জেলা

হুগলি জেলা নিউজ


চিন্তন নিউজ:-২১ শে জানুয়ারি:- কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে হুগলী জেলা সিটু এর পক্ষ থেকে ২০,০০০ টাকার চেক কৃষক সভার সর্বভারতীয় নেতা কমরেড অমল হালদারের হাতে তুলে দেন হুগলী জেলা সিটু এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড অসিত মুখার্জি সভাপতি কমরেড মলয় সরকার, উপস্থিত কমরেড শংকর মুখার্জী কমরেড ভক্তরাম পান, কমরেড তরুণ ঘোষ।

এদিকে কৃষি বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও,দেশ বাঁচাও—- কলকাতার কৃষক অবস্থানে বলেছেন কমরেড অমিয় পাত্র, কমরেড অমল হালদার ও কমরেড ভক্তরাম পান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।। অন্নদাতা দের আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছে বাংলাও।

আবার জয়দেব ঘোষ -পান্ডুয়া থেকে জানিয়েছেন শিক্ষা এবং শিক্ষকস্বার্থে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আজ নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পাণ্ডুয়া চক্র শাখার পক্ষ থেকে,পাণ্ডুয়া চক্রের এস.আই মহাশয়ের কাছে ডেপুটেশন পত্র জমা করা হলো। উপস্থিত ছিলেন সমিতির পাণ্ডুয়া চক্রের সভাপতি আব্দুল রহিম,সমিতির চক্র সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্যোশাল মিডিয়া টিমের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়দেব ঘোষ,হুগলী জেলা কমিটির সদস্যা দেবারতি বাসুলী,পাণ্ডুয়া জোনালের সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়, চক্রের সহ সভাপতি নন্দন কান্তি দাস , চক্রের সহ সম্পাদক শান্তনু ব্যানার্জী,কোষাধ্যক্ষ দেবজ্যোতি কুন্ডু চক্রের সম্পাদক মন্ডলীর গুরুত্বপূর্ন শিক্ষক শিক্ষিকা এবং সদস্যবৃন্দ। চক্রের শিক্ষকশিক্ষিকাদের বিভিন্ন সমস্যা ও শিক্ষা ও শিক্ষক স্বার্থে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে এস.আই মহাশয়ের সঙ্গে সদর্থক আলোচনা হয়।।

