সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ১৬ জুন: দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ঘাসের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু। বেড়াতে সবাই ভালবাসে। দূর দূরান্ত কতো জায়গাতেই না বাঙালিরা ঘুরতে যায়। আর হাতে পয়সা থাকলে তো কথাই নেই, বিদেশ অবধি চলে যায়। কিন্তু বাংলাতে যে কতো কিছু দেখার আছে!
ঘুরে আসুন কুরুম বেড়া দূর্গ। এমন কিছু দূর নয়। বছরভর যাওয়া যায়। হাওড়া বা সাত্রাগাছি থেকে খড়্গপুরগামী যে কোন ট্রনে খড়্গপুর, তারপর সেখান থেকে গাড়িতে গগনেশ্বর। গাড়িতে যেতে ১০০০/- টাকা লাগবে। বাসেও যাওয়া যায়, কিন্তু কষ্টকর।
বিশাল দেওয়াল ঘেরা দূর্গ। প্রবেশ পথে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের নোটিস ঝুলছে। কিন্তু সেখানে দূর্গ নিয়ে কোন বিবরণ নেই। যা আছে তা হল আইনি বিবরণ। যাই হোক ভিতরে প্রবেশ করলে দেখতে পাওয়া যায় বিশাল এক চত্ত্বর। আন্দামান জেলের মতো অসংখ্য সেল। ছোট ছোট কুঠুরি। দূর্গর পূর্ব প্রান্তে আছে গগনেশ্বর শিব মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। অনেকে বলেন কপিলেশ্বর, ওড়িশার রাজা কপিলেন্দ্রদেবের নামানুসারে। আর পশ্চিমে তিনটি গম্বুজ। এগুলি মুসলিমদের তৈরী। এগুলি তাদের উপাসনা স্থল। ভিতরটা লোহার রড দিয়ে ঘেরা।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2019/06/IMG_20190616_085612-1024x800.jpg)
দূর্গ টি নির্মান হয় ১৪৩৫ থেকে ১৪৭০ সালের মধ্যে ওড়িশার রাজা কপিলেন্দ্র দেবের সময়। এর নাম যে কেন কুরুম বেড়া তা জানা যায়নি। তবে এখানে একটা সময় তসরের চাষ হত। মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ অংশ ওড়িশার রাজা একটা সময় দখল নিয়েছিল। মনে করা হয় এই সময়েই এটা তৈরী হয়েছিল। এটি শুধু শাসন কায়েম রাখতে সেনা ছাউনি হিসাবে নয়, পরিব্রাজকদের বিশ্রামঘর হিসাবেও ব্যবহার হত।
মূল স্থলটি ৩০০ ফুট দীর্ঘ আর প্রস্থে ২২৫ ফুট। বাইরের প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। উত্তরের প্রবেশ পথে রয়েছে এক বিশাল দীঘি। মনে করা হয় সেনাদের জলের চাহিদা মেটাতেই এটি তৈরী হয়েছিল।
পাঠান মোঘল যুদ্ধের সময় এটি মুঘলদের হস্তগত হয় এবং তারা এটিকে ছাউনি হিসাবে ব্যবহার করত। আগের শিলালিপি থেকে জানা যায় ভিতরের মসজিদটি ঔরংজেবের রাজত্ব কালে তৈরী হয়েছিল।
দূর্গটি ভালভাবে দেখে বেরিয়ে আসার সময় চোখে পড়ে বিশাল দিঘি। একঝাঁক হাস মিটিং-এ ব্যস্ত। সত্যি এমন একটি দূর্গ আছে আমাদের খুব কাছে যা দেখা হয়নি অনেকেরই যা আবার পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে সেটা অনেকেরই অজানা।