রাজ্য

রেগার কাজে পুকুরচুরি


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ২ জুলাই: মমতা ব্যানার্জী আজ বলছেন কাটমানি ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু এই “পুকুরচুরির” কথা ছয় মাস আগেই জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদল একটি রিপোর্টে জানিয়েছিল ১০০ দিনের কাজে নজিরবিহীন দুর্নীতির কথা।

গত জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রকের এক উচ্চ পর্যায় প্রতিনিধি দল এ রাজ্যে এসেছিলেন এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ কিভাবে রুপায়িত হচ্ছে তা সরোজমিনে দেখতে। সব দেখে তারা রিপোর্ট দেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। রাজ্যকেও এই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

প্রতিনিধিদলের এই রিপোর্ট থেকেই উঠে এসেছিল চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। শুধু অভিযোগ করেই শেষ হয়নি। ১০০ দিনের কাজ পরীক্ষা করে কিভাবে দুর্নীতি হয়েছে তা তথ্য দিয়ে প্রমান করেছে এবং তা উদ্ধার করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য এই রিপোর্ট সবার সমক্ষে আসে নি। এখন সরকারি রিপোর্টই প্রকাশ্যে এসেছে এই নজিরবিহীন দূর্নীতি।

পূর্ব বর্ধমান ও হুগলী এই দুটি জেলার ৬টি ব্লকের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৬৩টি ১০০ দিনের কাজ সরোজমিনে তদন্ত করেন এই প্রতিনিধিদল। কি ছিল এই রিপোর্টে? খেলার মাঠের উন্নতির জন্য ১০০ দিনের কাজে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। পুকুর কেটে, এবড়ো খেবড়ো জমিকে সমান করে মাঠ গড়ার কথা উল্লেখ করে টাকা খরচের কথা বলা হয়েছিল। প্রতিনিধিদলের স্যাটেলাইট ইমেজে আগেভাগেই ওই এলাকায় একটি পুকুরের উল্লেখ ছিল। ফলে পুকুর কেটে জমি ভরাট করার তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর এই মিথ্যার উপর ভর করেই লুঠ করে নেওয়া হয়েছে ১০০ দিনের কাজের টাকা। প্রতিনিধিদল জানিয়েছেন ৯ লক্ষ টাকার কাজের মধ্যে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা খরচই হয়নি। ওই টাকা উদ্ধার করতে বলে কেন্দ্রীয় সরকার।

হুগলীর ধনিয়াখালী, রাজ্যের মন্ত্রী অসীমা পাত্রের বিধানসভা এলাকা। এই ব্লকের বেলমুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ঘিয়া নদী থেকে পলিমাটি তোলার জন্য ১০০ দিনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পে খরচ হয়েছিল ৩ কোটি টাকা। বেলমুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৫ টি স্পটে ১০০ দিনের কাজ থেকে পলি তোলার কথা। প্রতিনিধিদল ৫টি এলাকা ঘুরে দেখে রিপোর্ট দিয়েছেন। তারা যে রিপোর্ট দেন তাতে লজ্জাতে মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের পর্যবেক্ষন নদী এলাকায় প্রতিটি কাজের জন্য ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দের আইনগত অধিকার দেওয়া আছে জেলাস্তরের এক্সিকিউটিভ এঞ্জিনিয়ারদের উপর। কিন্তু তা মানা হয়নি। তার থেকে বড় কথা নদী থেকে পলি তোলার জন্য সেচ দপ্তরের অনুমতিও নেওয়া হয়নি। ধনিয়াখালি ব্লক পুরোটাই তৃনমুলের দখলে। সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরী করে কার্যত লুঠ হয়েছে টাকা। বিরক্ত হয়ে পুরো টাকাটাই উদ্ধারের কথা বলেন প্রতিনিধিদল।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই রিপোর্ট এখন হাতে এসেছে রাজ্যের। টাকা উদ্ধার নিয়ে দায় ঝাড়তে রাজ্যের রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেছে। এতে সবচেয়ে বিপদে পড়েছে পঞ্চায়েত দপ্তরের সাধারন কর্মচরীরা। তাদের উপর চাপ তৈরী করে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ও শাসকদল ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি করাতে বাধ্য করেছে। রিপোর্ট সামনে আসার পর পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত কর্মচারী সমিতি সমূহের যৌথ কমিটির সাধারন সম্পাদক সন্দীপ রায় জানান “আমরা আর চাপের মুখে পড়ে ১০০ দিনের কাজে দূর্নীতিতে জড়াব না। আমরা আগে থেকেই এই দুর্নীতির কথা বলে আসছিলাম। এবার তা প্রমান হল। যদি প্রশাসন এবার ব্যবস্থা গ্রহন না করে তবে আমরা কর্মবিরতি পালন করব।” রিপোর্ট হাতে আসার পর প্রমান হচ্ছে কিভাবে গরীবের টাকা লুঠ হয়েছে রাজ্য জুড়ে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।