কলমের খোঁচা

গৌরী লঙ্কেশ ও ৫ই সেপ্টেম্বর


একটি বিশেষ প্রতিবেদন:মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:৫ই সেপ্টেম্বর:– আজ ৫ই সেপ্টেম্বর জাতীয় জীবনে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত। দেশের সমস্ত শিক্ষক সমাজ কে শ্রদ্ধায় স্মরণ করার দিন। আজ আবার মহিয়ষী মানবতাবাদী বিশ্বজননী মা টেরেসার প্রয়াণ দিবস। এই সবকিছুর বিপরীতে আজ শিক্ষিত ভারতবর্ষের কাছে এক কলঙ্ক জনক দিন। ২০১৭ সালের আজকের দিনেই ব্যাঙ্গালুরুর নিজের বাড়ির সামনেই আততায়ীর গুলিতে নিহত হন এক প্রতিবাদী সক্রিয় মহিলা সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। বামপন্থী মনোভাবাপন্ন এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং “লঙ্কেশ” পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন গৌরী লঙ্কেশ। সমাজকর্মী হিসেবে বহু নকশালকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালান গৌরী, বিশেষ করে সমাজের নগ্নসত্য তুলে ধরার অপরাধে তাকে দক্ষিণপন্থী উগ্র সনাতন বাদীদের হাতে অকালে প্রাণ হারাতে হয়।

সাংবাদিক সমাজকর্মী গৌরী হত্যার একবছর পর যখন প্রকাশ্যে আসে যে, উগ্র দক্ষিণপন্থী পরশুরাম ওয়াসমারের গুলিতেই গৌরী খুন হন তখন দেশবাসী এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ২০১৮ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর কর্ণাটক পুলিশ তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি “সিট” গঠন করে । এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, যে এই একবছর লঙ্কেশ পত্রিকা থমকে থাকলেও তার সহকর্মীরা গৌরী হত্যার প্রথম বার্ষিকীতেই নতুন করে গৌরী র কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর হন। নয়া পথ নামে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ হয়। প্রচ্ছদে গৌরীর ছবি ও তাঁর প্রিয় কথা অভিব্যক্তি মরুহট্টী (বাংলায় অভিব্যক্তি স্বাধীনতার পুনর্জন্ম ) প্রকাশিত হয়। গৌরী অনুগামীদের মতে পত্রিকার নাম বদলালেও বক্তব্য বদল হয়নি।

আশার কথা, কর্নাটকের তদন্ত কমিটি সিট গত শুক্রবার ৩রা সেপ্টেম্বর ব্যাঙ্গালুরুর মুখ্য দায়রা আদালতে দ্বিতীয় দফায় চার্জশিট পেশ করে। সরকারী আইনজীবী এস. বালান বলেন গৌরী হত্যা একটি সংগঠিত অপরাধের ঘটনা। অন্যান্য উগ্রবাদী সংগঠনের সাহায্য নিয়ে সনাতন হিন্দু সংস্থা গোষ্ঠী এই হত্যা ঘটিয়েছে এবং বিগত পাঁচ বছর ধরে তারা এই ধরনের হত্যার সঙ্গে সংযুক্ত। তদন্তকারী মুখ্য আধিকারিক এম. এন. অনুচেত বলেন, তাদের প্রথম চার্জশিটে মূল অভিযুক্ত এবং গ্রেফতার কে. টি. নবীন কুমার যিনি হিন্দু যুব সেনার সদস্য স্পষ্ট স্বীকার করেছেন যে, গৌরীর হিন্দু বিরোধী কার্যকলাপের জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। চার্জশিটে আরও জানানো হয় কর্নাটক ছাড়াও মহারাষ্ট্রের আট জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়, হত্যাকারীদের মোট বারো জনের দু’জন এখনও পলাতক।

গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকান্ড মানুষের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর মতে সত্যবাদীদের পক্ষে এ এক বিপজ্জনক সময়। দাভোলকার, পানসারে, কালবুর্গীর পর গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকান্ড দেশের সমস্ত চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবী মানুষের কাছে চরম হতাশার বিষয়। কর্ণাটক পুলিশ, সীট কমিটি তথা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে লঙ্কেশ হত্যার বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে আগামী ভারত।

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য (unity in diversity) যে দেশের সংস্কৃতির ভীত সে দেশ থেকে যে কোনও প্রকার মৌলবাদ বিনষ্ট হোক। সমস্ত সুচিন্তিত ভারতবাসীর প্রত্যাশা, মহান শিক্ষক- দিবস হত্যা-দিবসের কালিমা মুক্ত হোক।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।