অর্থনৈতিক রাজ্য

আবার বন্ধ হয়ে গেলো গোন্দলপাড়া জুটমিল


চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:৬ই জুলাই:–   আজ আবার বন্ধ হয়ে গেলো গোন্দলপাড়া জুটমিল । এই দফায় দীর্ঘ ২৯ মাস বন্ধ থাকার পর গত বছর নভেম্বর মাসে খোলা এই কারখানাটির প্রত্যেকটি গেটে আজ ভোরে ঝুলিয়ে দেয়া হল সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ । বন্ধ হয়ে থাকা ২৯ মাস সময়ের মধ্যে অন্ততপক্ষে ৭ জন শ্রমজীবী মানুষ উপার্জনহীন অবস্থায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন । বিনা চিকিৎসায় এবং অনাহারে মারা যান আরও প্রায় চল্লিশ জনের মতো । শ্রমিকরা কর্মহীন, অবসরপ্রাপ্তরা পেনশন বা গ্র্যাচুইটি সহ কোনরকম অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না । গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক পরিবারগুলির এহেন দুঃসময়ে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর সহ সংলগ্ন এলাকার সংবেদনশীল নাগরিক সমাজ ।

গোন্দলপাড়া জুটমিলের বর্তমান মালিকের মালিকানায় মিলটি আছে ২০০৯ সালের মে মাস থেকে । এই ১২ বছরের সময়কালে এই নিয়ে মোট ৮ বার মিলটি বন্ধ করে দেওয়া হল । বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও কৃচ্ছসাধনের মধ্য দিয়ে গত বছর নভেম্বরে মিলটি খোলার পর থেকেই কারখানা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অযৌক্তিক অভিযোগ তুলে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অহেতুক দোষারোপ করছিলেন । বাস্তবে কিন্তু এই অতিমারির সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারখানার কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন শ্রমিকরা । অন্যদিকে, এই শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম সুরক্ষা এমনকি ভ্যাকসিন প্রদানের বন্দোবস্তও করে উঠতে পারেননি রাজ্য সরকার অথবা মিল কর্তৃপক্ষ কেউই । নিজেদের ছুটি বিসর্জন দিয়ে, এমনকি যখন সকল শ্রমজীবী মানুষ কোনকারণে শিল্প ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তখনও সেই ধর্মঘটে সামিল না হয়ে কারখানার উৎপাদন বজায় রেখেছেন এই গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিকরা । এর প্রতিদানে মালিকপক্ষ তাঁদের উপহার দিলেন কাজ বন্ধের এই নোটিশ । যে সকল শ্রমিক এই সময়কালে অবসর নিয়েছেন তাঁদের কোনরকম গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি দেওয়া হল না এমনকি ইতিপূর্বে যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন বা বিনা চিকিৎসায় কিংবা অনাহারে মারা গেছেন তাঁদের পাওনাগন্ডা মেটানোরও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । মালিকপক্ষের এই কর্মকান্ড এক অর্থে মধ্যযুগীয় অত্যাচারেরই নামান্তর।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।