নিজস্ব সংবাদদাতা: সিঙ্গুর, ২০ জানুয়ারি-
বামপন্থী আন্দোলনের প্রবীণ সংগঠক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কমরেড অসিত নিয়োগীর জীবনাবসান ঘটেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৬ টার সময় উওরপাড়া উই কেয়ার নার্সিংহোমে তিনি প্রয়াত হন। হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা জনিত অসুখে তিনি ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। অকৃতদার অসিত নিয়োগীর এক দিদি, তিন ভাই , ভাইপো ও ভাইঝিরা রয়েছেন। কমরেড নিয়োগীর মৃত্যুতে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য সুদর্শন রায়চৌধুরী ও জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে উওরপাড়ার নার্সিংহোমে উপস্থিত হয়েছিলেন পার্টিনেতা শান্তশ্রী চ্যাটার্জি, জ্যোতিকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, শ্রুতিনাথ প্রহরাজ, জয়দেব চ্যাটার্জি, সলিল দত্ত, পৃথ্বীশ ভট্টাচার্য, শঙ্কর মুর্খাজী, মোহিত চৌধুরী, তুহিন বসু এবং সিঙ্গুর দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সম্পাদক অমর চন্দ্র ও যুব নেতা অরিত্র চন্দ্র সহ তার অনুরাগী ছাত্ররা। ওখানে প্রয়াত নিয়োগীর মরদেহে লাল পতাকায় ঢেকে দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টিনেতা শান্তশ্রী চ্যাটার্জি, জ্যোতিকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, শ্রুতিনাথ প্রহরাজ, সলিল দত্ত ও অমর চন্দ্র। কমরেড অসিত নিয়োগীর বাড়ি সিঙ্গুর ১ নং পঞ্চায়েত এলাকার বিদ্যুৎপল্লীতে। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ১৯৬৭ সালে অসিত নিয়োগী সিপিআই (এম)’র সদস্য পদ লাভ করেন। তিনি পার্টির হুগলি জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। রাজনীতির প্রথম জীবনে তিনি বিপিএসএফ’র প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। রাজ্যর যুব আন্দোলনের সূচনাপর্ব থেকেই তিনি গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন এবং হুগলি জেলা সহ সিঙ্গুরেও যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি একসময় যুব ফেডারেশনের হুগলি জেলা কমিটির সহ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সাল থেকে তিনি সিপিআই(এম) সিঙ্গুর লোকাল কমিটির সদস্য এবং ১৯৮২ সালে পার্টির জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত ভবানী মুখার্জি আপ্ত সহায়ক হিসাবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মার্কসবাদ – লেনিনবাদ সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। ছিলেন সুবক্তা। তিনি দক্ষতার সঙ্গে দীর্ঘদিন শ্রীরামপুর জেলা পার্টি অফিসে থেকে পার্টি পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি অনাড়ম্বর ,সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। তার অমায়িক ব্যবহারে সহজেই মানুষকে আপন করে নিতেন। বর্তমানে তিনি সিঙ্গুর ১ নং শাখার সদস্য ছিলেন।
এদিন দুপুরে নার্সিংহোম থেকে মরদেহ শববাহী গাড়ি করে তার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পরিবারের সদস্যরা ও তার ছাত্র ছাত্রীরা সহ বহু গুণমুগ্ধ ব্যক্তিবর্গ শ্রদ্ধা জানান। এরপর মরদেহ সিঙ্গুর পার্টি অফিসে আনা হয় । এখানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পার্টিনেতা অমর চন্দ্র। মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টিনেতা দুলাল ভৌমিক, সুহৃদ দত্ত, আব্দুল হাই, পাঁচকড়ি দাস ,মিতালি চ্যাটার্জি, সৌমিত্র চ্যাটার্জি, অমর চন্দ্র, প্রভাত ব্যানার্জি, এসএফআই জেলা সম্পাদক অমৃতেন্দু দাস , প্রয়াত অসিত নিয়োগীর দিদি ও মহিলা নেত্রী বীথি বন্দোপাধ্যায় সহ এরিয়া কমিটির সদস্যরা ও বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতা কর্মীরা। পার্টিনেতা সুদর্শন রায়চৌধুরী ও জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের পক্ষ থেকেও মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানানো হয় । শ্রদ্ধা জানান সিঙ্গুর বইমেলা কমিটি, শচীন্দ্রনাথ স্মৃতি পাঠাগারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকর্তারা।
ছাত্র জীবনে তিনি অত্যন্ত তীক্ষ্ম মেধার অধিকারী ছিলেন। রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছিল, কিন্তু জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে তিনি কোন জীবিকা গ্রহণ না করে পার্টির সর্বক্ষণের কর্মীর জীবন বেছে নেন। কমরেড নিয়োগীর সংস্কৃতি বোধ ছিল আকর্ষণীয়। এলাকায় অনেক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে তিনি নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। কমরেড নিয়োগী সিঙ্গুরে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ, সিঙ্গুর বিজ্ঞান মঞ্চ, শচীন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার এবং সর্বোপরি সিঙ্গুর বইমেলার তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক । তাঁর অসামান্য সাহিত্য কৃতির কথা উল্লেখযোগ্য। প্রথমে যৌবন পত্রিকার তিনি ছিলেন কর্ণধার ।পরে দ্রাঘিমা – ৮৮ ‘র তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং পরে প্রকাশক ।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সাহিত্য পত্রিকা দ্রাঘিমা ৮৮ , নৈমিত্তিক, সাঁঝের প্রদীপ প্রভৃতির সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ ও কবিতায় তাঁর অসামান্য মেধা মননশীলতার পরিচয় বহন করে। জেলার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লেখা একসময় নিয়মিত প্রকাশ পেয়েছে । তাঁর বামপন্থী আদর্শে বহু তরুণ তরুণী অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সংগঠনে তারা উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করছে । তাঁর লেখা ‘গ্যালিলিও ‘এবং কাব্যগ্রন্হ ‘নৈশব্দ্যের বাণী’ অনুপম সাহিত্যকৃতির সাক্ষর। অকৃতদার এই মহীরুহ তাঁর অসংখ্য অনুরাগী এবং ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
সিঙ্গুর পার্টি অফিসে শ্রদ্ধা জানানোর পর তার মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল সিঙ্গুর বাজারে ঘুরে বৈদ্যবাটি শ্মশানঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।