মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:১৫ই জুলাই:- পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বহুবিধ কর্মসূচির একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ” প্রকৃতিকে জানো” কর্মসূচি । এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবেই উত্তর ২৪ পরগনার পলাশীতে আয়োজিত হয়েছিলো প্রকৃতি পড়ুয়ার আসর। সেই কর্মসূচিকে অনুসরণ করে যা জানা গেলো সেটা এক কথায় অনবদ্য। শ্রী সমর চ্যাটার্জী সহ আয়োজকরা সকলের সামনে এক অজানা পৃথিবীকে উন্মোচিত করলেন- “বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি।” বিশ্ব প্রকৃতির জীব বৈচিত্র সম্পর্কে সচেতন হলেই বোঝা যায় কত অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে এই পৃথিবী গড়ে উঠেছে। কোনো বড় প্রাণী নয়, কীট পতঙ্গের জীবন শৈলী জানলেও অবাক হতে হয়! বাংলার বর্ষাসিক্ত প্রকৃতিতে সন্ধান পাওয়া যায় এমন লক্ষ লক্ষ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অন্দর মহলের খবর।এরকমই এক পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণী হল পিঁপড়ে। বড় কালো পিঁপড়ে বা ব্ল্যাক কার্পেন্টার অ্যান্ট (Fam Formidae) দের প্রায় হাজারেরও বেশি প্রজাতি। নারী, পুরুষ, সৈনিক শ্রমিক মিলেমিশে এদের সুশৃঙ্খল সমাজ সংসার। এরা খুব সঙ্ঘবদ্ধ জীবন জাপন করে। এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির নিজেদের গোষ্ঠীতে এক এক শ্রেণী এক এক রকম কাজ করে, যেমন শ্রমিক পিঁপড়ে খাদ্য সংগ্রহ, রাণীর সেবা করে, সৈনিক নামেই বোঝা যায় এরা তার দলকে বিশেষ করে রাণীকে রক্ষা করে। দলে রাণী পিঁপড়ে আকারে সবথেকে বড়, এরা একসাথে অনেক ডিম পাড়ে। অন্যান্য পতঙ্গের মতোই এদের ও মেটামরফোসিস পদ্ধতিতে ডিম থেকে লার্ভা, লার্ভা থেকে পিউপা এবং অবশেষে পূর্ণাঙ্গ পিঁপড়ে তে রূপান্তরিত হয়। এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির টিকে থাকার মূল কারণ হলো, এদের সুসংগঠিত সঙ্ঘবদ্ধ জীবন প্রণালী। তাই এদের কলোনিকে দলগত স্বত্ত্বা বা সুপার অর্গানিজম (super organism) বলা হয়। সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য দ্রুত স্থান পরিবর্তন, রসদ জোগাড় করায় এরা অত্যন্ত দক্ষ। জৈব বিবর্তনে অস্তিত্বের সংগ্রামে পিঁপড়ে প্রজাতি তাই হারিয়ে যায় নি। প্রকৃতিতে এই বড় কালো পিঁপড়ে হ’ল সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট (Survival of the Fittest)।
প্রকৃতির এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির জীবন শৈলী লক্ষ্য করে কেবল অবাক হতে হয় তাই নয়, জীব জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী প্রাণী অর্থাৎ মানুষ কেও এরা পরোক্ষে অনেক শিক্ষা দেয়। পিপড়েদের সঙ্ঘবদ্ধ সমাজ জীবন বলে “একতায় বল”। তাদের -জোট বাঁধো তৈরি হও- কেউ বলে দেয় না। এদের দলগত স্বত্ত্বা সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষণীয়, বিশেষ করে এই ছোট্ট জীবটির কর্মোদ্যম এবং কর্মকুশলতা, নিজের প্রজাতি কে রক্ষা করার দক্ষতা, যোগ্য তমের ঊধর্তন হওয়ার কৌশল শিক্ষিত মানব সমাজের ও অনুসরণ যোগ্য।
বর্তমানে জীবনেকে আধুনিক থেকে আধুনিক তম করে তোলার নেশায় প্রকৃতি আজ ধ্বংসের মুখে। প্রকৃতিকে এবং প্রকৃতির জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করতে না পারলে মানব সমাজের সমূহ ক্ষতি এই বিশেষ জ্ঞান বা বিজ্ঞান চেতনার একান্ত প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি পাঠের এই শিক্ষা যদি মানুষ নিজেদের সমাজে প্রয়োগ করতে পারে তাহলে পচনশীল মানব সমাজের নিঃসন্দেহে উন্নতি হবে।