দেশ রাজ্য

গণশক্তির প্রদর্শনী


রঘুনাথ ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ৮ আগষ্ট : শ্রদ্ধেয় মুজফ্ফর আহমেদের (কাকাবাবু) জন্মদিন উপলক্ষ্যে ‘গণশক্তি’ ভবনের পাঁচতলায় শুরু হলো এক অসাধারণ চিত্র ও তথ্য প্রদর্শনী। শতবর্ষ অতিক্রান্ত হওয়ার মুখে ভারতের শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন ও লড়াই জীবন্ত হয়ে উঠেছে ‘গণশক্তি’ আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে। চলবে ১১ই আগষ্ট পর্য্যন্ত। বহু আন্দোলনের ও লড়াইয়ের ইতিহাস প্রাণ পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে।

১৮৬২ সালে হাওড়ায় রেল শ্রমিকদের ঐতিহাসিক ধর্মঘট, ঐ বছরই কেরানী ধর্মঘট, পরের বছর ১৮৬৩তে বোম্বাইতে ক্ষৌরকর্মী ও কলকাতার পাল্কিবাহকদের ধর্মঘট, ঘোড়ার গাড়ির গাড়োয়ানদের ধর্মঘট, বোম্বাই শহরে ছাপাখানা কর্মীদের ও মাদ্রাজে মাংস বিক্রেতাদের ধর্মঘট (১৮৭৩)। তৎকালীন
‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকায় এই আন্দোলনের বিস্তৃত বিবরনী পাওয়া যায়। এই পত্রিকার উদ্যোগ পর্বে পাওয়া যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিকল্পনার
রূপরেখা। ‘প্রথম আলো’ পত্রিকা ১৮৬২তে জানাচ্ছে – হাওড়ার রেল শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের কথা। উল্লেখযোগ্য যে, তখনও বিখ্যাত হে-মার্কেটের ইতিহাস উঠে আসেনি।

১৮৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত রামকুমার বিদ্যারত্নের ‘কুলি কাহিনী’ যা তুলে এনেছিল চা বাগানের শ্রমিকদের নরকের চেয়েও বীভৎস জীবনযাপন। এর প্রকাশকাল আঙ্কল টমস্ কেবিনের ৩৫ বছর পর। ‘ভারত শ্রমজীবী’ পত্রিকার প্রকাশ পায় ১৮৭৪ সালে, যাতে জানা যায় ভারতে শ্রমজীবী আন্দোলনের গোড়ার দিকের কথা।

১৯২৭ সালে মেহনতি মানুষের আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের বাংলা- তর্জমা রচনা রচনা করেন বিদ্রোহী কবি নজরুল ‘গণবাণী’র মে দিবস সংখ্যায় ১৯২৭ সালে। ১৯৪৬ সালে কবি সুকান্ত লিখলেন “লাল আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে।” রাণিগঞ্জে রিফ্র্যাক্টরী এ্যান্ড সেরামিক কোম্পানির শ্রমিকদের কলকাতা অভিযানের (১৯৫৪) শ্রমিকদের দরদী নেতা গোলাম কুদ্দুস ‘একসঙ্গে’ গ্রন্থে লিখেছেন শ্রমিকদের সেই দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার কাহিনী। বইটির প্রকাশক এন বি এ।

এর সঙ্গে আছে বিটি রণদিভে, পি রামমূর্ত্তি, বঙ্কিম মুখার্জি, মনোরঞ্জন রায়, চিত্তব্রত মজুমদার, সুকোমল সেন, কেদারনাথ ভট্টাচার্য, গোপাল ঘোষ প্রমুখ শ্রমিক আন্দোলনের বিশিষ্ট লেখকদের লেখা। আরও আছে অমর দত্ত রচিত ‘আসামের চা-কুলি আন্দোলন ও দ্বারকানাথ’ ও দিলীপ সরকারের লেখা আসানসোল-বার্ণপুরের শ্রমিক সংগঠন ও আন্দোলনের বর্ণনা। দেশে জরুরি অবস্থাকালীন শেষ শ্রমিক পীড়ণের দলিল দেখতে পাওয়া যাবে এই প্রদর্শনীতে।

প্রতিদিন প্রচুর জন সমাগমে সার্থক হয়ে উঠেছে এই মূল্যবান প্রদর্শনী। দর্শকদের অনেকেই দাবি করছেন জেলায় জেলায় এই প্রদর্শনী ভ্রাম্যমাণ হয়ে উঠুক।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।