কলমের খোঁচা

একুশে ফেব্রুয়ারি-


মিতা দত্ত, নিজস্ব প্রতিবেদন- চিন্তন নিউজ:২১শে ফেব্রুয়ারি:–কাল রাতে উঠেছিল ঝড়।
আম – জাম – নিমের শাখায়
কাল রাতে এসেছিল
সত্যকার ঝড়।
একুশের প্রাণ যেখানে ঐতিহ্যও সেখানেই – বিদ্রোহ ।কেবল প্রতিবাদে নয়, প্রতিরোধে নয়, ইতিবাচক বিদ্রোহেই ।জনগণের বিদ্রোহ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে।একুশ শুধু শোকের দিন নয়, উৎসবের দিন নয়, স্মৃতির কিংবা শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দিন। সব কিছুর উর্ধ্বে একুশ একটি বিদ্রোহের দিবস। একুশ ইতিহাস , একুশ ভূগোল ।একুশ আন্তর্জাতিক।

বাহান্ন’র অবস্থাটা স্মরণ করা দরকার। তখন রাষ্ট্র নতুন , দেশ সদ্যস্বাধীন। স্বাধীনতা বিপন্ন চর্তুদিক থেকে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় পূর্ববঙ্গের কিছু মানুষ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সেই পূর্ববঙ্গের মানুষই বিদ্রোহ করে বসল রাষ্ট্র যন্ত্রটার বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠার চারবছর পার হতে না হতেই বাঙালীর চেতনা ভিন্ন পথ ধরল। একুশের বিদ্রোহ গণতান্ত্ৰিক ছিল। সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ উপাদান ছিলো একুশের আন্দোলনে। তাই একুশের আবেদন সার্বজনীন।

কিন্তু বাঙালির ঐতিহ্যের যেমন আলো আছে, তেমন অন্ধকার আছে।একটি ঐতিহ্য যেমন বিদ্রোহের অন্যটি আত্মসমর্পণের,বশ্যতার , কাপুরুষতার ।এই অন্ধকার ঐতিহ্যের শিকার হচ্ছি আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে।

আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না – এটি শুধু আর কবিতার লাইন নয়। বাবা মায়ের আলাপচারিতায় কান পাতলে হাসতে হাসতে বলে , সবই পারে শুধু বাংলাটা পারে না। বাংলাটা নাকি দূর্বোধ্য বিষয়। আমাদের “মা” আমাদের উত্তরসূরিদের কাছে আমরা কঠিন করে তুলছি। ফলে একটি বিকৃত সংস্কৃতির জন্ম নিচ্ছে। বিদ্যাসাগর , রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত নজরুলের ভাষা – প্রজন্মের কাছে দূর্বোধ্য হয়ে উঠছে। ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে যার ফল মারাত্মক প্রভাব পড়বে সংস্কৃতিতে ।

এছাড়া রয়েছে রাষ্ট্রীয় ভাষার নাম দিয়ে হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র। অথচ ভারতবর্ষ বহু ভাষাভাষীর দেশ। সেকথা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাই আক্রমণ চারিদিকের। এই আক্রমণকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। শুধু একদিনের একুশে পালন নয় – প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে জীবনচর্যার আমাদের মাতৃ ভাষার দ্বারা আলোকিত হতে হবে ও নবীনদের আলোকিত করতে হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।