রঘুনাথ ভট্টাচার্য:চিন্তন নিউজ:২০শে এপ্রিল:- যুগে যুগে বিপর্যয়ের প্রবল স্রোত পৃথিবীর কোনায় কোনায় গিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনবোধ। তবুও মানব সভ্যতার শেষ শিখা নেভে না, চিরদিন আলো জোগায় গভীর আঁধারে।সঙ্গের ছবিটি এমনই এক মানুষের যিনি পেরেছেন সভ্যতার উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রেখে মনুষ্যত্বের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।
ইনি কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শ্রীমতী কে কে শৈলজা। তবে তিনি নিজের পরিচয় দেন এক সর্বক্ষণের স্বাস্থ্য কর্মী হিসাবেই । আর, আমরা সাধারণ লোক ওঁকে তিনি মানুষের ভালবাসার ‘টিচার আম্মা’ হিসাবে। খুঁজলে অনেকের কাছেই ওঁর ফোন নম্বর পাবেন।
কেরলের মানুষ। রাজনীতির থেকে দূরে সরে থাকা কি যায়? রসায়নে স্নাতক করার পরে কয়েক বছর একটি হাইস্কুলের শিক্ষকতা করতে করতে গভীর অনুশীলনে সমাজের অন্তরে প্রবেশ। সেই বোধ তাঁকে টেনে আনে সক্রিয় রাজনীতির আঙিনায়। ক্রমেই নিজের স্বাভাবিক অনায়াস প্রকাশেই তিনি আজ কেরল সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ওঁর আমলেই ‘ নিপা ভাইরাসের ‘ আক্রমণ ২০১৮ তে। সবাইকে নিয়ে রুখে দেন সেই শত্রুকে। লোকে তাঁকে বলে ‘ শৈলসূতা দুর্গা ‘।
ভারতে করোনা কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রথম প্রকাশ্য কেসটি ছিল কেরলেই। উহান প্রত্যাগত এক ছাত্র । তাঁর আরোগ্য দিয়েই বিজয়যাত্রা শুরু।আজ তিনি ইতিহাস। বিশ্বজুড়ে তার ব্যবস্থা পত্রের চাহিদা। করোনা-অসুরকে প্রায় হারিয়ে উঠেছেন। বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল তাঁর রাজ্যে করোনা-মৃত্যু স্তব্ধ হয়ে আছে।নিজে রসায়নে স্নাতক। মৌলিক জ্ঞাণের অভাব নেই।সে তো অনেকেরই আছে। বরঞ্চ বেশী থাকাই স্বাভাবিক কেরলের মত শিক্ষায় অগ্রাধিকার পাওয়া রাজ্যে। কিন্তু তার সঙ্গে যা আছে, তা হয়ত সারা দেশ খুঁজলেও খুব বেশি পাওয়া যাবে না। তাই তো তিনি মানুষের ‘মা’। বিনিদ্র রজনী যাপন করেছেন তার সন্তানসম রোগক্লান্ত রাজ্যের শিয়রে। এই ‘ সরকারী কর্মী’- টির কর্মকান্ডের রোজনামচা শুনলে বোঝা যায় ‘ কঠিন পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই’ কথাটি কত সার্থক। এই কথাটির নতুন আলো আরেকবার জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন সার্থকনামা শৈলজা – টিচার আম্মা শৈলজা।
অফিস শেষ হয় রাত বারোটায়। সবসহকর্মীদের বাড়ি পাঠিয়ে তবে তার ছুটি।এবার বাড়ী যাবেন ‘ ওয়ার্ক ফ্রম হোম ‘ করতে। রাতের চতুর্থ প্রহরে নাকি যোগীরা জাগেন। কিন্তু কেরলে এই যোগিনী -মা সারা রাতই প্রায় জেগে থাকেন । কারণ, তার সন্তানের তো অসুখ। যদি সেই অসুস্থকে বিব্রত করে ‘করোনাসুর’। তাছাড়া, পরদিন সকালে সাতটার মধ্যে আবার বেড়িয়ে যেতে হবে সরকারি কাজে মানুষের কল্যাণে। প্রতিনিয়ত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও তথ্য আদানপ্রদান হবে না? হ্যাঁ, সব কাজ সামলেই। সময় যে হাতে খুব কম।
মা তোমার মুখ চেয়ে আছে সারা দেশ। সবাই জানেন, তোমার আলোর তৃষ্ণা নেই।তুমি নিজেই আলো হয়ে জ্বলে থাকবে, আর্তের প্রাণে। আর সেই আলোতেই হবে অসুর বিনাশ।
বামপন্থী কেরলের এই লড়াই পৃথিবীর ইতিহাসে ধ্রুবতারার মত উজ্জল হয়ে থাকবে চিরদিন। আর সবাই বলবেন,’ হ্যাঁ পেরেছিল কেরল।’