রাজ্য

চার বছরে পাঁচবার ডিজিটাল রেশন কার্ড করতে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করছেন সরকার।


নিউজ ডেস্ক:চিন্তন নিউজ:১৯শে সেপ্টেম্বর:- আবার ফরম পূরণ সামনে আনছে ২টাকা কেজি চাল নিয়ে সরকারের মিথ্যাচারকেই। তীব্র গরমে ফের লাইন দিয়ে নবান্ন’র প্রশাসনিক অপদার্থতার দায় বইতে হচ্ছে গরীব মানুষকে।

২০১৫থেকে শুরু লাইনে দাঁড়ানো। চার বছরে ৫বার। দু’বছর আগে উলুবেড়িয়া ২নং ব্লক অফিসে এমনই এক ফরম্ পূরণের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে খেতমজুর রেকিম মোল্লাকে।

আবার গোটা রাজ্যের মানুষকে রেশনের লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করছে সরকার। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, নির্দেশিকা জারি করে খাদ্য দপ্তরের বিশেষ সচিবকে বলতে হচ্ছে, ফরম্ পূরণের শিবিরে একদল দালাল উপভোক্তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তাদের জন্য প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ লক্ষ জমা পড়া আবেদনের মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত কতজন ২টাকা কেজি চালের ডিজিটাল কার্ড হাতে পাবেন ধন্দ তা নিয়েও। কারণ, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় আগাম নির্দিষ্ট হয়ে আছে রেশন গ্রাহকদের সংখ্যা। তা সেই পথ বন্ধ। এরপর পড়ে থাকছে রাজ্যের নিজস্ব খাদ্য সুরক্ষা যোজনার ডিজিটাল কার্ড। সেই কার্ডে আদৌ কতজনকে ২টাকা কেজি চালের ব্যবস্থা করা যাবে সন্দিহান খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরাও।

ফরম পূরণের জন্য আবার শিবির। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে চলছে রেশনের ফরম পূরণের শিবির। প্রথম পর্যায়ে ১৭ই সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে শিবির। ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের শিবির। চলবে ২৭শে সেপ্টেম্বর।

প্রথম পর্যায়ে জমা পড়া আবেদনের অনুসন্ধান শেষ হবে ২৬ শে সেপ্টেম্বর। ফরমের ডাটা এন্ট্রির কাজ সম্পূর্ণ হবে ২২শে অক্টোবর। ১৫ ই নভেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ডের নয়া আবেদনকারীদের কাছে পৌঁছে যাবে কার্ড। একইভাবে ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদনকারীদের কাছে পৌঁছে যাবে তাঁর প্রাপ্য ডিজিটাল রেশন কার্ড।

এতদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করে আসছিলেন, রাজ্যের ৯ কোটি মানুষের মধ্যে ৭ কোটি মানুষকেই সরকার ২টাকা কেজি চালের ব্যবস্থা করেছে। তাহলে কেন পঞ্চমবার রাজ্যের মানুষকে ২টাকা কেজি চালের জন্য লাইন দিয়ে ফরম পূরণ করতে হচ্ছে? সঙ্গত এই প্রশ্ন উঠছে সবার মনে।

রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বহু মানুষ যে রেশনের ২টাকা কেজি চাল পাওয়ার জন্য ফরম্ ফিল-আপ করছে সরকার তা নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছে। গত মঙ্গলবারই শেষ হয়েছে প্রথম পর্যায়ের রেশন কার্ডের ফরম পূরণের শিবির। গতকালই খাদ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিবের জারি করা এক নির্দেশিকায় ( 3029-FS/O/Sectt./IT-22/2018) বিপুল পরিমাণ ফরম্ জমা পড়া নিয়ে কার্যত উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, খড়গপুর পৌরসভা সহ রাজ্যের বেশ কিছু ব্লক, পৌরসভা ও বরো অফিসে রেশন কার্ডের জন্য গুচ্ছ গুচ্ছ আবেদনপত্র জমা পড়ছে। সেই আবেদন গ্রহণ করাও হচ্ছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আগামী দিনে একসঙ্গে আর গুচ্ছ গুচ্ছ আবেদন নেওয়া যাবে না। রেশন কার্ডের আবেদনকারীর কাছ থেকেই একমাত্র আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে বলে নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

গত ৯ ই সেপ্টেম্বর থেকে গোটা রাজ্য প্রথম পর্যায়ে কী ধরনের আবেদনপত্র জমা পড়েছে? সংখ্যার উল্লেখ না করলেও অতিরিক্ত সচিবের নির্দেশিকাতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কিছু জেলায় এখনও পর্যন্ত বিপুল সংখ্যায় ৩নং, ৪নং, ৫নং ও ৮নং ফরম্ জমা পড়েছে।

৩নং ফরম পূরণ মানে, গোটা পরিবারের রেশন কার্ডের জন্য দরখাস্ত। ৪নং ও ৫নং ফরম পূরণের অর্থ, যথাক্রমে পরিবারে একজন বা একাধিক সদস্যের ২টাকা কেজি চালের ডিজিটাল কার্ডের জন্য নাম অন্তর্ভুক্তি। ৮নং ফরম পূরণ করে আরকেএসওয়াই ২ ডিজিটাল কার্ড থেকে আরকেএসওয়াই ১কার্ড করার দরখাস্ত করেছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। আরকেএসওয়াই ২ডিজিটাল কার্ডের গ্রাহককে ১৩টাকা কেজি দর দিয়ে চাল কিনতে হয়। সেই কার্ড পরিবর্তন করে আরকেএসওয়াই ১কার্ড করতে চাওয়া মানে ২টাকা কেজি চালের গ্রাহক হওয়া। খাদ্য দপ্তর সূত্রের খবর, ৮নং ফরমই সবচেয়ে বেশি জমা পড়ছে। কারণ, রাজ্যের বহু মানুষের কাছে এখন আরকেএসওয়াই ২রেশন কার্ড। ২টাকা কেজি চাল থেকে বঞ্চিত বহু গরিব মানুষ এখন তাই ফের লাইনে দাঁড়িয়ে ২টাকা কেজি চাল পাওয়ার প্রতীক্ষায়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।