বিদেশ

ভেনেজুয়েলার পাশে রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:১৯শে অক্টোবর:–ভেনেজুয়েলা দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর উপকূলে অবস্থিত একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ২০১০ সালের পর থেকেই মূলত পেট্রোলিয়াম নির্ভর এই দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে দেশের বিশিষ্ট রাষ্ট্রপতি হুগো চ্যাভেজের মৃত্যু হলে নিকোলাস মাদুরো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু গত ১০ই জানুয়ারি ২০১৯ সে দেশের সংবিধান অনুযায়ী মাদুরোর কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর অতিক্রম করলে নতুন রাষ্ট্রপতি পদ নিয়েও চরম সংকট দেখা দেয়।

একদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সমস্যা , তার উপর দেশের অর্থনীতি ও তলানিতে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র্য ক্ষুধা, অস্বাস্থ্য, মৃত্যু,অপরাধ প্রবণতা, এবং অনুপ্রবেশ সমস্যায় জর্জরিত ভেনেজুয়েলার সরকার তথা শাসক দল- ইউনাইটেড সোসালিস্ট পার্টি অব ভেনেজুয়েলা (USPV) নানা ভাবে বারবার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেও মার্কিন মদতপুষ্ট বিরোধী দল সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করে দিতে বিরোধীরা নানা প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করছে, আর তাতে আমারিকার সঙ্গে মদত দিচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র কলম্বিয়া।

ভেনেজুয়েলার সোস্যালিস্ট পার্টির শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণী যৌথভাবে দেশের ভিতরে দেশের উন্নয়নের গতি ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ লড়াই করেও বার বার সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে প্রতিহত হ’লে সমাজতান্ত্রিক দল আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে সমস্ত সমাজতান্ত্রিক পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ ভাবে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করে। এই উদ্দেশ্যে ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক ও সরকারী প্রতিনিধিদের একটি দল সমস্ত সমাজতান্ত্রিক দেশ পরিক্রমা করে বিশ্ব সমাজ তান্ত্রিক জোট গঠনের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গতকাল ১৮ই অক্টোবর মস্কোতে উপস্থিত হয়। তাঁরা মস্কো সভায় রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা করেন।

রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক গেনেদি জুগানভ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেন তারা সর্বতোভাবে ভেনেজুয়েলা সমাজতান্ত্রিক সরকারের পাশে আছে। তিনি বলেন- ভেনেজুয়েলার সরকার মানুষের পাশে থেকে মানুষের অর্জিত অধিকার রক্ষার জন্য যে ভাবে কাজ করছে রাশিয়া তাদের সমর্থনে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ভেনেজুয়েলার প্রতিনিধি দল কেবলমাত্র রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেই নয়, তারা রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে সরাকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গেও একপ্রস্থ আলোচনা করেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভেনেজুয়েলায় চরম মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি পুতিনের সাহায্যে এখনও দেশে অনেকগুলি প্রকল্প চালাতে সক্ষম আছে।

রাজনৈতিক মহলের মতে সারা বিশ্বজুড়ে চরম মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ভেনেজুয়েলার এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিশ্ব জুড়ে বামপন্থী ঐক্য মজবুত হলেই ভেনেজুয়েলার মতো বিশ্বের অনন্য রাষ্ট্রে সমাজতন্ত্র সুদৃঢ় হবে! বিশ্ব রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে সমাজতন্ত্র ই একমাত্র পন্থা- এই সত্য মানুষ আবার অনুভব করছে! শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষার তাগিদে দেশে বিদেশে উগ্র দক্ষিণ পন্থার বিরুদ্ধে বামপন্থার প্রসার ঘটাতে পারলেই ভেনেজুয়েলার মতো সব দেশেই মার্কিন মদতপুষ্ট পুঁজিবাদী শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে সমাজতন্ত্রের জয় নিশ্চিত হবে বলে আশা করছে আন্তর্জাতিক দুনিয়া।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।