জেলা

হুগলি জেলার খবর


চিন্তন নিউজ:- ১৪ ই জানুয়ারি::-হুগলি জেলা থেকে কৃষক আন্দোলন এর কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হুগলি জেলা কৃষক সভার সদস্য কমরেড সোমনাথ ঘোষ দিল্লি গেছেন , তিনি দেখলেন এক অভূতপূর্ব আন্দোলন এর দৃশ্য যা জানালেন চিন্তন কে— দিল্লিতে সিংঘু বর্ডার, সাঁজাপুর বর্ডার,টিকরি বর্ডার, গাজীপুর ও পালোয়াল সহ ৫ জায়গায় ঘিরে রেখে কৃষক আন্দোলন চলছে। প্রতিদিনই আন্দোলনরত কৃষকদের সংখা বাড়ছে। দিল্লী-রাজস্থান সীমান্তের সাঁজাপুরের কমরেড অমল হালদার কমরেড তুষার ঘোষ কমরেড বিপ্লব মজুমদার কমরেড পরেশ পাল কমরেড ভক্তরাম পানের নেতৃত্বে আমরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। সাথে আছে আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদ কমরেড শক্তিমোহন মালিক, জামালপুরের বর্তমান বিধায়ক কমরেড সমর হাজরাসহ হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনার অন্যান্য কৃষক ক্ষেতমজুর নেতৃত্ব কর্মী এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানান, :- আন্দোলনের রাজস্থান হরিয়ানা পাঞ্জাব রাজ্যের কৃষকরা তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে অংশ নিয়েছেন। কৃষকরাই সমস্ত লড়াই পরিচালনা করছেন। দিল্লী – জয়পুর এন-এইচ ৮ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছে কৃষকরা। রাস্তা জুড়ে শুধু তাঁবু আর তাঁবু। ৩/৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় যেখানে রাতে থাকছে সবাই। সমস্ত মানুষের শীত বস্ত্র কৃষকরা নিজেরা দিয়েছে। গ্রামে গ্রামে চাষীরা বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করছে, লরি বোঝাই করে প্রতিদিন জমা করছে। কোন এলাকা থেকে এক লরি ভাজা বাদাম (৫০ কুইন্টাল)কৃষক সভার ঝান্ডা নিয়ে আন্দোলনস্থলে স্লোগান দিতে দিতে নিয়ে আসছেন। ওখানকার কৃষক ক্ষেতমজুর শ্রমিক নেতৃত্ব সবটা পরিচালনা করছে।

কমরেড ঘোষ আরও জানান এক এটা পরিবার ১ কুইন্টাল থেকে ৭ কুইন্টাল পর্যন্ত দুধ দিয়ে আন্দোলনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, কেউ ১ লরী চাল , কেউ ১ লরি ডাল, তেল, বিট, গাজর সব্জি ময়দা আটা ঘি সমস্ত সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন। কোন সামগ্রী কিনতে হচ্ছে না। যা ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে তাতে ১ মাসের খাবার ইতিমধ্যেই মজুত হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিনই সামগ্রী আসছে। ওদের মুখে শোনা গেছে প্রায় ৬ মাসের খাবার মজুত আছে বিভিন্ন জায়গায়। কম্বল, মোজা, জুতো, টুপিসহ শীত বস্ত্র ব্যবসা করে কৃষক পরিবারের এমন সদস্যরা তুলে দিচ্ছেন। এ এক অভূতপূর্ব আন্দোলন। পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া মায়ের সাথে রুটি বেলছে। ৭০ বছরের বৃদ্ধ সারারাত জেগে চা তৈরি করছে। কাঠ জ্বালিয়ে তাঁবুর পাশে ফাঁকা জায়গায় কাঠ জ্বালিয়ে সারারাত আমাদের দেখভাল করছে। মাদ্রাসার একদল শিক্ষক ১ মাস ধরে চা তৈরী করে দিচ্ছেন। বাবা রেল কর্মচারী কৃষক পরিবারের ছেলে ১ মাস ধরে অবস্থানরত কৃষকদের জামা কাপড় পরিস্কার করে দিচ্ছে। এখানে কোন ধর্ম নেই, জাত নেই, বর্ণ নেই, ভাষা নেই । হিন্দু – মুসলিম- শিখ- ঈসাই একটাই পরিচয় – সবাই কৃষক।
এ এক নতুন ভারত। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না কর্পোরেট দালাল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকরা কতটা সংঘবদ্ধ। বাংলার কৃষকদের সাথে পেয়ে ওরা আরও উৎসাহিত।আমরা ওদের পাশে এসে যোগ দিতে ওরা ভীষণ খুশি। আমরা লাল সেলাম জানিয়ে ওদের সাথে থাকার বার্তা দিচ্ছি। ৩/৪ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়া তাপমাত্রা, ওঁদের উষ্ণতায় আমরা সহ্য করে নিচ্ছি।ওঁদের মুখেই জানতে পারলাম কৃষক রমনীরা ১ মাস ধরে ট্রাক্টর চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আগামী ২৬ শে জানুয়ারি মহিলারা হাজার হাজার ট্রাক্টর চালিয়ে মিছিল করে দিল্লির রাজপথে আসবেন।আন্দোলনে সামিল হবেন। একটাই কথা এই ঐতিহাসিক লড়াই এ কৃষকদের সাথে আমরা জিতবোই। তাঁরা দেখলেন এন এইচ ৮ জয়পুর দিল্লি রোড এ প্রায় ৫ কিলোমিটার জুড়ে শুধু আন্দোলনরত কৃষকদের তাঁবু।

