কলমের খোঁচা

ই,এম,এস নাম্বুদ্রিপাদ ও বর্তমান ভারতবর্ষ ।


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:১৩ই জুন:- পৃথিবীর প্রথম মুক্ত দেশ সোভিয়েত রাশিয়ার বিপ্লবের তাপ ছড়িয়ে পড়লো সারাবিশ্বে। এই বিপ্লব ঘটে যাওয়া অন্য সমস্ত বিপ্লব থেকে ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে লেনিনের নেতৃত্বে শ্রমজীবী মানুষ সমস্ত শোষণের বন্ধন থেকে মুক্ত হলো।। প্রতিকূল অবস্থায় জনগণ সবটুকু দিয়ে তাদের সরকার গড়ল। বাইরের হাজারো আক্রমণ তাদের টলাতে পারেনি বরং আরো শক্ত হয়েছে।তাদের এই অনমনীয় মনোভাব বিশ্বের মুক্তিকামী মানুযের মননকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো।।

১৯২০ সালে তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হলো। প্রথমদিকে পথচলা ধীর লয়ে হলেও ক্রমশ গতি পেল। ভারতবর্ষেের বিভিন্ন কোণে কোণে গড়ে উঠল কমিউনিস্ট দল। কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে নিবেদিত বিভিন্ন ব্যক্তিত্বদের নেতৃত্বে গড়ে উঠল সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু প্রথম থেকেই তার ছিল অভিসার যাত্রা। কারণ লড়াই শুধু ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে নয়,লড়াই যাবতীয় শোষণের বিরুদ্ধে। একদিকে সাম্রাজ্যবাদ অন্যদিকে সামন্তবাদ। সামন্তবাদের যাবতীয় কুফল সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মানুষের মধ্যে রয়েছে আজন্মলালিত কুসংস্কার যা সমাজে এগোনোর পথে বাধা। এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে কমিউনিস্ট পার্টি আরো শক্তিশালী হয়।

নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ভারতবর্ষে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। নেহেরুর নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন। কমিউনিস্ট পার্টি এই ক্ষমতা হস্তান্তর মেনে নিতে পারে নি। কিন্তু কিছু করার ছিলো না ।ইতিমধ্যে শ্রমজীবী শ্রেণীর মধ্যে পার্টি কাজ করে তাদের রাজনৈতিক চেতনায় শান দিয়েছে।এই প্রেক্ষাপটে উঠে আসে অন্যতম ব্যক্তি ই,এম এস নাম্বুদ্রিপাদ।

১৯০৯ সালে আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কেরালায় এক রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে। কিন্তু তিনি ব্যতিক্রমী ব্যক্তি ছিলেন। তাই পরিবারের ছাপ তাঁর ওপর ছিলো না। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি। পরিণামে কারাবাস। এই কারাবাস তাঁকে আরো দৃঢ়চেতা করেছে। কারামুক্ত হয়ে বিপুল বিক্রমে তিনে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন ।ব্রিটিশ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারী করে তাঁর বিপ্লবী মনোবল ভাঙতে পারেনি।

এইরকম একজন ব্যক্তি কমিউনিস্ট আন্দোলনের পতাকা তলে আসবে এটাই স্বাভাবিক। ১৯৩৭ সালে কালিকটে এক মিটিং এ পাঁচজন কমিউনিস্ট মিলে কেরালায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম গ্রুপ গড়ে তোলেন। যার মধ্যে ইনি অন্যতম। ১৯৪১ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সি,পি,আই এর সদস্য হন।

ইতিমধ্যে সি,পি,আই এর একাংশের মধ্যে দক্ষিণপন্থী ভাবনার প্রকাশ হওয়ায় নবরত্ন সি,পি,আই এম প্রতিষ্ঠা করেন । ইনি এই নবরত্নের একজন। ঘরে, বাইরে লড়াই চলতে থাকে। কিন্তু পার্টি শ্রমজীবী জনগণের মুখপাত্র হওয়ায় পার্টির জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে। এই জনপ্রিয়তার কারণে কেরালার ১৯৫৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে প্রথম অকংগ্রেসী কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সিপিআই(এম)এর নেতৃত্বে বাম সরকার। ভারতবর্ষ দেখলো অন্যরকম শাসন ব্যবস্থা যেখানে গুরুত্ব পায় শ্রমজীবি মানুষ। শীঘ্রই কমিউনিস্ট পার্টির প্রসার ঘটতে থাকলো।

তিনি ছিলেন প্রতিভাবান মার্কসবাদী তাত্ত্বিক। মার্কসবাদের তত্ত্ব ও প্রয়োগে সমীকরণে অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সমাজ পরিবর্তনে লেখনী ধারনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তাই তার শাণিত লেখনীরূপ তরবারিতে বিদ্ধ হয়েছে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্ততন্ত্র ,জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা,বর্ণবিদ্বেষ।প্রত্যেকটি লেখনী মার্ক্সীয় বিশ্লেষণে মূর্ত ।

বর্তমান ভারতবর্ষেও তিনি প্রাসঙ্গিক। তাঁর লড়াইয়ের ক্ষেত্র গুলো সবই উপস্থিত। যুক্ত হয়েছে বিশ্বায়ন ও উগ্রজাতীয়তাবাদ। তাই আমাদের বেশী বেশী করে তাঁকে জানতে হবে। তাঁর চেতনায় নিজেদের ঋদ্ধ করতে হবে। তাঁর জন্মদিনে শপথ নিতে হবে তাঁর চেতনায় লালিত হয়ে তাঁর দেখানো পথে সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে হবে ও তাঁকে রূপ দেবার কাজে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।