বিনোদন

সিনেমা সমালোচনা – “দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন”


মল্লিকা গাঙ্গুলি, চিন্তন নিউজ, ২৬ মে: সিনেমা প্রিয় বাঙালী এখন মাঝে মাঝেই বেশ কিছু নতুন ধরনের ছবি পাচ্ছে, এরকমই একটি জমজমাট থ্রিলার ছবি “দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন”। নামেই বোঝা যায় বেশ রোমাঞ্চ রহস্য আছে। যার আবহ বাঙালীর আবেগের দুর্গাপুজো আর ফেলে আসা যৌথ পরিবার। পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনয়ে আবীর চট্টোপাধ্যায়, ইশা সাহা, অর্জুন চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, খরাজ মুখোপাধ্যায়ের মত পর্দা মাতানো অভিনেতা।
একটা সময় ছিল যখন দুর্গা পুজো আর নানান পুজো সংখ্যা ছোট বড় সব বয়সী বাঙালীকে এক অদ্ভুত আকর্ষণে বেঁধে রাখত। শিউলির গন্ধ, সোনা রোদ, মাটির প্রতিমা তৈরির মন্ডপের পাশাপাশি ফেলুদা, টেনিদা, ঘনাদার স্কুল ছুটির হাতছানি – তেমনিই আর এক দাদা সোনাদা আর তার দুর্গেশগড় অভিযান।
ভোটের বাজার আর তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া গরমে মানুষের মগজ যখন ঘেঁটে ঘ তখন গুপ্ত ধনের সন্ধানে সফল জুটি ঝিনুক- আবীরকে বেশ লাগে। বিশেষ করে কু রাজনীতির কচকচি থেকে বেরিয়ে পুজোর বেড়ানোতে যদি রহস্য যোগ হয় তখন তো আর কথাই নেই! বাঙালীর সিনেমায় কোনো না কোনো ভাবে দুর্গা পুজো জুড়েই যায়। সাধারন সামাজিক গল্প বাদ দিলেও ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ বা ‘মেঘে ঢাকা তারা’- সত্যজিত রায় বা ঋত্বিক ঘটক ও বাঙালীর আবেগ সেই দুর্গাপুজো কে মুশকিল আসানের চাবিকাঠি হিসেবে নিখুঁত ভাবে ব্যবহার করেছেন।
এবার আসা যাক দূর্গেশগড়ে, দেবরায় পরিবারের আভিজাত্যের বাড়ীর পুজোতে গ্রামে মা দূর্গার আগমন। সেই গ্রাম, সেই যৌথ পরিবার, সেই সম্পত্তি জনিত সমস্যা ঘিরেই রহস্য দানা বাঁধতে থাকে। দেবরায় বংশের মেজছেলে এন আর আই (কৌশিক সেন) যার বিদেশিয়ানায় দেশীয় সব কিছুই খারাপ, পরিবারের সমস্ত নৈতিকতার সঙ্গে তার বিরোধ। অন্যদিকে সেই যৌথ পরিবারকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা বড় ছেলের (চন্দ্র বিন্দুর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়)।
নেপথ্যে ফিরে ফিরে আসে ইতিহাসের পাতা, সিরাজদৌলা, জগৎশেঠ, আর দুশো বছরের সঞ্চিত রত্নভাণ্ডার নিয়ে পারিবারিক বিবাদ! পরিবারের ঘনিষ্ঠ খরাজ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কৌশিক সেনের সংলাপ – “চারপাশের পরিবার যদি ভাঙে, তবে মূর্তির চালচিত্র কিভাবে জোড়া থাকে”- অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই চির চেনা পারিবারিক কোন্দলের মধ্যেই বেজে ওঠে ঢাক, কাঁসি, শঙ্খ উলুধ্বনিতে জমে যায় দেবরায় পরিবারের পুজো, মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। আর খসে খসে পড়তে থাকে এক একজনের মুখোশ! সঙ্গে চলতে থাকে গুপ্তধনের রহস্য ভেদ। এই ছবি আরও ভালো লাগে সেই ছেলেবেলার নস্টালজিক ধাঁধা- পায়ে ধরে সাধা/ রা নাহি দেয় রাধা,বা ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন একটু জিরো, মত সংকেত গুলো। আগের ব্যোমকেশ বা ফেলুদার মতোই সোনাদা হিসাবে (আবীর) বেশ ভালো, সপ্রতিভ সফল অভিনেতা। আর তার সহযোগী যুগল প্রেমিক প্রেমিকার গা ছমছম রহস্যের প্রেক্ষাপটে হালকা প্রেমের ছোঁওয়া বেশ অভিনব, অন্তত রসকষহীন গোয়েন্দা গল্প থেকে একটু হলেও সাম্প্রতিক।
যদিও কিছু খামতি থেকে গেছে, এখানে বাঙালী রহস্য গল্পের পটভূমি চেনা, হালফিল রহস্য সিরিজের অভিনব প্রযুক্তির অভাব, কিছু মুহূর্ত যেমন জলের নীচে গুপ্তধন খোঁজা, গুহার ভিতর পশুর আবির্ভাব এগুলো একটু অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে। আর একটু ভাবলে আরও ভালো হতো।
তবু ছবিটা মন্দ নয়, বিশেষ করে পুজোর কলকাতা আর বেশ কিছু যশস্বী অভিনেতার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে পরিচালক ধ্রুব বন্দোপাধ্যায় যে “দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন” উপহার দিয়েছেন তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া যায়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।