কৃষক আন্দোলন এর জেরে কিছুটা হলেও স্বস্তি হলো কৃষকদের।।জানা যাচ্ছে কৃষক মাণ্ডিতে কৃষকরা ধান বিক্রী করে কুইণ্টালে ১০থেকে ১৫ কিলো বাড়তি ধান দিতে বাধ্য হওয়া হরিপাল ব্লক এলাকার কৃষকদের জন্য কিছুটা সস্তির সুখবর । গতকাল ১৩/০১/২০২১তারিখে কৃষক মাণ্ডি’র সামনে হরিপাল থানা কৃষকসভা’র নেতৃত্বে কৃষক বিক্ষোভে জেরে মাণ্ডি নিয়ন্ত্রণের থ্রি ম্যান কমিটি ১৪/০১/২০২১ তারিখে বি ডি ও’র কার্য্যালয়ে কৃষক নেতৃত্ব’র সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় । মাত্রাতিরিক্ত ধান চাষীদের কাছ থেকে আদায়ের যথাযত ব্যাখ্যা মাণ্ডি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ও রাইস-মিলের প্রতিনিধি দিতে পারেননি । আলোচনায় কৃষক নেতৃত্ব ও কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তুলে ধরা তথ্যে চরম কৃষক-হয়রানি ও ধান-লুটের অভিযোগ উঠে আসে । শেষমেশ বি ডি ও সাহেবের ইতিবাচক হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত হয়, “পার্শ্ববর্ত্তী সিঙ্গুর ব্লকের ন্যায় হরিপাল ব্লকেও একই নিয়ম মেনে কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি মাণ্ডিকে ধান কিনতে হবে । ৫ থেকে ৬কিলো’র বেশী ঝড়তা হিসাবে বাড়তি ধান নেওয়া যাবে না । ধান বিক্রীতে ইচ্ছুক চাষী,নতুনদের ক্ষেত্রে দশ দিনের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন সহ যত শীঘ্র সম্ভব ধান ক্রয়ের তারিখ দিতে হবে । পুরাতনদের ক্ষেত্রেও দ্রুত ধান ক্রয়ের তারিখ দিতে হবে। আবেদনের ক্রম অনুসারে কৃষকদের ধান কিনতে হবে ।”

এদিকে দানবীয় তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে চন্ডীতলা-১ ব্লকের শিয়াখালায়- দক্ষিণ শিয়াখালা গ্রামে কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠনের উদ্যোগে আজ আইনের কপি পোড়ানো হলো। আবার এদিকেমানসপুর দেবানন্দাপুর এলাকায় নবান্ন অভিযানের দেওয়াল লিখন চলছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।