কলমের খোঁচা বিদেশ

সুয়েজ খালের ১৫০ বছর_


সূপর্ণা রায়:চিন্তন নিউজ:৪ঠা নভেম্বর:–খাল কেটে কেউ কুমির এনেছিলেন কি না ,তা হলফ করে বলা যায় না, তবে খাল কেটে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার প্রমাণ সুয়েজ খাল।। আধুনিক নৌপরিবহন ইতিহাস এর এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি মিশরের সুয়েজ খাল।১৫০ বছর ধরে অনেক ঘটনার সাক্ষী এই সুয়েজ খাল। অনেক সংঘাতের সাক্ষী এই জলপথ।।

লোহিত সাগর এর সঙ্গে ভুমধ্যসাগরের সংযোগ স্থাপন এর লক্ষ নিয়ে ১৮৫৯ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে খালটি খনন করা হয়। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে সুয়েজ খাল খনন প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কৃতিত্ব দেওয়া হয় ফরাসি কূটনৈতিক ফার্দিনান্দ দে লেসেপস কে।।১৮৬৪ সালে দেওয়া এক বক্তৃতায় যিনি বলেছেন , খালটির উপর কোনো জাতির বিশেষ অধিকার থাকবে না।। এই খাল যখন ছিল না তখন অনেক ঘুরপথে আরব সাগর পার হয়ে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে যেতে হতো। এই যাত্রা বেশ সময় সাপেক্ষ ও বিপজ্জনক ছিল।। আফ্রিকা মহাদেশ পাড়ি দেওয়ার সময় প্রায়শই ঝড়ের কবলে পড়ে অনেক প্রাণহানি ও জাহাজডুবির ঘটনা ঘটত।।এই সমস্যার সমাধান করতে ১৮৫৪ সালে মিশরে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ফার্দিনান্দ দে লেসেপস(১৮০৫১৮৯৪) মিশরের অটোমান গভর্নর এর সঙ্গে বৈঠক করেন।। রাজি করান সুয়েজ অঞ্চল এ ভুমধ্যসাগর ও লোহিত সাগর যুক্ত করে ১০০ মাইল দীর্ঘ একটি খাল খনন এর জন্য।। মিশরের গভর্নর এর সন্মতিতে ১৮৫৬ সালে গঠিত হয় সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানি।।দক্ষ ইন্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সুয়েজ খালের নকশার কাজ।।এক দশক ধরে খালটি খননের কাজে নিয়োজিত ছিল ১০ লাখ মিশরীয়।। নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন করা হতো উট বা খচ্চরের পিঠে চাপিয়ে।। এই খাল নির্মাণ করার কাজের সময় বহু শ্রমিকদের প্রাণহানি ঘটেছে।।খাল খননের কাজ শেষ হ ওয়ার কথা ছিল ১৮৬৫ সালে।। কিন্তু কলেরা ও শ্রমিক অসন্তোষ এর ফলে চার বছর বেশী সময় লাগে।।।

অবশেষে ১৮৬৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর যাত্রা শুরু করে ১৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সুয়েজ খাল।। তখন খাল টির গভীরতা ছিল মাত্র ২৫ ফুট।। প্রস্থে ছিল স্থানভেদে ২০০থেকে ৩০০ ফুট।।পরে জাহাজ চলাচল বাড়লে খালটির আকার ও বাড়ে।। এই জলপথ একসময় হয়ে উঠেছে আরব দুনিয়ার অশান্ত ও অস্থিরতা র কেন্দ্র।।১৯৫৬ সালের জুলাই মাসে সেই চরম মুহুর্ত উপস্থিত হয়।। মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের আরব বিশ্বের একতার রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হন।। তিনি ব্রিটিশ ও ফরাসি স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানি কে জাতীয়করণ করেন।।। এই সিদ্ধান্ত এর ফলে নিজের দেশে নাসের এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংকট বেড়ে যায়।।এর তিন মাস পর সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রন কারী দুই দেশ ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পাশাপাশি ইজরায়েল মিশর এ হামলা চালায়।।১৯৬৭ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত এই সুয়েজ খাল রণক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।। এখনও আরব বিশ্বের অস্থিরতা পিছু ছাড়েনি।।এখন এই খালে ঢেউ তোলে মার্কিন রনতরীও।।_


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।