোঝে না”– সত্যেন্দ্রনাথ বোস।

আজকের দিনটি নতুন বছরের বার্তা নিয়ে সকলের দোরগোড়ায় হাজির। হাজারো না পাওয়াকে মানিয়ে নিয়ে নতুন প্রাণের আনন্দে ভেসে যাওয়া । যদিও যাদের জীবনে সকালই আসেনি তাদের কাছে এই দিন আর পাঁচটা দিনের মতো। সে তো ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই দিনে জন্মেছেন বাঙালীর অহংকার বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস – বিশ্বের দরবারে বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর জীবনটা খুব স্বচ্ছন্দে কাটেনি। কাঁটা ভেঙে ভেঙেই গোলাপ তুলেছেন।

১৮৯৪ সালে ১ লা জানুয়ারি এই মহামানবের আর্বিভাব হয় পৃথিবীর মানুষকে নতুন দিশা দিতে। ছোটোবেলা থেকে তিনি ছিলেন মেধাবী ।কথিত আছে তিনি গোটা বই মুখস্থ করে ফেলতেন। তাঁর এই প্রতিভা বাবার নজর এড়ায়নি। তাই বাবাও ছোটো থেকেই ছেলের পড়াশোনার দিকে নজর দেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে হিন্দু স্কুলে ভর্তি হন। প্রত্যেকটি পরীক্ষায় তাঁর ফলাফলে শিক্ষকরা স্তম্ভিত হতেন। কলেজে অধ্যাপক হিসেবে পান জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, বন্ধু হিসেবে মেঘনাদ সাহা ও আরো অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিকে। তাঁর বিষয় ছিলো গাণিতিক পদার্থ বিদ্যা। শিক্ষকদের অবাক করার মতো রেজাল্ট করলেও তিনি পি,এইচ,ডি করতে পারেননি কারণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সুযোগ ছিলো না। আবার পদার্থবিদ্যায় স্কলারশিপ ব্যবস্থা না থাকায় তিনি বাইরে যেতে পারেন নি। অগত্যা চাকুরির চেষ্টা  । কিন্তু এই প্রতিভাধর ব্যক্তিকে চাকরি দেবার মতো চাকরি বাংলাদেশে ছিলো না। তাই তাঁকে টিউশন করতে হয়।

এইসময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে নিজের লাইব্রেরীতে পড়াশোনার সুযোগ দেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিডার হিসেবে যোগাদান করেন। এই কলেজে ক্লাস নিতে গিয়ে ঘটে যুগান্তকারী পরিবর্তন। তিনি তাঁর নব চিন্তা লিখে জার্মানিতে আইনস্টাইনের কাছে পাঠান। আইনস্টাইনের নজরে আসে ব্যাপারটি। আবিষ্কৃত হয় বোস – আইনস্টাইন সংখ্যা তত্ত্ব। কিন্তু এই বিষয়ে গবেষণা করে অন্যের নোবেল জুটলেও তিনি নোবেল থেকে বঞ্চিত থাকেন। অবশ্য মানরষটিই যখন নোবেল, তখন পুরস্কারে কিইবা যায় আসে।দেশভাগের সময় তিনি কলকাতায় চলে আসেন ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগ দেন।

শুধু নিজের পড়া শোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেননি, পরাধীন ভারতের গ্লানি তাঁকে ব্যথিত করতো। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।

বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চা যে কতখানি প্রয়োজন তা উপলব্ধি করে তিনি ” বিজ্ঞান পরিচয়’ জ্ঞান বিজ্ঞান  পত্রিকা প্রকাশ করেন। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ গঠন করেন। । কিন্তু তাঁর অন্তরের ডাক বাঙালির কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। আজকের ইংলিশ মিডিয়ামের বাড়বাড়ন্ত সেটাই প্রমাণ করে।

এই মহান ব্যক্তি আজীবন বিজ্ঞান সাধনা, মানবের হিতসাধনায় ব্যাপৃত ছিলেন। আজকের প্রজন্ম যেন তাঁকে ভুলে না যায়, তাঁর কথা স্মরণে না আনলে শুধু সত্যেন্দ্রনাথ বোসের ওপর অপরাধ করা হবে তা নয়,  অপরাধী হয়ে থাকতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।