রাজ্য

ইতিহাস বেঁচে থাকে (২)


রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:২০শে এপ্রিল:-কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শ্রীমতী কে কে শৈলজার সবল মেধা ও নির্মেদ দায়িত্ববোধের কথা স্মরণ করা গিয়েছিল প্রথমপরিচ্ছেদে।
এ প্রসঙ্গে, এই সাফল‍্যে কেরলের সর্বস্তরের স্বাস্থ‍্যকর্মীবাহিনীর নিঃস্বার্থ ও সুশৃঙ্খলিত অংশগ্রহণ ছাড়া যে এই মহান যজ্ঞ সাধন করা সম্ভব হত না একথা বলাই বাহুল‍্য।অনেকদিন আগে শোনা একটা কথা মনে উঁকি দিয়ে গেল। শুনেছিলাম, ‘ জনগণ নেতার প্রসূতি, আর, নেতা জন্ম দেয় যোর্দ্ধৃবাহিনী ‘। আজ ‘ টিচার আম্মার ‘ প্রত‍্যক্ষ ও মূখ‍্যমন্ত্রী শ্রীযুক্ত বিজয়নের সদল অংশগ্রহণ যুদ্ধজয়ের যে দৃষ্টান্ত আজ স্থাপিত হল, তা ভারতের গণ-আন্দোলনে তো বটেই, সারা বিশ্বের কাছে সম্মিলিত
লড়াইয়ের এক প্রমাণিত সত‍্য হয়ে উঠে এসেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্দ্বিধায় এ সত‍্য স্বীকার করে জানিয়েছে ‘কেরল মডেল’ সমস্ত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির কাছে এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

আমরা জানি , কেরালায় দেশের মধ‍্যে সর্বপ্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে। জানুয়ারির শেষে উহানের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসুস্থ্ এক ছাত্রীকে উড়িয়ে নিয়ে এসে চিকিৎসা করা হয়েছিল রাজ‍্যেই। এই সক্রিয়তায় কী
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্বচ্ছ প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছিল ,অভিজ্ঞজন মাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। এই প্রত‍্যয়ী নেতৃত্ব যে প্রবল শক্তিশালী কর্মীদের জন্য দেয় তারা যে বিজয়ী হবে,সেকথা নিশ্চিত।রাজ‍্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী শ্রীমতী শৈলজার কথায়, বিশ্বব‍্যাপী প্রবণতা গভীর মনোযোগের
সঙ্গে অনুশীলন ও বিশ্লেষণ করা চলছিল। বোঝা যাচ্ছিল স্বাস্থ্যকর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সমগ্র চিকিৎসা ব‍্যবস্থাকে কিভাবে নষ্ট করে দেয়। সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয় সব স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের বুক দিয়ে আগলে রক্ষা করতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থমন্ত্রক এই দৃষ্টান্ত তুলে ধরছে। তাঁরা বলেছেন, কাসারগড়ের কথা। সেখানে, দেড়শো রোগী ধরা পড়লেও এখনও কারোর মৃত‍্যু হয়নি শনিবার পর্যন্ত। দীর্ঘ
অনুশীলন কেরলকে সাহায‍্য করেছে সুদৃঢ় এক পরিকাঠামো এবং ফলপ্রসূ এক স্বাস্থ্যকর্মী- সুরক্ষা বলয় গড়ে তুলতে। হু’ তাঁদের করোনা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে জোর দিয়েছে স্বাস্থ‍্যকর্মীদের সুরক্ষায়।

সেই কথাই উঠে এসেছে স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা মোহনদাসের কথায়। ৯৩ বছরের টমাস আব্রাহাম ও ৮৮ বছরের বৃদ্ধা মারিয়াম্মা সুস্থ্য হয়ে উঠেছিলেন এই রেশমা শুশ্রুষায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে থেকে। রেশমার ওপর ছিল তাঁদের অটল ভরসা।১২ই মার্চ রোগীরা সুস্থ হয়ে ফিরে যান, আর ঐ দিনই রেশমার দেহে ভাইরাস ধরা পড়ে । রেশমাকে যেতে হয় আইশোলেসনে।

কেরালায় প্রশাসন জোরকদমে প্রস্তুতি নিয়েছে প্রতিরোধী সরঞ্জাম (পিপিই)সরবরাহ নিশ্চিত করতে। আর, সমানভাবে প্রচার চালিয়ে গেছে যাতে স্বাস্থ‍্যকর্মীরা কোনোরূপ সামাজিক বিরূপতার শিকার না হয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ কার্যক্রম যেন পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে দৃঢ় থাকে।যার মধ‍্যে আছে ব‍্যবহৃত পিপিই বৈজ্ঞানিক কায়দায় বিনষ্ট করে দেওয়া পর্যন্ত।তাই কোথাও কোনো বিক্ষোভে কাজের সময় নষ্ট হয়নি।বাইরে থেকে সরঞ্জাম জোগাড় করার সাথে সাথে রাজ‍্যের যে রিসোর্স আছে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের দিকেও নজর রাখা হয়েছে। ‘কুদুম্বশ্রী’ প্রকল্পের মহিলা গোষ্ঠীর দ্বারা প্রস্তুত করান হচ্ছে সরঞ্জাম।কুদুম্বশ্রী- ডিরেক্টর জানাচ্ছেন, এন ৯৫ মাস্ক ও গগলস্ এ যাতে ভাইরাস বাসা না বাঁধে সেই জন‍্য তৈরি করা হচ্ছে এক বিশেষ আবরণী।খরচ মাত্র ১০ টাকা।আবরণীর নকশা করে দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

কী অপার যত্নে ও মর্মীতায় একটি কার্যসূচি পরিচালনা করলেই মাত্র তাতে কাঙ্খিত ও প্রয়োজনীয় সাফল‍্য আসে,এ কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল কেরালার প্রাণের আলোয়।আমরা উজ্জ্বল হলাম ।ঋদ্ধ হলাম। কামনা করি, দেশের এই রাজ‍্যটির সুষমা যেন দেশবাসীকে পুষ্ট ও সজীব করে তোলে। করোনা মোকাবিলায় এই রাজ‍্য যে ২৬ বিশেষজ্ঞের এক কমিটি তৈরি করেছে, তাঁরা এই কর্মোদ‍্যমে সামিল আছেন


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।